২৯ মার্চ ২০২৪

প্রকাশিত: ১৭:২৪, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

আপডেট: ১৭:৪৯, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

৩৪ বছরেও আমার নেতা আমাকে অবিশ্বাস করেনি: শাহ নিজাম

৩৪ বছরেও আমার নেতা আমাকে অবিশ্বাস করেনি: শাহ নিজাম

আসিফ হোসাইন (প্রেস নারায়ণগঞ্জ): নারায়ণগঞ্জের সমসাময়িক সময়ে যুব রাজনীতিতে আলোচিত শাহ নিজাম। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ধাপ পেরিয়ে বতর্মানে মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাক। নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী রাজনৈতিক এমপি শামীম ওসমানের অত্যন্ত আস্তাভাজন এই নেতা নারায়ণগঞ্জে সমসাময়িক রাজনীতি, শামীম ওসমান এবং নিজের ভালো ও খারাপ দিকসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন ‘প্রেস নারায়ণগঞ্জ’ এর সাথে। তার সাক্ষাতকারটি প্রেস নারায়ণগঞ্জের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: আপনি তো প্রথমে ছাত্র রাজনীতি দিয়েই রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন? ছাত্রলীগে যুক্ত হওয়ার গল্পটা আপনার মুখ থেকেই শুনি।

শাহ নিজাম: আসলে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হতাম না। কারণ রাজনীতি করবো সেটাই কখনো ভাবিনি। আমি ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ার দিকে ইন্টারেষ্ট ছিলাম। আমার বাবার অনেক স্বপ্ন ছিল যে, আমি লেখাপড়া করে ভাল কিছু একটা হবো। আমি মোটামুটি ভাল ছাত্র ছিলাম। আমার বন্ধু বান্ধব (১০,১২ জন) যারা একসাথে ছিলাম তারা কেউ বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার, আর্মি, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার। আমি ছোটবেলা থেকেই আব্বার মুখে বঙ্গবন্ধুর গল্প শুনি। আমার আব্বা ঢাকা মুসলিম হাই স্কুলের ছাত্র ছিলেন। এবং পরে ঢাকা কলেজের ছাত্র ছিলেন। তো সেই সুবাদে আমার আব্বার সাথে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বেশ কয়েকবার দেখা হয়। এবং বঙ্গবন্ধুর সাথে যারা থাকতেন তাদের সাথে আব্বার একটা সখ্যতা ছিল। যদিও আগে মুন্সিগঞ্জ থেকে লেখাপড়া করেছি তবুও আমাদের পারিবারিক ইতিহাস ছিল। আমরা নারায়ণগঞ্জে প্রায় ১৫০ বছরের আধিবাসী। শীতলক্ষ্যায় আমাদের নিজস্ব বাড়ি, পাটের গদি, গুদাম ব্যবসা বানিজ্য ছিল। তো নারায়ণগঞ্জে আসার পরে সব থেকে বেশি ইমপ্রেসড  হয়েছি আমার প্রান প্রিয় নেতা এ.কে.এম শামীম ওসমানকে দেখে। উনাকে দেখতাম, উনার ভিতরে মানুষকে আকৃষ্ট করার কেমন যেন একটা পাওয়ার ছিল। মানুষকে কিভাবে যেন আকৃষ্ট করে তুলতে পারতো। যার দিকে তাকালে মনে হতো তিনি হ্যামিলিয়নের বাঁশি ওয়ালা।

