২৫ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ১২:২৮, ৮ মে ২০২১

আপডেট: ১২:৫৬, ৮ মে ২০২১

শখের অনলাইন ব্যবসা দিয়েছে স্বাধীনতার স্বাদ

শখের অনলাইন ব্যবসা দিয়েছে স্বাধীনতার স্বাদ

সৌরভ হোসেন সিয়াম (প্রেস নারায়ণগঞ্জ): রাধতে ভালোবাসেন কারিশমা খুরশীদ (৩৩)। শখ করে বিভিন্ন পদের খাবার তৈরি করে খাওয়ান পরিবারের লোকজন ও আত্মীয়দের। কিশোরী কন্যার উৎসাহে বছরখানেক পূর্বে অনলাইনে শুরু করেন নিজের খাবারের ব্যবসা। কারিশমা বলেন, শখ থেকে শুরু করা এই ব্যবসাই স্বাধীনতার দ্বার খুলে দিয়েছে তার। নিজেকে উদ্যোক্তা পরিচয় দিতে অন্যরকম অনুভূতি হয়।

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম’ই কারিশমা খুরশীদের ব্যবসার একমাত্র মাধ্যম। ২০২০ সালের মে মাসে মাধ্যমিকের ছাত্রী কারিমা বিনতে কাইফা তার মাকে ‘অনলাইন ফুড বিজনেস’ শুরু করার পরামর্শ দেন। প্রথমে কন্যার এই পরামর্শ আমলে নেননি কারিশমা। এদিকে নাছোরবান্দা কারিমা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘কারিশমা’স কার্ভিং এন্ড কুকিং’ নামে একটি পেজ খুলে ফেলেন। একদিকে ‘নিজে কিছু করার’ উদ্দীপনা অন্যদিকে ‘মানুষ কী ভাববে’ এ নিয়ে দোটানায় ছিলেন কারিশমা। তবে পরিবারের অন্যদের সমর্থনে জুন থেকে মেয়ের উৎসাহে ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে ফেসবুক পেজের পাশাপাশি একই নামে একটি গ্রুপও রয়েছে তার। এরই মধ্যে উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্পের (ইএসডিপি) মাসব্যাপী একটি কর্মশালাতেও অংশ নিয়েছেন। শিখেছেন উদ্যোক্তা হিসেবে দৌড়ে টিকে থাকার গৎ বাঁধা কিছু নিয়মকানুন। যুক্ত হয়েছেন অনলাইনভিত্তিক নারী উদ্যোক্তাদের আরও কয়েকটি গ্রুপের সাথে। বেড়েছে চেনাজানাও।

নারায়ণগঞ্জ শহরের আমলাপাড়া চৌরাস্তা এলাকায় থাকেন কারিশমা খুরশীদ। উচ্চ মাধ্যমিক পাস এই নারীর কিশোরী দুই কন্যা রয়েছে। গৃহস্থালি কাজের বাইরে অন্য কোনো চিন্তা না করা এই নারী এখন ভাবেন কীভাবে ব্যবসা বাড়ানো যায়। গত বৃহস্পতিবার (৬ মে) কথা হয় তার সাথে। ব্যবসার শুরুর দিকে কথা বলতে গিয়ে কারিশমা বলেন, ‘মেয়ে ও ভাগনি খুবই উদ্বুদ্ধ করেছে। পরিবারেরও সমর্থন ছিল। শুরুতে শহরের মধ্যে আত্মীয়-স্বজন ও চেনাজানা বন্ধুদের অর্ডার পেতাম।’ এখন শহরের বাইরে ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ, বন্দরসহ বিভিন্ন থানা এলাকা থেকে অর্ডার আসে। রাইডারের মাধ্যমে গ্রাহকের কাছে অর্ডার পৌঁছে দেন। লকডাউনের মধ্যে অনেকে মুশকিলে পড়লেও অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা হওয়াতে সুবিধাই হয়েছে তার। তাছাড়া ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন দ্বার খুলে দিয়েছে বলেও মন্তব্য কারিশমার।

