২৫ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ২২:৪২, ২৫ মার্চ ২০১৯

আপডেট: ১৩:৫৩, ২৭ জুন ২০১৯

স্বামীর বাড়িতে পাশবিক নির্যাতনে কেটেছে খাদিজার ৪ বছর

স্বামীর বাড়িতে পাশবিক নির্যাতনে কেটেছে খাদিজার ৪ বছর

আফসানা আক্তার (প্রেস নারায়ণগঞ্জ): প্রেমের টানে ১৭ বছর বয়সে ফরহাদের হাত ধরেছিলো খাদিজা। এরপর ৪ বছরের সংসার জীবন। শেষে সেই ভালোবাসাই হয়েছে তার হন্তারক। ৪টি বছর যে খুব স্বাভাবিক জীবনযাপনের মধ্য দিয়ে কাটিয়েছে সে এমনটি নয়। প্রতিনিয়ত মানসিক যন্ত্রণা ও শারীরিক নির্যাতনেই দিন কাটতো তার। এতো কিছু সহ্য করেও পড়ে ছিল সেই ভালোবাসার মানুষটির কাছে। তবে শেষবার বাবার বাড়ি এসে আর ফিরে যেতে চায়নি খাদিজা। বোনকে বলেছিল, ‘আমার এমন স্বামী লাগবো না। ছেলেকে নিয়ে কাজ করে খাবো।’

প্রেস নারায়ণগঞ্জের প্রতিবেদকের কাছে যৌতুকের দাবিতে পরকীয়ায় লিপ্ত স্বামীর হাতে নির্যাতনের পর নিহত খাদিজার বড় বোন ফজিলত বেগমের দেয়া বক্তব্যে উঠে এসেছে এমন তথ্য। ১২ দিন মুমূর্ষ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে থাকার পর ১৪ মার্চ সকালে মারা যায় খাদিজা আক্তার। পরবর্তীতে এ ঘটনায় খাদিজার বড় বোনের স্বামী বাদী হয়ে খাদিজার স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির ৪ জনকে আসামি করে ফতুল্লা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

এদিকে ফজিলত বেগম আরও বলেন, ‘শেষবার যখন বোনটা যেতে চাইলো না তখন আমরাই জোর করে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু আমার বোন আর ফিরলো না। তখন যদি জানতাম তাহলে বোনটারে কোনদিনই পাঠাতাম না।’ এ কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহত খাদিজার বড় বোন।

খাদিজার পরিবার সূত্রে জানা যায়, খাদিজার বাবা আব্দুর রশিদ বেঁচে নেই। দরিদ্র পরিবারের হওয়া সত্ত্বেও বিয়ের সময় ফরহাদকে দেড় লাখ টাকা যৌতুক হিসেবে দিয়েছিল খাদিজার মা। কিন্তু তাতেও মন ভরেনি খাদিজার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের। বিয়ের পর ৪ বছরে শ্বশুরবাড়ি থেকে খাদিজাকে সামান্য কিছুও দেয়নি বলে দাবি খাদিজার পরিবারের। ফলে মায়ের বাড়ি থেকে যা কিছু দেয়া হতো তাতেই চলতে হতো তাকে। তার উপর নানা অজুহাতে কথা শোনাতো ফরহাদ ও তার পরিবার।

এদিকে ছয় মাস পূর্বে খাদিজা জানতে পারে তার স্বামী অন্য এক নারীর সাথে পরকীয়া প্রেমে লিপ্ত। এ ব্যাপারে স্বামী ফরহাদের সাথে কোন কথা বলতে চাইলে ক্ষেপে যেতো সে। প্রায় সময়ই নির্যাতন চালাতো খাদিজার উপর। তবে নির্যাতনের কথা মা ও বোনদের জানাতেন না খাদিজা।

খাদিজার মা নূরজাহান বেগম বলেন, ‘আঘাতের ক্ষত নিয়ে যখনই বাড়ি আসতো, প্রায় সময় জিজ্ঞাস করতাম তোর কি হয়েছেরে মা? ব্যাথা পেলি কীভাবে? খাদিজা বলতো, পা পিছলে পড়ে গিয়েছিলাম, মশা কমড়েছে, এটা হয়েছে, ওটা হয়েছে। কিন্তু কখনো মুখ ফুটে বলতো না, মা ওরা আমাকে মেরেছে। আমার মেয়ে স্বামীর সব অপরাধের কথা লুকাতো। তবুও ওরা মেয়েটাকে বাঁচতে দিলো না।’

নূরজাহান বেগম আরও বলেন, ‘গত ১০ মার্চ আমার সাথে শেষ কথা হয়েছিল। দিন পার হয়ে যায় কিন্তু মেয়ে আমার ফোন করে না। তাই একদিন পর ১২ মার্চ সকালে মেয়েকে দেখতে তার শ্বশুরবাড়ি দেখতে যাই। গিয়ে দেখি ঘরের দরজা বন্ধ। হাতের লাঠি দিয়ে শব্দ করার পরও দরজা খোলেনি। পরে দরজা খোলার পরে ভেতরে না ঢুকেই আমার মেয়ে কোথায় জিজ্ঞেস করলে, ওর শ^াশুড়ি বললো, অন্য ছেলের সঙ্গে পালিয়েছে। জোর করে ঘরে ঢুকে দেখি ঘরে পানি। একটু খুজতেই দেখি খাটের নিচে আমার মেয়ে।

কাঁদতে কাঁদতে নিহতের মা বলেন, মেয়েটারে মেরে কিচ্ছু রাখেনি। আমার মেয়েকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। কত না ছটফট করেছে আমার মা! গলা টিপে গলার হাড় ভেঙ্গে ফেলসে। তারপরও যখন মরেনি, তখন হারপিক খাইয়ে দেয়। শেষবারের মতো কথাও বলতে পারেনি।’

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়