২৯ মার্চ ২০২৪

প্রকাশিত: ১৯:৫৭, ২১ ডিসেম্বর ২০২০

আপডেট: ১৮:৫৫, ২২ ডিসেম্বর ২০২০

৩ বছর পর ৪ কাউন্সিলরসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে নিয়াজুলের মামলা

৩ বছর পর ৪ কাউন্সিলরসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে নিয়াজুলের মামলা

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জে হকার ইস্যুকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় আদালতে মামলা করেছে সাবেক যুবলীগ নেতা নিয়াজুল ইসলাম খান৷ মামলায় নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাব সভাপতি, সিটি কর্পোরেশনের (নাসিক) ৪ কাউন্সিলর, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতাসহ মোট ১৭ জনকে আসামি করা হয়েছে৷

আসামিরা অধিকাংশই নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর সমর্থক৷ এদিকে মামলার বাদী নিয়াজুল ইসলাম খান নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ একেএম শামীম ওসমানের অনুসারী৷

গত ২০ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাহমিদা খাতুনের আদালতে মামলার আবেদন করেন নিয়াজুল ইসলাম খান৷ পরে সোমবার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে একই আদালত মামলাটি গ্রহণ করে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ্ জামানকে তদন্ত করার নির্দেশ দেন৷ একই সাথে আগামী ২২ মার্চ মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন৷ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান৷

মামলায় আসামি করা হয়েছে: নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি অ্যাড. মাহবুবুর রহমান মাসুম, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক (অব্যহতিপ্রাপ্ত) জাহাঙ্গীর আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান, সিটি কর্পোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ, ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ্বাস, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কবির হোসাইন, ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হান্নান সরকার, মহানগর যুবলীগের সহসভাপতি কামরুল হুদা বাবু, সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র আইভীর ছোট ভাই আহাম্মদ আলী রেজা উজ্জ্বল, ২২ নং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম, যুবদল নেতা সরকার আলম, হাজি নেওয়াজ, সৈকত মেম্বার, মোতালিব, ফারুক, অপু, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মিনহাজুল কাদির মিমন৷

এই মামলার বাদী নিয়াজুল ইসলাম খান হকার ইস্যুকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের দিন প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন করেছিলেন৷ সে সময় গণপিটুনির শিকারও হন নিয়াজুল৷ সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের করা সিটি মেয়রের মামলার আসামিও নিয়াজুল ইসলাম খান৷

সংঘর্ষের সূত্রপাত ও মেয়র আইভীর উপর মামলা

নগরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে গত ২০১৭ সালের ২৫ ডিসেম্বর নগরীর বঙ্গবন্ধু সড়কের দুই পাশের ফুটপাত হকারমুক্ত রাখার পদক্ষেপ নেয় জেলা পুলিশ৷ সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাত নগরবাসীর হাঁটার পক্ষে অবস্থান নেন৷ হকারদের পুনর্বাসন ও বিকল্প স্থানে বসে ব্যবসার করারও প্রস্তাব দেন৷ কিন্তু নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ একেএম শামীম ওসমান হকারদের বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাতে বসানোর পক্ষে অবস্থান নেন৷ সিটি মেয়র ও সাংসদের পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে নগরীতে উত্তাপ ছড়াতে থাকে৷ যা রূপ নেয় সংঘর্ষে৷

২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি বিকেলে শহরের দুই নম্বর রেলগেইট এলাকা থেকে হেঁটে চাষাঢ়ায় আসছিলেন সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী৷ এ সময় তার সাথে কাউন্সিলর, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ গণমাধ্যমকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন৷ মেয়র আইভী ও তার সাথে থাকা লোকজন চাষাঢ়ার নূর মসজিদের বিপরীত পাশের সড়কের মেডিনোভার সামনে আসামাত্রই ইটপাটকেল দিয়ে হামলা চালায় বিক্ষুব্দ হকাররা৷ হকারদের সাথে সাংসদ শামীম ওসমানের অনুসারী আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের বিপুল সংখ্যক নেতকর্মীও হামলায় অংশ নেয়৷ এক পর্যায়ে সড়কের উপরেই পড়ে যান সেলিনা হায়াৎ আইভী৷ অনুসারী নেতাকর্মী ও সমর্থকদের তৈরি মানবঢালের কারণে ওই হামলায় গুরুতর আহত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পান সিটি মেয়র আইভী৷ তবে হামলায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন সাংবাদিক, রাজনৈতিক কর্মীসহ শতাধিক ব্যক্তি৷