নারায়ণগঞ্জে এসে আমি বার একাডেমিতে ভর্তি হয়েছি। আসলে অত্যাচারে অত্যাচারে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়েছি, এটাও বলা যায়। আমার কিছু চাষাড়ার বন্ধু বান্ধব যেমন, হেলাল, কামাল, রাজ, শিপন, লিটন, কাউসার এদের সাথে একটা সম্পৃক্ততা হয়। এদের বন্ধুত্বের কারণে আমি স্কুলে যেতে পারতাম না। কোচিং এ যেতে পারতাম না। তো একবার পড়তে গেলাম, যাওয়ার পর পরেই আমার এক বন্ধু শাহ আলম এসে বললো, -বন্ধু তাড়াতাড়ি পালাও। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি হয়েছে? ও বললো, মিশন পাড়ার সব ছেলে পেলে আসছে তোমাকে মারার জন্য। হাতে হকিস্টিক, রাম দাঁ নিয়ে। আমি বললাম, আমি কেন, আমাকে কেন মারবে? ও বললো, তুমি চাষাড়ার ছেলেদের সাথে চলো এটাই তোমার অপরাধ। আমার বন্ধু শাহ আলম পিছন দিক দিয়ে আমাকে পালাতে সাহায্য করলো। তারপর থেকে আমার স্কুলে যাওয়া বন্ধ। নিজেই নিজেকে ফাঁকি দেয়া শুরু করলাম। আমার বন্ধুরা কেউ কেউ হাই স্কুলের ছাত্র ছিল। ওরা টিফিনের টাকা নিয়ে যেতে পারতো না। দেওভোগের কিছু ছেলে পেলে ছিল ওদের কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যেত। ওরা প্যান্টের নিচের আন্ডারওয়ারে পর্যন্ত টাকা রাখতে পারতো না। তো এই অত্যাচারে অত্যাচারে আমরা প্রতিবাদ করলাম। এত অত্যাচার, অন্যায় তো মানা যায় না। একজন ছাত্র এবং একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের মনে হয়েছে প্রতিবাদ করা উচিত। তো সেই থেকেই আমাদের প্রতিবাদ করা। এই প্রতিবাদ থেকেই শত্রুতা। আমার মনে আছে, আমার কোন কোন বন্ধু মেট্রিক পরীক্ষার শেষ দিন পরীক্ষা শেষে কোন রকমে দেয়াল টপকে বের হয়েছে। এট্যাক করেছিল ওরা। এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে আমরা একটি ইউনিটিতে আসলাম। কমিটমেন্টে আসলাম। আমরা খেলাধুলায় অনেক ভাল ছিলাম। সবাই খেলাধুলা করতাম। একদিন খেলাধুলা শেষে বাসায় ফিরছি আমার এক বন্ধু কালামের কাছে এসে কিছু ছেলেপেলে বলছে, তুই ৫০০ টাকা দিবি। কালাম বললো, কেন? তোর কবুতর আমার কবুতর নিয়ে গেছে তাই। তো আমি এটার প্রতিবাদ করলাম। এ জন্য ওরা ক্ষিপ্ত হয়ে গেল। এই ছেলে কে? মুন্সিগঞ্জ থেকে আসছে। ওরে কেটে নদীতে ভাসায় দিবো। তো আমি যখন বাসায় গেলাম আমার বন্ধু হেলাল ওর ছোট ভাইকে পাঠালো যে নিজামকে বাসা থেকে বের হতে মানা কর। ও বের হলে ওর উপর এট্যাক হবে। তো আমি নিজের আত্মরক্ষাতে কাটা কম্পাস এগুলো নিয়ে বের হয়ে হেলালের বাসায় গেলাম। হেলাল আমাকে দেখে চোখ বড় করে ফেললো। বললো, আজাদ তোর কাছে যায় নি? কিছু বলে নি? আমি বললাম, আমরা ওদের ভয়ে ঘরে বসে থাকলে ওরা আমাদের ঘরেই বসিয়ে রাখবে। আমরা তো অন্যায় কিছু করিনি। তারপর বেশ কিছু বন্ধু মিলে বের হলাম। ওরা কিছু করতে পারলো না। এরকম করতে করতেই অন্যায় সহ্য করতে করতেই আসলে আমরা প্রতিবাদী হয়েছিলাম। এসএসসির পরে তোলারামে ভর্তি হলাম। আমাদের নিজের চোখে দেখা, কিছু কিছু ছেলে পেলে মেয়েদেরকে পন্য, ভোগের বস্তু মনে করতো। আমাদের বোনদেরকে প্রচন্ড ডিষ্টার্ব করতো। আমরা এটার প্রতিবাদ করলাম। তাই আমাদের সাথে ওদের সংঘর্ষ হলো। ওরা পারেনি আমাদের সাথে কিছু করতে। কারণ আমরা সত্যের পথে ছিলাম। ন্যায়ের পথে ছিলাম। যার কারণে আমরা কলেজ সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হই। আসলে এভাবে এভাবেই ছাত্র রাজনীতিতে আসা। আমার ফেমিলি অনেক আগে থেকেই রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। আমার বাবা ৭বার চেয়ারম্যান হয়েছেন। উনাকে মানুষ জোর করে দাঁড় করাতো। কোন প্রতিদ্বন্দ্বি ছিল না। তাছাড়া আমার বংশে প্রায় ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা ছিল। তাদের মুখে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস জেনেছি।

