১৯ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ১৯:৪৬, ২ অক্টোবর ২০২২

আপডেট: ১৯:৪৮, ২ অক্টোবর ২০২২

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বাড়ানোর অনন্য প্রচেষ্টা

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বাড়ানোর অনন্য প্রচেষ্টা

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বাড়ানোর চেষ্টার অংশ হিসেবে হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে দুর্গাপূজার তিনদিনে প্রতিদিন দেড় হাজার অতিথিকে আপ্যায়ন করবে নারায়ণগঞ্জের খানপুর বরফকল এলাকার শ্রী শ্রী সিদ্ধিগোপাল আখড়া। রোববার (২ অক্টোবর) থেকে শুরু হয়েছে এ আয়োজন। মন্দিরটি এ বছর ১৩০ বছর পার করছে।

মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিমাই দে জানান, খানপুরে দুর্গাপূজার উৎসবে হিন্দু মুসলিম সবাই আসে। প্রতিবছর আমরা মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে মন্দিরের আশেপাশের ছয়শ হিন্দু পরিবারের মধ্যে টোকেনের মাধ্যমে প্রসাদ বিতরণ করি। এ বছর আমাদের এলাকারই সন্তান ব্যবসায়ী চন্দন চন্দ্র লোথ ইচ্ছা পোষন করলেন যে দুর্গা উৎসব আরো কার্যকরভাবে সার্বজনীন করতে ব্যাপক খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করতে। যে আয়োজনে হিন্দু মুসলিম সবাই অংশ নিতে পারবে। তারই অংশ হিসেবে রোববার থেকে এই বিশাল ভোজ শুরু হয়েছে।

খানপুরের সিদ্ধি গোপাল মন্দিরের জায়গা খুব অল্প। মন্দির প্রাঙ্গনে শ দু’য়েক লোক দাড়ালেই অনেক দেখা যায়। তাই এ বিশাল ভোজের আয়োজনের জন্য মন্দিরের অল্প দূরে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্মাণাধীন একটি ভবনকে বেছে নেয়া হয়েছে। রোববার দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা যায় অন্তত শ দুয়েক লোক এক সাথে বসতে পারে এমন টেবিল পাতা। খান সামারা ব্যস্ত মানুষকে আপ্যায়ন করতে। লোকজন আসছে যাচ্ছে। খাবার আইটেম সরল। সব্জি পোলাও, বুটের ডাল, ফুলকপির রসা, চাটনি। পোলাওয়ের গন্ধে পুরো এলাকা ম ম করছে। পূজায় কেনা নতুন জামা, নতুন শাড়ি পড়ে শিশু নারীরা যেমন এসেছে তেমনি জোহরের নামাজ শেষ করে বেশ কয়েকজন মুসল্লিও এসেছিলেন এ আপ্যায়নে।

রিক্সা চালক মঞ্জু মিয়া তার ছেলে রাকিবুলকে নিয়ে এসেছেন। বললেন, আমি এ এলাকার একটি রিকশার গ্যারেজের রিকশা চালাই। পূজা উপলক্ষে হিন্দুরা সবার জন্য খাওয়ার আয়োজন করেছে জেনে ছেলেকে নিয়ে খেতে এসেছি। সম্মান করে খাওয়াচ্ছে। ভালোই লাগলো।

পাশের টেবিলের কবিতা দে তার দুই মেয়ে, মা, বোনের পরিবারের সবাইকে নিয়ে এসেছেন। তার স্বামী ওয়েল্ডিং কারখানায় কাজ করেন। বললেন, প্রতিবছর মন্দির কমিটি টোকেনের বিনিময়ে খাবারের প্যাকেট দেয়। এবার দুপুরে হিন্দু মুসলিম সবার জন্য খাওয়ার আয়োজন করেছে। আর মন্দির থেকে বাসার জন্য প্যাকেটটিও আলাদা দিচ্ছে।

আয়োজনে সহযোগিতা করা স্থানীয় কাউন্সিলর অহিদুল ইসলাম জানান, এটি একটি অনন্য উদ্যোগ। মানুষে মানুষে ভাতৃত্ববোধ সহমর্মিতা আরো বাড়াবে। যদিও আমাদের এলাকাটিতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতি সব সময়ই বেশ প্রবল।

এ বিশাল ভোজের আয়োজক চন্দন চন্দ্র লোথ বলেন, আমরা ছোট বেলা থেকে হিন্দু মুসলিম সবাই একসাথে বড় হয়েছি। ঈদে আমি বন্ধুদের বাসায় গিয়েছি। সাড়াদিন নিজের বাসায় খাওয়া হয়নি। বন্ধুদের বাসায় খেতে খেতে পেট ভরে গেছে। সেই ভালোবাসাটি ছড়িয়ে দিতেই আমার এ আয়োজন। আমাদের সাম্প্রদায়িক বন্ধনকে আরো দৃঢ় করার চেষ্টা। নবমি পর্যন্ত তিন দিন এ আয়োজন চলবে। এছাড়া এ তিন দিন মন্দিরের পার্শ্ববর্তী ছয়শ পরিবারের মধ্যে বাসার জন্য এক প্যাকেট খাবার দেয়া হবে।

১৮৭২ সালে ময়মনসিংহের ত্রিশালের রাজা এ মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়