২৩ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ২২:৩০, ৯ ডিসেম্বর ২০১৮

আপডেট: ১২:২৮, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮

সাহস পেলেন না গিয়াস উদ্দিন

সাহস পেলেন না গিয়াস উদ্দিন

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: শেষ পর্যন্ত চুপসে গেলেন বিএনপির সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। সাহস করলেন না শামীম ওসমানের বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করার। যদিও গত কয়েকদিন গিয়াস উদ্দিন সমর্থকরা বলে বেড়াচ্ছিলেন নেতাকর্মীদের চাপে গিয়াস উদ্দিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন। যদিও গিয়াস উদ্দিন দলীয় মনোনয়ন পত্র না পেয়ে ২৮ নভেম্বর স্বতন্ত প্রার্থী হিসেবে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। শুধু তাই নয় নিজের ছেলেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রার্থী করেছেন। কিন্তু ১% ভুয়া ভোটারের অভিযোগে ছেলে গোলাম মুহাম্মদ কায়সারের মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেয় রিটার্নিং কর্মকর্তা। পরে সে আর আপিল করেনি।

দলীয় সূত্রমতে, নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনে ২৭ নভেম্বর বিএনপির ২ থেকে ৩ জন করে মনোনীত প্রার্থীকে চিঠি দেয়। কিন্তু গিয়াস উদ্দিনকে কোন চিঠি দেয়নি। ফলে বিএনপির অনেক নেতাকর্মীর কাছে পরিস্কার হয়ে দলীয় প্রার্থী তো দুরের কথা শান্তনার চিঠির তালিকায়ও তার নাম রাখা হয়নি। ফলে নিজের ইমেজ ও নেতাকর্মীদের মন রক্ষার্থে ২৮ নভেম্বর তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এবং গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেন কেন্দ্রের নির্দেশে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। যা ৮ ডিসেম্বরের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে একটা সুরাহা হবে। তার এই কথায় তার লোকজন আভাস দেয় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তন হচ্ছে। উচ্ছসিত হয়ে উঠে গিয়াস সমর্থকরা।

এদিকে ২ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে গিয়াস উদ্দিনের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা। পরে আপিলে তিনি প্রার্থীতা ফিরে পান। ৮ ডিসেম্বর চুড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের শেষ সময় পর্যন্ত তীর্থের কাকের মতো তাকিয়ে ছিলেন গিয়াস উদ্দিন মনোনয়নের জন্য। ওদিকে বিএনপির চুড়ান্তভাবে শাহ আলমকে মনোনীত করে। ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত শাহ আলমই চুড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় ছিল। কিন্তু আকষ্মিকভাবে ২০ দলীয় জোটের শরীক জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন দাবী করে। শুরু হয় দেনদরবার। এক পর্যায়ে জোটের ঐক্য ধরে রাখতে নিরুপায় হয়ে নানা আলোচনা ও দেনদরবারের মধ্যে ৮ ডিসেম্বর বিকালে শাহ আলমকে বাদ দিয়ে মনোনয়ন পত্র দেয়া হয় জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মুফতি মনির হোসাইন কাশেমীকে। তিনি বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবেন। এমন ঘোষনায় মুষড়ে পড়ে শাহ আলম। খেলার স্বঘোষিত অতিরিক্ত খেলোয়ার গিয়াস উদ্দিন ছিটকে পড়েন রাজনীতির মাঠ থেকে। রাগে ক্ষোভে বিমর্ষ গিয়াস উদ্দিন। সাহস করলেন না স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করার। যদিও তার ঘনিষ্ঠজনরা বলে আসছিলেন, শাহ আলম মনোনয়ন পেলেও গিয়াস উদ্দিন স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন। কিন্তু যেখানে জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের নতুন মুখ প্রার্থী হয়েছে সেখানে গিয়াস উদ্দিন তো বিএনপির নেতাকর্মী তথা এলাকাবাসীর কাছে অনেক বেশি পরিচিত মুখ। অনন্ত বিএনপির ভোটগুলো তো তিনি পেতেন। কিন্তু রোববার (৯ ডিসেম্বর) প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিলেন। সরে গেলে ভোটের মাঠ থেকে। গ্রহন করলেন না শামীম ওসমানের চ্যালেঞ্জ।

এদিকে সিদ্ধিরগঞ্জে গুঞ্জন শুরু হয়েছে গিয়াস উদ্দিন আগামীদিনে তার অবস্থান ও ব্যবসা বাণিজ্য ঠিক রাখতে তার এক ছেলেকে আওয়ামীলীগে যোগদান করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের সাথে আলোচনাও নাকি এগিয়েছে। বাকী শুধুু আনুষ্ঠানিকতা।

উল্লেখ গিয়াস উদ্দিন ৮০ দশকে জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে সক্রীয় ছিলেন। সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ ও সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদের পতনের পর আওয়ামীলীগের যোগ দেন। কিন্তু আওয়ামীলীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে ২০০১ সালের নির্বাচনের অল্প কিছুদিন আগে বিএনপিতে যোগ দেন। ওই সময় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপি প্রথমে মনোনয়ন দেয় জাতীয় পার্টি থেকে বিএনপিতে যোগ দেয়া শিল্পপতি সফর আলী ভুইয়াকে। কিন্তু নাটকীয়তার মধ্যে সফর আলী ভ্ইুয়াকে দেয়া মনোনয়নপত্র ছিনিয়ে নেন গিয়াস উদ্দিন। এবং শামীম ওসমানকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচত হন। জরুরী অবস্থায় সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়ে সাড়ে ৩ বছর কারাভোগ করেন তিনি। তার বিরুদ্ধে ওই সময়ে বিভিন্ন অপরাধে ২৮ টি মামলা দায়ের হয়।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়