২৮ মার্চ ২০২৪

প্রকাশিত: ২০:৩৮, ১১ এপ্রিল ২০২১

আপডেট: ১৭:২১, ১২ এপ্রিল ২০২১

সোনারগাঁয়ে হেফাজতের তান্ডবে অংশ নেয় জাপা নেতাকর্মীরা!

সোনারগাঁয়ে হেফাজতের তান্ডবে অংশ নেয় জাপা নেতাকর্মীরা!
 
প্রেস নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল কা-ে হামলা, ভাঙচুর, অবরোধ, মারধরের ঘটনায় এখন পর্যন্ত সাতটি মামলা হয়েছে থানায়। মামলাগুলোতে আসামি হিসেবে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের নামও এসেছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের ভাষ্যমতে, হেফাজতের সাথে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরাও গত ৩ এপ্রিল সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত তান্ডব চালায়। তারা উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতার বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালায়। হামলা-ভাঙচুরের ঘটনার পরে উপজেলা আওয়ামী লীগের এক প্রতিবাদী মানববন্ধনেও নেতারা এমন অভিযোগ তুলেছেন। তবে জাতীয় পার্টির অভিযুক্ত নেতারা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন শুরু থেকেই। এদিকে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল সোনারগাঁ পরিদর্শনে এসে সহিসংতার সাথে সম্পৃক্ত সকলের প্রতি হুশিয়ারি জানিয়ে বলেছেন, মামলায় অভিযুক্ত সকলকে আইনের আওতায় আনতে হবে।

মামলায় আসামি জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা সোনারগাঁয়ের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার অনুসারী। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের বাড়ি ও কার্যালয়ে হামলায় জাপার সাংসদের ইন্ধনেরও অভিযোগ রয়েছে। তবে সাংসদ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, রাজনৈতিক কারণে মিথ্যা অভিযোগে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের এই ঘটনার সাথে জড়ানো হচ্ছে।
 
গত ৩ এপ্রিল বিকেলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মী এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টের ৫০১ নম্বর কক্ষে নারীসহ হেফাজত নেতা মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করে। এই ঘটনার প্রতিবাদে রয়েল রিসোর্টে ভাঙচুর চালিয়ে মামুনুলকে ছিনিয়ে নেয় তার কর্মী-সমর্থকরা। পরে দফায় দফায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের কার্যালয়, ছাত্রলীগ, যুবলীগ নেতার বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালায় দুর্বৃত্তরা স্থানীয় এক সাংবাদিককেও মারধর করে। এইসব ঘটনায় পুলিশ, সাংবাদিক, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন বাদী হয়ে মোট সাতটি মামলা করেছেন। মামলাগুলোতে মাওলানা মামুনুল হকসহ হেফাজতের কয়েকশ’ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। মামলার আসামি হয়েছেন জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরাও। মামলার বাদীরা মামলায় উল্লেখ করেছেন, তারা হত্যার উদ্দেশ্যে উপজেলা ছাত্রলীগ, যুবলীগ নেতা-কর্মীদের বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছেন।

গত ৯ এপ্রিল সোনারগাঁ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু বাদী হয়ে ১২৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১৫০-২০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে হেফাজত নেতা মাওলানা ইকবাল হোসেনকে। এছাড়াও মামলায় জাতীয় পার্টির নেতাদের মধ্যে আসামি করা হয়েছে, উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম ইকবাল, পৌর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিক, উপজেলা ছাত্র সমাজের সভাপতি ফজলুল হক মাস্টার, জেলা স্বেচ্ছাসেবক পার্টির নেতা কাজী নাজমুল ইসলাম লিটু, জাতীয় পার্টির নেতা কাউসার, ওমর ফারুক টিটু, মোক্তার হোসেন, আলমগীর হোসেন অপুসহ বেশ কয়েকজনকে। উপজেলা যুবলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নাসির উদ্দীন আহাম্মেদ বাদী হয়ে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলাতেও উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগে আসামি জাতীয় পার্টির বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী। পুলিশের মামলাতেও আসামি পৌর জাতীয় পার্টির সভাপতি এমএ জামান ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিক।

ভাঙচুর ও হামলার ঘটনার একদিন পর গত ৪ এপ্রিল ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সভায় দলের সাবেক সাংসদ আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত অভিযোগ করে বলেন, হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের কাঁধে বন্দুক রেখে বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টির লোকেরা আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়িঘরে হামলা করেছে। পার্টি অফিসেও ভাঙচুর চালায়।
 
এই বিষয়ে রফিকুল ইসলাম নান্নু বলেন, ‘হেফাজত, বিএনপি ও জামাত-শিবিরের কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে স্থানীয় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার আত্মীয়-স্বজন আমার বাড়ি ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে হামলা-লুটপাট করেছে। এখানে জাতীয় পার্টির এমপি আওয়ামী লীগের বিরোধী দল হিসেবে কাজ করে। তিনি বিএনপি-জামাতকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে সব সময় তৎপর থাকেন।’

অভিযোগ প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা প্রেস নারায়ণগঞ্জকে বলেন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের এইসব মামলায় আসামি করা হয়েছে। গত সংসদ সদস্য নির্বাচনে আমি মহাজোটের প্রার্থী ছিলাম। সোনারগাঁয়ে আওয়ামী লীগের ৯০ শতাংশ নেতা-কর্মীদের সাথে আমার ভালো সম্পর্ক। কিন্তু গতবার মহাজোটের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যে অংশটি আমার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল তারাই আমার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এইসব অপপ্রচার চালাচ্ছে। প্রশাসন নিরপেক্ষ থেকে যারা প্রকৃত দোষী তাদের আইনের আওতায় আনবে বলে আমি আশাবাদী।’

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়