২৪ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ২১:৫৩, ১৯ অক্টোবর ২০২১

আপডেট: ১৭:৩২, ২০ অক্টোবর ২০২১

সম্প্রীতির শহরে বারবার টার্গেট মেয়র আইভী

সম্প্রীতির শহরে বারবার টার্গেট মেয়র আইভী

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শহর নারায়ণগঞ্জ। এই শহরে যেমন মসজিদের আজান শোনা যায়, তেমনি উলুধ্বনিতেও মুখরিত হয় চারদিক। এখানে জাকজমকপূর্ণ দুর্গোৎসব যেমন হয় তেমনি অনুষ্ঠিত হয় বৃহৎ ঈদ জামাতও। এই জেলার বন্দরে লাঙ্গলবন্দে আয়োজন করা হয় বৃহত্তর স্নানোৎসব। দেশ ও দেশের বাইরে থেকে বহু মানুষ আসে এই উৎসবে। সোনারগাঁয়ের বারদীতে রয়েছে লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রম। শহরে মসজিদের পাশাপাশি রয়েছ অগণিত মন্দির, আছে গীর্জা। মাসদাইরে একই স্থানে সৎকার করা হয় সকল ধর্মের মানুষকে। দীর্ঘদিন ধরে উৎসবের পাশাপাশি সকল বিপদে-আপদে এই শহরের সকল ধর্মের মানুষ একসাথে আছে। এসব কারণে সারাদেশে নারায়ণগঞ্জ সম্প্রীতির শহর হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এই সম্প্রীতির শহরে এখন চলছে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়ানোর অপকৌশল। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে টার্গেট করে চলছে এই সাম্প্রদায়িক বিষের চাষ।

এদিকে মেয়র সমর্থক ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলছেন, মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী সকল ধর্মের প্রতিই সহানুভূতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি রেখেই বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন। তিনি নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে মসজিদ যেমন নির্মাণ করেছেন তেমনি মন্দির, গীর্জাতেও উন্নয়ন কাজ করেছেন। সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা যায়, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের দেওভোগ পাক্কা রোড এলাকায় মহান আল্লাহর ৯৯ নামখচিত মিনার স্থাপন করেছেন মেয়র আইভী। এছাড়া ১২ নম্বর ওয়ার্ডে সিটি কর্পোরেশনের অর্থায়নে মাওলা আলী (রা.) সিটি জামে মসজিদ, ২৩ নম্বরে পাক পাঞ্জাতন (রা.) সিটি জামে মসজিদ, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে খাতুনে জান্নাত সাইয়্যেদাহ্ ফাতেমা (রা.) সিটি জামে মসজিদ, ২৩ নম্বরে হাজী জালাল উদ্দিন জামে মসজিদ, ১২ নম্বরে বাগে জান্নাত সিটি জামে মসজিদ, ১৭ নম্বরে সাইয়্যেদুনা ইমাম হাসান-ইমাম হোসাইন (রা.) সিটি জামে মসজিদের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে আহলে বায়াত সিটি জামে মসজিদ, ২৪ নম্বরে কাইতাখালি ঈদগাহ্, ৯ নম্বরে জালকুড়ি কেন্দ্রীয় ঈদগাহ্, ২ নম্বরে মিজমিজি দক্ষিণ ও পশ্চিমপাড়া কবরস্থানের উন্নয়ন, ৭ নম্বরে আদমজী নগর কবরস্থানের সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প, কেন্দ্রীয় সিটি কবরস্থান জামে মসজিদের বাউন্ডারি, মসজিদ পাঠাগার, ২৪ নম্বরে নবীগঞ্জ কবরস্থানের উন্নয়ন, পাইকপাড়া ছোট কবরস্থান উন্নয়ন প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে। একই সাথে কেন্দ্রীয় সিটি শ্মশানের বাউন্ডারি ওয়াল ও গেইট নির্মাণ, ঘাটলা নির্মাণ ও সৌন্দর্যবর্ধন, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে সাধুর ঘাট নির্মাণ, অন্নপূর্ণা ভবন নির্মাণ, ১২ নম্বরে রামকৃষ্ণ মিশনের গেইট (নির্মাণাধীন), ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের সৌন্দর্যবর্ধন ও ঘাটলা নির্মাণ করে দিয়েছেন মেয়র আইভী। চলমান রয়েছে দেওভোগে সাধু নাগ মহাশয় কমপ্লেক্স প্রকল্প। দুর্গাপূজাতে প্রতিটি পূজামন্ডপে অনুদানও প্রদান করেছেন তিনি। প্রতিবছরই এই অনুদান দেওয়া হয়।

এতকিছুর পরেও যেকোনো ইস্যুতেই আইভীর বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে বিষোদগার করা হয়। সেটা হোক আওয়ামী লীগের ব্যানারে কর্মীসভা কিংবা সম্প্রীতি সমাবেশ। এমনকি পূজামন্ডপগুলোতেও আইভীর নামে অপপ্রচার চালিয়ে ব্যানার সাঁটানোর মতো গর্হিত কাজ সম্পন্ন করে কুচক্রী একটি মহল। কখনো মেয়র আইভীর নির্বাচনী প্রচারণার ছবি দিয়ে পোস্টার বানিয়ে, কখনো মেয়র আইভীর দেবোত্তর সম্পত্তি কিংবা মসজিদের জমি দখলের কল্পিত গল্প কাহিনী ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক উসকানি দেয়ার চেষ্টা চলছে। শ্মশানের মাটি কবরে দেওয়ার প্রচারণা চালিয়েও এক ধরনের উত্তেজনা তৈরি করা হয়েছে।