ফ্রোজেন ফুড অর্থ্যাৎ হিমায়িত খাদ্য বিক্রি করেন তিনি। বর্তমানে হিমায়িত খাদ্যের চাহিদাও রয়েছে অনেক। তার খাবারের পদের অধিকাংশই মুরগির। চিকেন চিজ বল, নাগেট, কাবাব, চপ, চিকেন ডোনাট, চিকেন পুলি, পুডিং, মেওনিজ, ফালুদা, পুডিংসহ বিভিন্ন পদের হিমায়িত খাবার অনলাইনে বিক্রি করেন। এর মধ্যে ফালুদা পুডিং কারিশমার বিশেষ আইটেম। এর চাহিদাও রয়েছে বেশ। এছাড়া ঈদকে কেন্দ্র করে হাতের তৈরি সেমাইও বিক্রি করছেন। খাবারে সাধারণ মসলা ছাড়া কোনো প্রকার রাসায়নিক ব্যবহার করেন না বলে জানান। খাবার তৈরিতে মা, বোন ও মেয়েরা সহযোগিতা করেন।

তিনি বলেন, ‘দু’টো বাচ্চা বড় হয়ে গেছে। সবসময়ই বাসায় থাকা হয়। তাছাড়া পরিবারের লোকজনকে নতুন নতুন আইটেম রেধে খাওয়ানো শখ ছিল। কার্ভিংয়ের বিষয়টা আমাকে সবসময় টানতো। বর্তমানে ফুড কার্ভিং আর ভেজিটেবল কার্ভিং অনেক প্রচলিত। আমার ব্যবসা শুরুর পেছনে বড় মেয়ের অনেক অবদান। তার মা কিছু করবে এই ভাবনাটা কাজ করে তার। তবে আমার লোকে কী বলবে এ নিয়ে ভাবনা ছিল।’

কারিশমা বলেন, নারায়ণগঞ্জে অনলাইন বেজ নারী উদ্যোক্তা অনেক বেড়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে এই তালিকায় আরও অনেকে যুক্ত হয়েছেন। নারীদের যেহেতু ঘরে থাকার একটা নিয়ম চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। সেই জায়গা থেকে কিছু করে দেখানোর একটা জায়গা হচ্ছে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম। তবে কিছু অনিশ্চয়তা এখানেও আছে। অনেক সময় অর্ডার দেরিতে আসে। কিছু বিব্রতকর পরিস্থিতিরও সম্মুখীন হতে হয়। তবে তা সামাল দিতে শিখে গেছেন তিনি।

প্রথম আড়াইশ’ টাকার অর্ডার পেয়েছিলেন বলে জানালেন কারিশমা। এখন দৈনিক হাজারের উপরেও অর্ডার আসে। ব্যবসা কতটুকু দাঁড়ালো কিংবা ভবিষ্যত নিয়ে তেমন চিন্তিত নন এই নারী। তিনি বলেন, ‘অনলাইন বিজনেস আমাকে স্বাধীনতার স্বাদ পেতে সাহায্য করেছে। আমি যে নিজে কিছু করতে পারবো এই ব্যাপারটা আমি নিজেও জানতাম না। ব্যবসায়ীক কারণে নানানজনের সাথে পরিচয় হচ্ছে। নিজেকেও নতুন করে জানছি। এখন কেবল নারী নয়, স্বাধীন একটা মানুষ মনে হয়।’

একজন নারী উদ্যোক্তাই কেবল নন, কারিশমা নারীদের সাইক্লিং গ্রুপ ‘নভেরা’রও সদস্য। সমাজের শৃঙ্খল ভেঙে বৃষ্টির রাতে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন রাস্তায়। সে ছবি তুলে শেয়ার করেন নিজের ফেসবুক একাউন্টে। গত ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবসে কারিশমা খুরশীদ তার ব্যবসায়ীক পেজটিতে একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন। সূর্যের সামনে দুই হাত ছড়িয়ে দিয়ে এক নারী অবয়বের প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নেওয়ার ভঙ্গিতে ওই ছবির ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘নারী, তুমি জানো তুমি পারবে...’

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়