হামলার এক পর্যায়ে সাবেক যুবলীগ নেতা নিয়াজুল ইসলাম খান (সদ্য দায়ের করা মামলার বাদী) চাষাঢ়ার সায়েম প্লাজার সামনে প্রকাশ্যে পিস্তল উঁচিয়ে ধরেন৷ পরে সেখানে গণপিটুনির শিকার হন তিনি৷

হকার ইস্যুকে কেন্দ্র করে এই হামলার ঘটনায় মেয়র আইভীর পক্ষে সিটি কর্পোরেশনের আইন কর্মকর্তা জিএম সাত্তার বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় নিয়াজুল ইসলাম খান, শাহ্ নিজামসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন৷ মেয়র আইভীকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ করেন জিএম সাত্তার৷ পাল্টা একটি অভিযোগ দায়ের করেন নিয়াজুল ইসলাম খানের ভাই রহমান ইসলাম খান ওরফে রিপন খান৷ তিনি নিয়াজুলকে মারধর ও পিস্তল ছিনতাইয়ের অভিযোগ করেন মেয়র আইভীর অনুসারী ১৭ জনের বিরুদ্ধে৷ যদিও দু’টি অভিযোগই সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হিসেবে গ্রহণ করে পুলিশ৷

তবে গত বছরের ৪ ডিসেম্বর এক আবেদনের প্রেক্ষিতে সিটি কর্পোরেশনের অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন আদালত৷ সিটি কর্পোরেশনের ওই মামলায় মামলায় ঘটনার দিন অস্ত্র প্রদর্শনকারী নিয়াজুল ইসলাম খান, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সাজনু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জুয়েল হোসেন, যুবলীগ নেতা জানে আলম বিপ্লব, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সুজন, যুবলীগ নেতা নাসির উদ্দিন, যুবলীগ নেতা চঞ্চল মাহমুদকে আসামি করা হয়৷ ঘটনার ২২ মাস ১৮ দিন পর গৃহীত এই মামলায় অজ্ঞাত আরও ৯০০ থেকে ১০০০ জনকে আসামি করা হয়৷ এদিকে ঘটনার প্রায় তিন বছর পর পাল্টা মামলা করলেন অস্ত্র প্রদর্শনকারী নিয়াজুল ইসলাম খান৷

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি অ্যাড. মাহবুবুর রহমান মাসুম প্রেস নারায়ণগঞ্জকে বলেন, ‘ভাগ্যের নির্মম পরিহাস৷ শামীম ওসমান এরকমই খেলোয়াড়৷ মানুষের কাছে বারবার মাফ চাইলেও তার ভেতরের হিংস্রতা এখনও যায় নাই৷ হামলায় আঘাতপ্রাপ্ত হলাম আমরা৷ প্রেস ক্লাবের সেক্রেটারি সবুজের জীবন সংকট তৈরি হলো৷ অথচ এক সন্ত্রাসীর মামলায় আমাদেরই আসামি করা হলো৷ এই মামলার জন্য শামীম ওসমানকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ৷ পৃথিবীর সবাই মরবে শামীম ওসমান মরবে না৷’

জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান প্রেস নারায়ণগঞ্জকে বলেন, ‘যে নিয়াজুল সেদিন অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করতে উধ্যত হয়েছিল সেই আবার আদালতে মামলা করেছেন৷ আসন্ন সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই কার্যক্রমের পেছনে কারা আছেন জেলাবাসী তা জানে৷ তারপরও বলবো, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল৷ সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে৷’

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়