রাজনীতিতে সরাসরি সম্পৃক্ততা আমার প্রান প্রিয় নেতা শামীম ওসমানের মাধ্যমে। উনাকে আমি যতই দেখতাম ততই অভিভূত হতাম। আমার এই ৩৪ বছরের রাজনীতিতে আমি কখনো দেখিনি তিনি কোন ধ্বংসাত্মক কাজে নির্দেশ দিয়েছেন কোন খারাপ কাজে হুকুম দিয়েছেন, কাউকে মারার জন্য হুকুম দিয়েছেন। উনি বলেছেন, তোমরা লেখাপড়া করো। বাকীটা আমি দেখবো। উনি সমস্ত দায়ভার উনি নিজের ঘাড়ে নিতেন। তো এভাবে দেখতে দেখতেই উনার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, ভালোবাসা যেটাই বলা হোক হয়ে গেছে খুব গভীর ভাবে। আমি যখন ক্লাস টেনে পড়ি তখনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নারায়নগঞ্জ জেলার সদস্য বানানো হলো। বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ মেম্বার। এর পরবর্তীতে আমাকে দেয়া হয় সমাজ কল্যান বিষয়ক সম্পাদক। তার পরবর্তীতে আমি নারায়ণগঞ্জ সিটি ছাত্রলীগের সেক্রেটারি হলাম। এভাবেই ছাত্র রাজনীতিটা শুরু।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: পরিবার থেকে কোন বাঁধা আসেনি?

শাহ নিজাম: লেখাপড়ার দিক থেকে মাঝে মাঝে বাঁধা দিয়েছে। বাবা বলতেন, তুমি যদি দলকে ভালবাসো, বঙ্গবন্ধুকে ভালবাসো তার আগে তোমার ভাল ছাত্র হতে হবে। এই কথাটা আমার বাবাও বলতেন, শামীম ওসমানও বলতেন। ভাল ছাত্র না হলে, দেশের একটা পর্যায় না গেলে দেশের সেবা করা যাবে না।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: যুবলীগে কিভাবে আসলেন?

শাহ নিজাম: ২০০১ এর পরে ষড়যন্ত্রমূলক নির্বাচনে যখন আওয়ামীলীগকে জোর করে পরাজিত করা হলো তখন সার্বিক পরিবেশের কথা চিন্তা করে দেশ ছাড়তে বাধ্য হলাম। প্রায় ১৩ মাস দেশের বাহিরে ছিলাম। পরবর্তীতে এসে আবার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হলাম। তখন আমাকে সেন্ট্রাল থেকে বলা হলো ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট হও তুমি। কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে দেখলাম তখন বিএনপি জামাত টার্গেট করে করে দলের নেতা কর্মীদের হত্যা করছে। নারায়ণগঞ্জের আমরা কয়েকজনও ছিলাম টার্গেটে। কোন মামলা ছিল না। অপরাধ একটাই শামীম ওসমানের লোক। শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জের পবিত্র মাটিতে জামাত শিবিরকে নিষিদ্ধ করেছিল। তাই তার লোকদের উপরই বেশি ক্ষুব্ধ ছিল। আমাদের অনেক নেতাকর্মী হত্যা করলো। এই অবস্থায় বেঁচে থাকাটা বেশি গুরুত্বের মনে হয়েছিল। চিন্তা করেছিলাম যে আমি বেঁচে থাকলে নেতৃত্ব দিতে পারবো কোন একসময়। মরে গেলে তো আর পারবো না। তো বেঁচে থাকা টা অনেক বেশি ইম্পোটেন্ট। তো আমি ভাবলাম, ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট হওয়ার চেয়ে বানানোটা বেশি ইম্পোটটেন্ট। আমি আমার নেতাকে বললাম, ভাই আমি নেতা বানাবো। তো তিনি বললেন, কাকে দিবা? আমি বললাম, নিপুকে। তিনি বললেন, ও পারবে? আমি বললাম, পিছন থেকে নেতৃত্ব দিবো আমি। ঢাকার কোন প্রোগ্রামে আমরা প্রায় ৮-১০ হাজার করে কর্মী জমায়েত হতাম। আমরা নারায়ণগঞ্জ ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ঢাকার সভায় আন্দোলন করতাম এমনকি আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা প্রায় চারবার আমাদের মিছিলে আটকে পড়েন। এতো মানুষ ছিল। যার পরবর্তীতে নেত্রী বলেছিলেন আমি পল্টনে যেতাম যখন জানতাম, শামীম ওসমানের মিছিল এসেছে। আমি তখন ভেবে নিতাম পল্টনে আর জায়গা নাই। এটা আমার নেতার সম্মান বৃদ্ধি, নেত্রীর কাছে আমার নেতার অবস্থান এগুলোর জন্য আমি নিজেকে ধন্য মনে করি। তো এর কিছুদিন পরেই আমি যুবলীগে যোগ দেই। এটা সম্ভবত ২০০৬ এ।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: এখন তো আপনি মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক, তার মানে মূল জায়গাতে চলে এসেছেন। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামীলীগ। তিনধাপের রাজনীতিতে কোন জায়গায় আপনার ভালো লেগেছে। ছাত্রলীগে, যুবলীগ না আওয়ামীলীগে?

