২৫ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ১২:০৮, ২৪ আগস্ট ২০২০

আপডেট: ১৬:১৭, ২৪ আগস্ট ২০২০

হত্যার পর নদীতে ভাসিয়ে দেয়া সেই জিসা মনি জীবিত ফিরল!

হত্যার পর নদীতে ভাসিয়ে দেয়া সেই জিসা মনি জীবিত ফিরল!

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ নগরীর দেওভোগের স্কুল ছাত্রী জিসা মনিকে ধর্ষণের পর হত্যা করে নদীতে লাশ ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই অপরাধের সাথে জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। এমনটাই জানিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু নিখোঁজের ৫১ দিন পর সেই স্কুল ছাত্রীকে জীবিত অবস্থায় পাওয়া গেছে। এ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশের তদন্ত নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

গত ৪ জুলাই থেকে নিখোঁজ ছিল জিসা মনি (১৫) নামে ওই কিশোরী। সে দেওভোগ পাক্কা রোড সরকারি প্রাইমারি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। অনেক খোঁজাখুজির পর মেয়েকে না পেয়ে গত ৬ আগস্ট সদর মডেল থানায় অপহরণ মামলা করেন বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন। মামলার তদন্তভার পান সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শামীম আল মামুন। এ ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় বন্দর উপজেলার বুরুন্ডি খলিলনগর এলাকার আমজাদ হোসেনের ছেলে আব্দুল্লাহ (২২), বুরুন্ডি পশ্চিমপাড়া এলাকার সামসুদ্দিনের ছেলে রকিব (১৯) ও নৌকার মাঝি খলিলকে (৩৬)। গত ৯ আগস্ট আসামিরা নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিল্টন হোসেন ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হুমায়ুন কবিরের পৃথক আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে বলে জানায় সদর মডেল থানা পুলিশ।

আসামিদের দেওয়া জবানবন্দির বরাতে পরিদর্শক (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছিলেন, প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে গত ৪ জুলাই বিকেলে রকিবের ইজিবাইকে ঘোরাঘুরি শেষে ওই কিশোরীকে শহরের পাঁচ নম্বর ঘাট এলাকায় নিয়ে যায় আব্দুল্লাহ। সন্ধ্যায় খলিল মাঝির নৌকা ভাড়া করে কিছুক্ষন ঘোরাঘুরি করে। পরে আব্দুল্লাহ ওই নৌকাতেই মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। পালাক্রমে ধর্ষণ করে নৌকার মাঝি খলিলও। মেয়েটি তার মাকে ধর্ষণের কথা বলে দিবে বললে মেয়েটিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে আব্দুল্লাহ ও খলিল। এরপর লাশ নদীর পানিতে ভাসিয়ে দেয়।

এদিকে গত ৬ আগস্ট অপহরণ মামলায় জিসা মনির বাবা জাহাঙ্গীর উল্লেখ করেন, আসামি আব্দুল্লাহ তার মেয়েকে স্কুলে যাওয়া আসার পথে প্রেমের প্রস্তাব দিত। এতে বাধা দিলে মেয়েকে অপহরণের হুমকি দেয়। ৪ জুলাই সন্ধ্যায় আব্দুল্লাহ ফোনে ঠিকানা দিলে আমার মেয়ে সেই ঠিকানায় যায়। পরে তাকে গাড়ি দিয়ে অপহরণ করে আব্দুল্লাহ ও তার সহযোগীরা। এরপর থেকেই আমার মেয়ের কোন খোঁজ নেই।

এদিকে পুলিশ জানায়, মামলার পর মেয়ের মায়ের মোবাইলের কললিস্ট চেক করে রকিবের সন্ধান পাই। রকিবের মোবাইল নম্বর দিয়ে আব্দুল্লাহ নিহত কিশোরীর সাথে যোগাযোগ করতো। ঘটনার দিনও ওই নম্বর দিয়ে কল করে সে। রকিবকে গ্রেফতারের পর আব্দুল্লাহ ও নৌকার মাঝি খলিলকে গ্রেফতার করি। আসামিরা নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। তবে তাদের দেয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী খোঁজ করেও ভুক্তভোগীর মরদেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

চাঞ্চল্যকর বিষয় হচ্ছে গত ২৩ আগস্ট (রোববার) দুপুর আড়াইটার সময় বন্দরের নবীগঞ্জ রেললাইন এলাকার একটি মোবাইল ফোনের দোকান থেকে জিসা তার মা রেখা আক্তারকে ফোন করে জানায় সে বেঁচে আছে এবং সুস্থ আছে। তবে কিছু টাকার প্রয়োজন। এমন কথায় টাকা পাঠিয়ে উল্লেখিত এলাকায় দোকানটিতে ছুটে যান জিসার মা-বাবা। পরে খবর পেয়ে পুলিশ জিসা মনিকে সদর মডেল থানায় নিয়ে আসে। বর্তমানে সে পুলিশি হেফাজতে আছে।

চাঞ্চল্য তৈরি করা এই ঘটনায় মুহুর্তেই তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের উপর ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে এলাকাতেও। এদিকে দেড় মাস পর মেয়েকে জীবিত পেয়ে খুশিতে আত্মহারা জিসার মা-বাবা।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান জানান, মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। সে পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। গ্রেফতার তিন আসামি কেন এই রকম জবানবন্দি দিয়েছে সেটা বলতে পারছি না। আমরা তাদের আবার রিমান্ডে নেবো। রিমান্ডে তাদের পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

মামলার তদন্তে কোন ঘাটতি কিংবা অবহেলা ছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি আসাদুজ্জামান বলেন, আমি এমনটা মনে করছি না। আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশের কোন হাত থাকে না। সেখানে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে নির্ভয়ে জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। এমনটা কেন হলো তা তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়