২০ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ২১:৫১, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২২

আপডেট: ১৩:৪৯, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২২

২১ বছর পলাতক ছিলেন জাকির খান

২১ বছর পলাতক ছিলেন জাকির খান

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের এক সময়ের আলোচিত ছাত্রদল নেতা ও তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী জাকির খানকে দুই দশক পর বিদেশী পিস্তলসহ গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছেন র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল তানভীর মাহমুদ পাশা। শনিবার (৩ সেপ্টেম্বক) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান তিনি।

এর আগে শুক্রবার দিবাগত রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি ফ্ল্যাটবাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই ফ্ল্যাটে পরিবারের সাথে গত একবছর যাবৎ জাকির খান নিজের পরিচয় গোপন করে বসবাস করে আসছিলেন বলে জানায় র‌্যাব।

সংবাদ সম্মেলনে তানভীর মাহমুদ পাশা বলেন, “গ্রেপ্তার জাকির খান একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী। সে নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী সাব্বির আলম খন্দকার হত্যা মামলার অন্যতম আসামি। এক সময়ের এই শীর্ষ সন্ত্রাসী ও একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী আন্ডারওয়ার্ল্ডের গডফাদার এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আলোচিত নাম জাকির খান।”

“তার নামে চারটি হত্যা মামলাসহ অসংখ্য মামলা রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে সেসব মামলায় জেলও খেটেছেন তিনি। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তিনি আরও দুর্ধর্ষ হয়ে ওঠেন। নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ এলাকায় বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী ও মাদকের সা¤্রাজ্য গড়ে তোলেন জাকির খান। দেওভোগ এলাকার অপর শীর্ষ সন্ত্রাসী দয়াল মাসুদকে শহরের সোনার বাংলা মার্কেটের পেছনে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে শহরের ত্রাস হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন।”

২০০৩ সালে বিএনপি চেয়ারপারসনের বহিষ্কৃত উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের ছোটভাই ব্যবসায়ী নেতা সাব্বির আলম খুন হন। সাব্বির আলম হত্যা মামলায় আসামি করা হয় জাকির খানকে।

এই হত্যাকান্ডের পরে জাকির দেশ ছাড়েন এবং থাইল্যান্ডে পাড়ি জমান বলে র‌্যাবের কাছে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে বলে জানান র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক। তিনি বলেন, “থাইল্যান্ডে পলাতক থাকা অবস্থাতেই জাকির খানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলায় আদালত সাজা প্রদান করেন। এরপর থেকে তিনি আর দেশে ফেরেননি। আসামির ভাষ্য অনুযায়ী, প্রায় একবছর আগে তিনি বাংলাদেশে আসেন। প্রায় একবছর যাবৎ তিনি বাংলাদেশে আছেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি চালিয়ে ডিএমপির ভাটারা থানার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি ফ্ল্যাট থেকে অস্ত্রসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।”

“ম্যাগাজিনসহ বিদেশী অস্ত্রটির কোন লাইসেন্স নেই বলে আসামি জিজ্ঞাসাবাদে আমাদের জানিয়েছে।”

র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, আসামি জাকির খানের বিরুদ্ধে ১৯৯৪ সালে সন্ত্রাসমূলক অপরাধ দমন বিশেষ আইনে মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় জাকির খানের ১৭ বছরের সাজা হয়। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতে তার সাজা কমে ৮ বছর হলেও তিনি গ্রেপ্তার এড়াতে দেশে ও বিদেশে প্রায় ২১ বছর পলাতক ছিলেন। মূলত ২০০৩ সালে সাব্বির আলম হত্যা মামলায় আসামী হলে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। তিনি দীর্ঘ দিন থাইল্যান্ডে আত্মগোপনে ছিলেন এবং স¤প্রতি ভারত হয়ে তিনি বাংলাদেশে আসেন। এরপর থেকে তিনি পরিচয় গোপন করে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় সপরিবারে বসবাস করছিলেন।”

গ্রেপ্তার জাকির খানের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন বলে জানান তানভীর মাহমুদ।

স্থানীয় রাজনীতিক সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ছিলেন জাকির খান। এই শহরের বেশ আলোচিত ছাত্রদলের নেতা হিসেবে পরিচিতি পেলেও জাকির খানের রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশ নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের প্রয়াত সাংসদ ও জাতীয় পার্টির নেতা একেএম নাসিম ওসমানের হাত ধরে। ১৯৮৯ সালে জাতীয় ছাত্র সমাজে যোগ দেয় জাকির খান। তারা বাবা দৌলত খানের নারায়ণগঞ্জের তৎকালীন টানবাজার যৌনপল্লীতে কয়েকটি কুঠিবাড়ি ছিল। এক পর্যায়ে নাসিম ওসমানের সাথে বিরোধ তৈরি হলে ১৯৯৪ সালে বিএনপিতে যোগ দেয় জাকির। ওই সময়কার চিহ্নিত সন্ত্রাসী দয়াল মাসুদকে শহরে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করার পর আলোচনায় আসেন তিনি। এরপর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে বিভিন্ন মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয় জাকির খানের। কয়েক দফায় জেলও খাটেন তিনি। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর আবারও বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হন। পরে জেলা ছাত্রদলের সভাপতিও নির্বাচিত হন। ছাত্রদল নেতার চেয়ে পুরো সময়টাতে তিনি বিএনপির ক্যাডার হিসেবেই অধিক পরিচিত ছিলেন। ওই বছরের ৯ সেপ্টেম্বর জাকির খানকে শহরের ডিআইটিতে বিশাল জমায়েতে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন ২০০৩ সালে দলীয় নেতার ভাইয়ের হত্যা মামলার আসামি হয়ে ফেরার হয়ে দেশ ছাড়েন জাকির।

দেশে না থাকলেও বিশাল অনুসারী কর্মীবাহিনীর উপর নিয়ন্ত্রণ ছিল জাকির খানের। শনিবার গ্রেপ্তারের খবর পাওয়ার পর থেকে অনুসারী নেতা-কর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জাকির খানের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন৷

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়