২৯ মার্চ ২০২৪

প্রকাশিত: ১৪:১৭, ৪ মার্চ ২০১৮

আপডেট: ১৪:৫০, ৪ মার্চ ২০১৮

হারিয়ে গেছে যেসব কালজয়ী ছবি…

হারিয়ে গেছে যেসব কালজয়ী ছবি…

প্রেস নারায়ণগঞ্জ ডটকম: নির্মাতা এবং এফডিসির সচেতনতার অভাবে বহু কালজয়ী ছবি চিরতরে হারিয়ে গেছে। যার অস্তিত্ব আর নেই। এসব ছবি আর কখনই দেখা যাবে না। এমন ছবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে— ষাটের দশকের ‘আকাশ আর মাটি’, ‘রাজা এলো শহরে’, মহিউদ্দীনের ‘মাটির পাহাড়’, এহতেশাম পরিচালিত ‘চান্দা’ এবং ‘চাঁদনী’, ‘রাজধানীর বুকে’, এস এম শফীর ‘দ্য রেইন’, দিলীপ বিশ্বাসের ‘অংশীদার’, নায়করাজ রাজ্জাকের ‘অনন্ত প্রেম’, ইবনে মিজানের ‘জিঘাংসা’ আমজাদ হোসেনের ‘কসাই’ প্রভৃতি।

এফডিসির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে জানান, এফডিসিতে আসলে কোনো ছবি জমা রাখার বিধান নেই। ছবি সংরক্ষণ করা হবে ফিল্ম আর্কাইভে। কিছু নির্মাতা এফডিসিতে ছবির নেগেটিভ আর পজেটিভ ফেলে চলে যান। তাদের বার বার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও ছবিগুলো তারা নিয়ে যান না। ফিল্ম আর্কাইভেও জমা দেন না। বিধান রয়েছে ছবি নির্মাণের পর এর একটি কপি আর্কাইভে সংরক্ষণের জন্য জমা দিতে হবে। অনেকেই তা না মানায় ছবিগুলো চিরতরে হারিয়ে যায়। একটি ছবি যে তাপমাত্রায় বা যে পরিবেশে সংরক্ষণ করতে হয় এফডিসিতে সেই ব্যবস্থা নেই। ফলে বেশ কিছুদিন এখানে রাখার পর  নষ্ট হয়ে গেলে তা ফেলে দিতে হয়। এভাবে এ পর্যন্ত এফডিসিতে প্রায় ৩-৪ হাজার ছবি নষ্ট হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এহতেশাম পরিচালিত ‘চাঁদনী’ ছবির প্রযোজক ছিলেন বেক্সিমকোর একজন  পরিচালক। তার অজান্তা কথাচিত্র ছবিটি আর্কাইভে জমা দেয়নি। নায়করাজ রাজ্জাক তার নির্মিত ছবিগুলো শেখ ফরিদ নামে এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেওয়ায় রাজ্জাকের রাজলক্ষ্মী প্রোডাকশনের কোনো ছবির ৩৫ মিমি রিল আর্কাইভে জমা পড়েনি। শাবানার এস এস প্রোডাকশনের কোনো ছবিও জমা পড়েনি আর্কাইভে। সাইফুল আজম কাশেমও তার মেট্রো ফিল্মসের সোহাগ,  বৌরানী, ঘর সংসারসহ কোনো ছবি জমা  দেননি। ইলিয়াস কাঞ্চন প্রযোজিত কোনো ছবি  নেই আর্কাইভে। নায়ক আলমগীর জমা দেননি তার বৌমা, মায়ের দোয়াসহ নিজের নির্মিত  কোনো ছবি। আনন্দমেলা সিনেমা লিমিটেড জমা দেয়নি ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’, ‘স্বজন’, ‘আমার ঘর আমার বেহেশত, ‘অগ্নি সাক্ষী’র মতো জনপ্রিয় ছবিগুলো। মুস্তাফিজের কালজয়ী ছবি ‘তালাশ’রও কোনো প্রিন্ট নেই আর্কাইভে। এস এম শফী তার বিখ্যাত ‘দ্য  রেইন’ ছবিটি বিক্রি করে দিয়েছিলেন পাঁচবিবি সিনেমা হলের মালিক ইদরিসের কাছে। তিনি ছবিটি আর্কাইভে জমা দেননি। এফডিসিতে এর একটি নেগেটিভ থাকলেও সংরক্ষণের অভাবে তা এক সময় নষ্ট হয়ে যায়। আমজাদ হোসেনের ‘কসাই’ ছবির একটি প্রিন্ট এফডিসিতে থাকলেও পরে তা আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। দিলীপ বিশ্বাসের গীতি চিত্র কথার ‘অপেক্ষা’ আর গাজী মাজহারুল আনোয়ারের ‘সন্ধি’ ছাড়া তাদের আর কোনো ছবি নেই আর্কাইভে। জেড এ ফিল্মস, পারভেজ ফিল্মস, ছায়াবাণী, নারায়ণ ঘোষ মিতার রূপবাণী, জসিমের জেম্বস  প্রোডাকশনেরও কোনো ছবি নেই ফিল্ম আর্কাইভে। গুলিস্তান বিল্ডিংয়ে এক সময়  বেশির ভাগ ছবি প্রযোজনা সংস্থার অফিস ছিল। নব্বইয়ের দশকে সেখানে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে অসংখ্য কালজয়ী ছবি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। অথচ ফিল্ম আর্কাইভে জমা থাকলে এভাবে ধ্বংস হয়ে যেত না ছবিগুলো।

