২৯ মার্চ ২০২৪

প্রকাশিত: ২২:১০, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

আপডেট: ২০:২০, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

সেই নিয়াজুল আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি

সেই নিয়াজুল আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের ১২ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি হয়েছেন নিয়াজুল ইসলাম খান৷ তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে হত্যাচেষ্টা মামলার প্রধান আসামি৷

২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি হকার ইস্যুতে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে আলোচনায় আসেন নিয়াজুল ইসলাম খান৷ ওইদিন অস্ত্র নিয়ে তেড়ে গিয়ে চাষাঢ়ায় গণপিটুনির শিকার হন৷

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিয়াজুল ইসলাম নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ অনুসারী৷ একসময় যুবলীগের ক্যাডার হিসেবে পরিচিতি পাওয়া নিয়াজুল ১৯৮৬ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় থাকাকালে প্রয়াত নাসিম ওসমান সংসদ সদস্য হলে তার হাত ধরে সামনে আসেন৷ ১৯৮৮ সালে জোড়া খুনের (কামাল ও কালাম) মামলায় অন্যতম আসামি করা হয় তাকে৷ ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে শামীম ওসমান প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য হলে অস্ত্রের লাইসেন্স পায় নিয়াজুল। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত এলজিইডির ঠিকাদারি ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ছিল তার হাতে। এছাড়া গার্মেন্টসের ঝুট ব্যবসা ও ভূমিদস্যুতাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিয়াজুলের সম্পৃক্ততা রয়েছে। নগরীর চাঁদমারীতে সেনাবাহিনীর জায়গার গড়ে ওঠা বস্তিও নিয়ন্ত্রণ করতো সে।

ওই সময় দোর্দণ্ড প্রভাবশালী হিসেবে ক্যাডার পরিচিতি পায় যে চার ব্যক্তি তার অন্যতম হচ্ছে নিয়াজুল। সে সময় তাদের ‘খলিফা’ হিসেবে ডাকা হতো। অন্য তিন জনের মধ্যে মাহাতাব উদ্দিন লাল ও গোলাম সারোয়ার অসুস্থতায় মারা গেছে। আর নুরুল আমিন মাকসুদ নিহত হয় আততায়ীর গুলিতে।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে নিয়াজুলের বড় ভাই সুইট র‍্যাবের ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হয়। ওই সরকারের আমলেই তাদের আত্মীয় যুবদল নেতা মমিনউল্লাহ ডেভিডও নিহত হয় র‍্যাবের ‘ক্রসফায়ারে’। ২০০১ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদ শেষ হলে নারায়ণগঞ্জের অন্য চিহ্নিত সন্ত্রাসীর মতো নিয়াজুলও পালিয়ে যায় ভারতে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশে ফেরে সে।

তবে দীর্ঘদিন পর ২০১৮ সালে হকার ইস্যুতে সংঘাতে আলোচনায় আসেন নিয়াজুল ইসলাম খান৷ ওইদিন হকার ও শামীম ওসমান সমর্থকদের হামলায় আহত হন নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, আওয়ামী লীগ নেতা, সাংবাদিকসহ অনেকে৷ এ ঘটনায় মেয়র আইভী তাকে হত্যাচেষ্টা ও প্রকাশ্যে গুলি চালানোর অভিযোগে একটি মামলা করেন৷ ওই মামলার প্রধান আসামি নিয়াজুল ইসলাম খান৷

মামলাটির তদন্ত শেষে গত ২৩ নভেম্বর আদালতে চার্জশিট দেয় তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই৷ পিবিআই’র চার্জশিটে ১২ অভিযুক্তের মধ্যে প্রথম নামটি নিয়াজুল ইসলামের৷ চার্জশিট থেকে অস্ত্র আইনের ধারা বাদ দিলেও ওইদিন নিয়াজুল ইসলাম প্রকাশ্যে পিস্তল প্রদর্শন করে উঁচিয়ে ধরেছেন সে প্রমাণ ঘটনার দিন ধারণ করা ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে পাওয়া গেছে৷ তবে পিস্তলটি লাইসেন্সপ্রাপ্ত থাকায় তাকে অস্ত্র আইনের ধারা থেকে বাদ দেয় পিবিআই৷

যদিও পিবিআই’র জেলা কার্যালয়ের পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম জানান, ওই ঘটনার পর নিয়াজুলের ওই পিস্তলটির লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে৷

আওয়ামী লীগের নেত্রী ও টানা তিনবারের নির্বাচিত মেয়রের উপর হামলার অভিযোগে করা মামলায় প্রধান অভিযুক্ত আসামিকে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি করায় চলছে সমালোচনা৷

জানতে চাইলে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, মহানগরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডে সভাপতি পদে কোন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিল না৷ বিতর্কিত হলেও নিয়াজুল ইসলামের বিপরীতে কেউ না থাকায় সে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় সভাপতি হয়েছে৷

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়