২০ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ২১:১৩, ১৬ মে ২০২২

আপডেট: ২১:১৩, ১৬ মে ২০২২

সদরে কীসের অপেক্ষা

সদরে কীসের অপেক্ষা

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: নানান জটিলতার কারণে নারায়ণগঞ্জের একাধিক উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে প্রক্রিয়া বন্ধ ছিল। ফলে জনপ্রতিনিধিরা দুই দশক পূর্বেও নির্বাচিত হয়ে অতিরিক্ত ক্ষমতাভোগ করছিলেন। নির্বাচন সম্পন্ন করে এবং প্রশাসক বসিয়ে সেসবের সমাধান হলেও নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের ক্ষেত্রে ঘটছে ব্যতিক্রম। এই উপজেলায় সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০০৯ সালে। সেবার নির্বাচিত হন জেলা বিএনপির সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ। বর্তমানে তিনি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। ৫ বছর পর তার চেয়ারম্যানের মেয়াদ শেষ হলেও মামলা জটিলতার কারণে দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় তিনি চেয়ারম্যানের চেয়ারে অসীন।

জানা যায়, ৩০ বছর পর সম্প্রতি ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মামলা জটিলতার কারণে এই ইউপিতে দীর্ঘদিন নির্বাচন বন্ধ ছিল। তবে সম্প্রতি সেসব জটিলতার অবসান ঘটিয়ে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সোনারগাঁয়ের মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন নিয়েও জটিলতা ছিল। সেই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যদিকে জটিলাত রয়েছে সোনারগাঁ পৌরসভা নির্বাচন নিয়েও। এই পৌরসভায় সহসাই অনুষ্ঠিত না হলেও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় পৌরসভার প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও)। জেলা পরিষদেরও নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়ায় সেখানে প্রশাসকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনকে। তবে এখন পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে বিএনপি নেতা আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর সীমানা নিয়ে মামলা জটিলতা থাকার কারণে আর নির্বাচন হয়নি। যারা মামলা করেছিলেন তাদের কেউ বেঁচে নেই। অভিযোগ রয়েছে, আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস নিজেই ক্ষমতায় থাকার জন্য মামলা করিয়েছিলেন। এ নিয়ে একাধিকবার চিঠি চালাচালি হলেও প্রশাসনিকভাবে কোন সুরাহা হয়নি।

এদিকে সদর উপজেলার একটি বড় অংশ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন। এই আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা একেএম শামীম ওসমান। সদর উপজেলার ফতুল্লা, এনায়েতনগর, কাশীপুর, বক্তাবলী, কুতুবপুর ও আলীরটেক ইউপির চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের সকলেই শামীম ওসমানের আশীর্বাদপুষ্ট। তবে তারই নির্বাচনী এলাকা হলেও সদর উপজেলা পরিষদে নির্বাচন ছাড়াই দীর্ঘদিন চেয়ারম্যানের চেয়ারে রয়েছেন বিএনপি নেতা। এ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ রয়েছে। কেননা তাদের অনেকেই সদর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হবেন বলে কয়েকবছর যাবৎ আশা রেখেছেন।

তবে স্থানীয় সূত্র বলছে, আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও স্থানীয় সাংসদ শামীম ওসমানের সাথে তিনি সবসময় সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেন। শামীম ওসমানের আশীর্বাদ সবসময়ই আজাদ বিশ্বাসের উপর রয়েছে। শামীম ওসমানের বিভিন্ন রাজনৈতিক সভা-সমাবেশেও আজাদ বিশ্বাসকে দেখা যায়।

যদিও গত ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ফতুল্লার ইসদাইরের বাংলাভবন কমিউনিটি সেন্টারে ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে আলোচনা সভায় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাচন প্রসঙ্গে কথা বলেন। ওইদিন তিনি বলেছিলেন, ‘সংসদ শেষ করেই উপজেলা নিয়ে কাজ করবো। এখানে চেয়ারম্যানরা আছে, সবাইকে নিয়ে বসবো। সদর উপজেলা নির্বাচন হবে। সেখানে আওয়ামী লীগের একজন ক্যান্ডিডেট হবে। সেটা আমিই ঠিক করে দিব। কাজ করতে আসছি। যাকে যে জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করতে হয় সে জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করে যাব। কখন হবে সেটা সময়েই বলে দিবে।’ তবে এখন পর্যন্ত সদর উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। এ নিয়ে অনেকের প্রশ্ন জেগেছে, জেলা পরিষদ, সোনারগাঁ পৌরসভা, ফতুল্লা ও মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের বিষয়ে সমাধান হলেও সদর উপজেলার নির্বাচন বা সেখানে প্রশাসক বসানোর বিষয়ে কীসের অপেক্ষা?

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়