দেশের প্রধান গণমাধ্যম চলচ্চিত্রকে জীবন, সমাজ, সংস্কৃতি, সভ্যতা ও ইতিহাসের রেকর্ড কিপারও বলা হয়। গুরুত্বপূর্ণ এই চলচ্চিত্র সম্পদ রক্ষায় ১৯৭৮ সালে ফিল্ম আর্কাইভ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ছবি নির্মাণের পর নির্মাতার দায়িত্ব হচ্ছে ছবির একটি কপি আর্কাইভে জমা দেওয়া। যাতে ছবিটি সংরক্ষিত থাকে। কিন্তু অনেক নির্মাতাই বিনা কারণে এ নিয়ম মানেন না। ফলে হারিয়ে গেছে এবং যাচ্ছে অনেক ছবি। এ কথা ফিল্ম আর্কাইভ কর্তৃপক্ষের। অনেক নির্মাতার মধ্যে আর্কাইভে ছবি জমা  দেওয়ার উদাসীনতা দেখা দিলে এবং এতে প্রচুর ছবি হারিয়ে যাওয়ায় এক্ষেত্রে আইন করতে সরকার বাধ্য হয়। ২০০৫ সালের কপিরাইট অ্যাক্টে বলা আছে, ছবি নির্মাণের পর সংরক্ষণের জন্য অবশ্যই সেই ছবির একটি কপি নির্মাতাকে ফিল্ম আর্কাইভে জমা দিতে হবে। অন্যথায় সংশ্লিষ্ট নির্মাতার দুই বছরের জেল এবং একই সঙ্গে ৫০ হাজার টাক অর্থদণ্ড করা হবে। ফিল্ম সেন্সর বোর্ডকে বলা হয়েছে, ছবি সেন্সরের পর নির্মাতাকে আর্কাইভে ছবির কপি জমা দেওয়ার জন্য বলা হবে এবং ওই নির্মাতা আগে কোনো ছবি নির্মাণ করে থাকলে তা আর্কাইভে জমা দেওয়া হয়েছে মর্মে কাগজপত্র দেখাতে হবে। আর্কাইভ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য হচ্ছে ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের শৈথিল্যের কারণে নির্মাতারা আর্কাইভে ছবি জমা দেয় না। ফিল্ম আর্কাইভ সূত্রে জানা গেছে, কিছু নির্মাতা তাদের ছবি জমা দেন না তাদের কাছে একাধিকবার চিঠি দিয়ে ও সরাসরি লোক পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায় না। ২০০৫ সালের আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নিতে যারা এ পর্যন্ত ছবি জমা দেননি তাদের তালিকা করা হচ্ছে। এসব নির্মাতার কাছে শিগগিরই চিঠি পাঠানো হবে। অন্যদিকে সেন্সর বোর্ডকেও এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেন্সর বোর্ড জানায়, নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও অনেক নির্মাতা ছবি জমা দেন না। অনেকে আবার ছবি মুক্তির পর তা অন্য কারও কাছে বিক্রি করে দেন। ফলে যারা কিনছেন তাদের বিষয়ে কোনো তথ্য না থাকায় সংশ্লিষ্ট নির্মাতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। এদিকে ২০১৩ সালে ডিজিটাল ফরমেটে ছবি নির্মাণ শুরু হলে আর্কাইভে ছবি জমা না দেওয়ার প্রবণতা আরও বেড়েছে। জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার চলচ্চিত্র প্রযোজক আবদুল আজিজ বলেন, আর্কাইভ যে ফরমেটে ছবি জমা দিতে বলে অর্থাৎ হার্ড ড্রাইভ বা হার্ড ডিস্ক তা নিরাপদ নয়। বলা যায় উন্মুক্ত এই পদ্ধতিতে ছবি জমা দিলে তা কপি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ কারণে জাজের ছবি আর্কাইভে জমা দেওয়া হতো না। শিহাব শাহীন বলেন, আসলে ছবি জমা দেওয়ার নিয়ম এবং এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা কেউ দেন না বলেই এটি আর হয়ে ওঠে না।

 

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়