শাহ নিজাম: ছাত্রলীগে।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: কত বছর হলো আপনার রাজনীতির বয়স?

শাহ নিজাম: ৩৪ বছর।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: দীর্ঘ এই সময়ে রাজনীতি থেকে আপনার চাওয়া পাওয়ার কোন হিসেব আছে?

শাহ নিজাম: না। আমি অনেক কৃতজ্ঞ। মানুষ আমাকে ভালবাসে। আমার নেতা আমাকে ভালবাসে। আমার নেতা আমাকে ৩৪ বছরে এক মিনিটের জন্য আমাকে অবিশ্বাস করেনি এটাই আমার চাওয়া পাওয়া।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কিছু বলেন?

শাহ নিজাম: আমার বাবার স্বপ্ন ছিল আমি ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হবো। সেটা আমি হতে পারে নি। আমরা তিন ভাই পাঁচ বোন। ভাইদের মধ্যে আমি সবার ছোট। আমার ছোট তিন বোন। আমার এক ছেলে। নাম জাওয়াদ। আমার স্ত্রীর নাম তুলি। সে অনেক মেধাবী। সে ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে জার্নালিজম নিয়ে অনার্স মাস্টার্স করেছে। বর্তমানে সে একজন সংবাদ উপস্থাপিকা।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: জনপ্রতিনিধি হতে ইচ্ছে করে না? কোন মাধ্যমে প্রতিনিধিত্ব করার ইচ্ছে?

শাহ নিজাম: শামীম ওসমানের কর্মী হতে পারছি এটাই অনেক বড়। আমি উনার বিশ্বাস, ভালবাসা নিয়ে থাকতে চাই সবসময়।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: আপনার সময়ের ছাত্রলীগ আর এখনকার ছাত্রলীগের মধ্যে কোন প্রার্থক্য খুঁজে পান কিনা?

শাহ নিজাম: সময়ের সাথে সাথে মানুষের চাহিদার পরিবর্তন ঘটে। আগে ছিল এনালগ আর এখন ডিজিটাল। এটাই পার্থক্য। সবকিছু এখন সহজ হয়ে গেছে।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: বর্তমান ছাত্রলীগের জন্য আপনার কোন ম্যাসেজ থাকবে কি না?

শাহ নিজাম: অবশ্যই। বার্তা একটাই যে ছাত্রলীগের যারা নেতা তাদেরকে অবশ্যই অবশই ভাল ছাত্র হতে হবে। মেধাবী হতে হবে, লেখাপড়ায় ভাল করতে হবে। এবং বাংলাদেশের কোন দপ্তরে এসে কাজ করে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পূর্ণ করতে হবে।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: আগামীদিনে নারায়ণগঞ্জে কেমন রাজনীতি দেখার ইচ্ছে?

