২৩ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ১৭:৩৭, ৯ জানুয়ারি ২০২১

আপডেট: ১২:৪৬, ১০ জানুয়ারি ২০২১

সিদ্ধিরগঞ্জে শ্রমিক বিক্ষোভে পুলিশের লাঠিচার্জ, আহত ২০

সিদ্ধিরগঞ্জে শ্রমিক বিক্ষোভে পুলিশের লাঠিচার্জ, আহত ২০

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: লে-অফ ঘোষণার বিরুদ্ধে ও বকেয়া বেতনের দাবিতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ইপিজেডের কুনতং অ্যাপারেলস্ কারখানার শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে। শ্রমিকদের বিক্ষোভে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, জলকামান ছোড়ে। এতে অন্তত ২০ জন শ্রমিকের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পুলিশের পাশাপাশি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমানের অনুসারী লোকজনও শ্রমিকদের উপর হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ শ্রমিকদের।

শনিবার (৯ জানুয়ারি) সকাল ৮টায় সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী ইপিজেডের প্রধান ফটকের সামনের সড়কে জড়ো হয় শ্রমিকরা। সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করে কারখানাটির কয়েক হাজার শ্রমিক। শ্রমিকরা সড়কের ওপর আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।এ সময় শিমরাইল-আদমজী-চাষাঢ়া সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশ বাধা দিলে শ্রমিক পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। শ্রমিকরা ইট পাটকেল ছুঁড়লে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে শ্রমিকদের রাস্তা থেকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে আহত হন শ্রমিক জাগরণ মঞ্চের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম গোলক, গার্মেন্ট ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের জেলা কমিটির সদস্য দিলীপ কুমার দাস, শ্রমিক জাগরণ মঞ্চের নেতা রফিকুল ইসলাম হাবিব, শ্রমিক সালমা, মাসুমা, সোমা, ফাতেমা, তানিয়া, রমিজ, সুমন, পারভেজসহ আরও অনেকে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার দ্বিতীয় দিনের মতো সড়ক অবরোধ করে বকেয়া বেতন আদায়ের দাবিতে আন্দোলন করে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। এর আগে বৃহস্পতিবারও সড়ক অবরোধ করে শ্রমিকরা। দ্বিতীয় দিনে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করে শ্রমিকরা। এক পর্যায়ে শিল্প পুলিশ, জেলা পুলিশ ও বেপজার নিরাপত্তা কর্মীরা শ্রমিকদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে তাদেরকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে শ্রমিকরা। পরে শিল্প পুলিশ কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান দিয়ে পানি নিক্ষেপ করলে শ্রমিকরা সব ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে তারা ইপিজেডের মূল গেটের সামনে থেকে সরে গিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছে গিয়ে সড়কে অগ্নিসংযোগ করে। পরে সেখান থেকেও তাদের সরিয়ে দেয় পুলিশ।

এদিকে শ্রমিকদের অভিযোগ, আদমজী ইপিজেডের কুনতং এপারেলস লিমিটেড (ফ্যাশন সিটি) গত বছরের ১০ আগস্ট হঠাৎ দুই দিনের ছুটি ঘোষণা করে ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দেয়। তবে বন্ধ হওয়ার পরেও শ্রমিকদের ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা করে বেতন পরিশোধ করে আসছিল মালিকপক্ষ। তার ধারাবাহিকতায় শনিবার বেতন দেওয়ার কথা থাকলেও গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ আগামী ১২ জানুয়ারি বেতন দেওয়ার ঘোষণা দেয়। যার কারণে শ্রমিকরা সকাল ৮টায় আদমজী ইপিজেডের সামনে অবস্থান নেয়। সেখানেই তাদের উপরে আনসার ও ইপিজেডের নিরাপত্তা কর্মীরা চড়াও হয় বলে অভিযোগ করেন তারা। এক পর্যায়ে পুলিশ, ইপিজেডের আনসার ও নিরাপত্তাকর্মীরা শ্রমিকদের লাঠিচার্জ করে। পুলিশ বিনা উস্কানিতে তাদের উপর লাঠিচার্জসহ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে দাবি করে তাদের কমপক্ষে পনেরজন শ্রমিক আহত হওয়ার কথা জানান।

এদিকে শ্রমিক জাগরণ মঞ্চের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম গোলক বলেন, শ্রমিকদের ন্যায্য দাবির আন্দোলনে পুলিশ হামলা চালায়। পুলিশের সাথে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীও শ্রমিকদের উপর চড়াও হয়। পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী অতর্কিত হামলা চালিয়ে শ্রমিকদের লাঠিপেটা করে।

তিনি বলেন, ‘মজিবুর রহমান মালিকদের পক্ষ নিয়ে শ্রমিকদের রাস্তা ছেড়ে দিতে বলে। এটা শ্রমিকরা না মানলে তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে শ্রমিকদের উপর হামলা চালায়। বেপজাও শ্রমিকদের বিপক্ষে গিয়ে মালিকদের কথা বলছে। শ্রমিকরা করোনা সংকটের মধ্যে চাকরি হারাচ্ছে সেটা তাদের খেয়ালে নেই। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি না মানলে এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’

এদিকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-৪ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন জানান, আদমজী ইপিজেডের কুতনং এ্যাপারেলসে প্রায় ৬০০০ হাজার শ্রমিক কাজ করতো। লে-অফ চলাকালীন সময়েও প্রতিষ্ঠানটি শ্রমিকদেরকে বেতনের একটা অংশ প্রদান করে আসছিল। শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ না করে মালিকপক্ষ কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পরে মালিকপক্ষের সাথে আলাপ আলোচনা করে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পাইয়ে দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়। তবে এরপরেও শ্রমিকরা রাস্তা থেকে সরে না গিয়ে পুলিশের উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে বাধ্য হয়।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়