এর আগে সিটি মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর ছবি সম্বলিত একটি পোস্টার শহরের বিভিন্ন দেওয়াল ও বৈদ্যুতিক খুটিতে সাঁটিয়ে উসকানি ছড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ওই পোস্টারে লেখা হয়েছে ‘একদিকে রাজনৈতিক স্বার্থে সিঁদুর পরে দেবতাকে প্রণাম, অন্যদিকে দেবোত্তর সম্পত্তি দখলের ষড়যন্ত্র’। যদিও ওইদিন মেয়র সিঁদুর পড়েননি। এমনকি পোস্টারে সাঁটানো ছবিতেও কোনো সিদুঁর দেখা যায়নি।

মেয়র আইভী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে দেবোত্তর সম্পত্তি দখলের অভিযোগে একাধিক গণসমাবেশও অনুষ্ঠিত হয়। দেওভোগের জিউস পুকুর সংলগ্ন এক গণসমাবেশ নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ একেএম শামীম ওসমানের অনুসারী আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আইভীর বিরুদ্ধে নানা তীর্যক মন্তব্য করেন। সেসব বক্তব্যের অধিকাংশই ছিল আইভীর বিরুদ্ধে বিষোদগার। সেখানে মেয়র আইভীকে উদ্দেশ্য করে ‘সিঁদুর পড়ে ভন্ডামি করেন, কালী সাধনা করেন। আগুনে জ্বলে ছাড়খার হবেন’ উল্লেখ করে বক্তব্য রাখেন তারা। এমনকি আসন্ন নির্বাচনে মেয়র আইভীকে ভোট না দেওয়ার জন্যও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অনুরোধ জানানো হয় ওই সমাবেশ থেকে।

ধর্মীয় এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে জুমার নামাজের পূর্বে বয়ানে মেয়র আইভীর উদ্দেশ্যে ওলামা পরিষদেরও এক নেতাও তাদের সুরে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘উনি নারায়ণগঞ্জের মেয়র। মুসলিম পরিবারের মেয়ে হয়ে সিঁদুর লাগিয়ে মন্দিরে গিয়ে পূজা করছেন। সেই ছবি নাকি ভাইরাল হয়েছে।’

সম্প্রীতির এই শহরে সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়ানোর চেষ্টা চলছে বলে মন্তব্য সচেতন মহলের। বিষয়টিকে অশনিসংকেত বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য সিনিয়র আইনজীবী আনিসুর রহমান দিপু। তিনি বলেন, ‘সারাদেশেই সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ তো আর বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন না। সব মিলিয়ে এটাও একটা ষড়যন্ত্র। আমরা একটা অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। নারায়ণগঞ্জ একটা সম্প্রীতির শহর। সেখানে বিভিন্নভাবে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেওয়ার চেষ্টা চলছে। কখনও মসজিদ, কখনও মন্দিরের নামে। এই বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধিরা এই বিষয়টি নজরে নেবে এবং মোকাবেলারও সময় এসেছে বলে মনে করি।’

নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও আইনজীবী মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ জন্মলগ্ন থেকেই সকল ধর্ম সহাবস্থানে বসবাস করে আসছি। কিন্তু সম্প্রতিকালে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটা চক্র নোংরামি শুরু করেছেন। সরাসরি সামনে না আইসা পেছন থেকে এই কাজ করছেন সাংসদ শামীম ওসমান। সাম্প্রদায়িক ইস্যুকে সামনে রেখে ঘৃণ্য রাজনীতি চলছে। এই নোংরামি টিকবে না। কেননা নারায়ণগঞ্জবাসী জানে এর পেছনে কে আছে।’

নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সহসভাপতি ধীমান সাহা জুয়েল বলেন, ‘পুরোটাই রাজনৈতিক নোংরামি। মেয়র নিজ অবস্থান থেকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার জন্য যতটুকু করার করছেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি দাবি করা একজন আইন প্রণেতা এবং তার ছত্রছায়ায় যারা আছেন তাদের মাধ্যমে তাকে এইভাবে অপমান ও হেয় করার নিন্দা ও ধিক্কার জানাই।’

এ প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, ‘উপরওয়ালা আছেন, তিনিই সবকিছুর বিচারক। আমি অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাসী। দলমতের উর্ধ্বে উঠে ধর্মীয় চেতনার উর্ধ্বে উঠে মানুষের কল্যাণে কাজ করি। মানুষের কল্যাণে কাজ করে মানুষের মাধ্যমে আমি খোদাকে খুঁজে বেড়াই। বাংলাদেশে আমরা হিন্দু মুসলমান সবাই এক সাথে বাস করি। সবার ঊর্ধ্বে আমাদের মা, মাটি, দেশ।’

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়