শাহ নিজাম: জনাব এ.কে.এম শামীম ওসমানের মতো। শামীম ওসমান যেভাবে কাজ করছেন, যেমন মাদক মুক্ত, সন্ত্রাস মুক্ত এমন রাজনীতি দেখার ইচ্ছে সবসময়ের।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ:। নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নে জনপ্রতিনিধি এবং সরকার দলীয় নেতাদের ভুমিকা কেমন হওয়া উচিৎ বলে মনে করেন?

শাহ নিজাম: শামীম ওসমানের মতো।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: আচ্ছা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে, এ নির্বাচন নিয়ে আপনার নেতা শামীম ওসমান দলীয় মনোনয়ন চাইবেন, অনেক জেলায় সম্ভাব্য প্রার্থীরা কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। আপনারা কিভাবে করছেন? বা নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়ে শামীম ওসমানের কোন দিক নির্দেশনা আপনাদের প্রতি আছে কি না।

শাহ নিজাম: ইতিমধ্যে শামীম ওসমান নমিনিশন পেয়েই গেছেন। আর আমরা কাজ করা শুরু করেছি যেদিন শামীম ওসমান ২০১৪ সালে এমপি নির্বাচিত হলেন সেদিন থেকেই। কারণ জনগনের কাছে যাওয়ার যে রাস্তা সেটা হলো উন্নয়ন। এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখা। মানুষের চাহিদাগুলো পূরন করা। আমরা ২০১৪ সাল থেকেই সেই কাজ শুরু করে দিয়েছি।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: ৯ সেপ্টেম্বর রোবার মাননীয় নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান পাগলায় একটি অনুষ্ঠানে আগামী নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ- ৪ আসনে শামীম ওসমানই দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে ঘোষনা দিয়েছেন। কিন্তু একদিন পর ঢাকা বিভাগীয় আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক দায়িত্ব প্রাপ্ত নওফেল নাসিক কার্যালয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের জানিয়েছেন শাজাহান খান এমন কথা বলে দলের শৃংখলা ভঙ্গ করেছেন। এ বিষয়টিতে কিভাবে দেখছেন?

শাহ নিজাম: শাজাহান খান অনেক পুরনো দলের নেতা। শাজাহান খান জানেন শামীম ওসমান কি! কারন অনেক আন্দোলন সংগ্রামে শাজাহান খান ও শামীম ওসমান সম্পৃক্ত ছিলেন। তো নেত্রীর কাছে শামীম ওসমানের কি অবস্থান, নেত্রীর কাছে শামীম ওসমানের কতটুকু গ্রহণ যোগ্যতা সেটা শাজাহান খান ভাল করেই জানেন। এবং তিনি এও জানেন যে, নারায়ণগঞ্জে রাজনীতিতে শামীম ওসমানের বিকল্প নাই। তো ওই হিসেবে একজন সিনিয়র নেতা হিসেবে শাজাহান খান এই কথা বলতেই পারেন। এটা সাধারন মানুষের হৃদয়ের ভাষা অনুধাবন করে শাজাহান খান এই কথাটা বলেছেন। দলকে আরো বেশি চাঙ্গা করার জন্য আরো বেশি উচ্ছসিত করার জন্য। তো সে ক্ষেত্রে আমি মনে করি নওফেল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। বয়সের দিক থেকে অত্যন্ত তরুণ। হয়তো বা ওই রকম ম্যাচুরিটি তার আসে নি। শিক্ষা অনেক বড়। রাজনীতির দিক দিয়ে ম্যাচুরিটি হলো, জনগনের ভাষা বুঝতে হবে, সাধারন মানুষের মন বুঝতে হবে। তো নওফেল সাহেব এটা অন্যভাবে বলতে পারতো। গনমাধ্যমে যেভাবে লেখা হয়েছে যদি নওফেল এভাবে বলে থাকে তাহলে আমার মনে হয় না যে এটা খুব বুদ্ধিমানের কাজ করছে। কারণ এতে করে দল বিভ্রান্ত হয়েছে। আগামী নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেটা নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক চিন্তিত। কারণ আমাদের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আগে গনভবনের একটা মিটিং এ (আমি ছিলাম ওই মিটিং এ) মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলছিলেন, দুইবার দল ক্ষমতায় আসছে। তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসা কিন্তু এতো সহজ কাজ নয়। সেখান থেকে নেত্রীর চিন্তা দলকে ক্ষমতায় আনার জন্য। দলকে এক করে রাখার নেত্রীর যে প্রয়াস আর এখানে দুইটা বক্তব্যতে দলকে বিভ্রান্ততে ফেলা এটা ঠিক কাজ নয়। আমি বলি এটা ভাল কাজ হয় নি। সে বলতে পারতো, শাজাহান খান যে বক্তব্য দিয়েছেন ওটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আর এ সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ সম্পর্কে ডিশিসন দিবেন।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: এবার ভিন্ন প্রশ্নে আসি, শুরু থেকে এ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমানের সাথেই আছেন, খুব কাছ থেকে তার রাজনীতি দেখেছেন, ১৯৯৬-২০০১ সালের শামীম ওসমান আর ২০১৪-২০১৮ এর শামীম ওসমানের মধ্যে কোন প্রার্থক্য আছে? থাকলে কি?

শাহ নিজাম: শামীম ওসমানের আদর্শ, নীতি এটার কোন প্রার্থক্য নেই। একটা সময় ৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত মানুষ যেভাবে শামীম ওসমানকে জানতেন বর্তমানে জানাটা হয়তো বা ভিন্ন। আসলে শামীম ওসমানের কোন পরিবর্তন হয়েছে এমনটা আমি মনে করি না। তার যেই আদর্শ, নীতি, সৎ চরিত্র, জনগনের প্রতি ভালবাসা সবটাই তার মধ্যে সবসময় থাকে।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: আচ্ছা আগামী নির্বাচনে শামীম ওসমান যদি মনোনয়ন পেয়েই যান তাহলে কোন বিষয় বা কাজের জন্য মানুষ তাকে ভোট দিবে বলে মনে করেন?

শাহ নিজাম: শামীম ওসমান আদর্শের দিক দিয়ে একজন মহান ব্যক্তি। কর্মের দিক দিয়ে উনার কোন বিকল্প নাই। উন্নয়নের রুপকার হিসেবে উনি খ্যাত বর্তমান প্রজন্মে। আধুনিক নারায়ণগঞ্জের রুপকার সেটা নারায়ণগঞ্জের মানুষের কাছে প্রতিষ্ঠিত। জামাত শিবিরের গোলাম আজমকে নারায়ণগঞ্জের মাটিতে নিষিদ্ধ, এবং পতিতাপল্লী উচ্ছেদ এবং পূনর্বাসন এগুলো ছিল শামীম ওসমানের চ্যালেঞ্জ স্বরুপ। এগুলো মানুষের হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে হবে, কত বড় কাজ করেছেন তিনি। এগুলো ভুলে গেলে চলবে না। কতবড় কাজ করেছে সেগুলো জনগনের ভাবতে হবে। এই নারায়নগঞ্জে আওয়ামীলীগের জন্ম হয়েছে। অনেক আন্দোলন সংগ্রামের উৎপত্তিস্থল ছিল নারায়ণগঞ্জ। যখন আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসে তখন নারায়ণগঞ্জ থেকে কোন মন্ত্রীত্ব পায় না। এটা আমাদের ঐক্যবদ্ধ না থাকার কারনে। অথচ বিএনপি ক্ষমতায় আসলে ২,৩ টা মন্ত্রীত্ব নারায়ণগঞ্জ থেকে পেয়ে যায়। এটা আমাদের ব্যর্থতা, দুর্ভাগ্য। তো শামীম ওসমান, খান শাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম, লিঙ্ক রোড, পতিতাপল্লী উচ্ছেদ ও পূনর্বাসন এগুলো অবশ্যই আমাদের বড় অর্জন। এখন বর্তমানে আরেকটি বড় অর্জন হলো, আমাদের প্রায় ৪০ লক্ষ লোক পানিবন্ধি ছিল। মানুষের পানির সাথে বসবাস ছিল। সাপ ও মানুষের একসাথে বসবাস। ঘরের মধ্যে ইট দিয়ে খাট উঁচু করে মানুষ থাকতো। বাচ্চারা স্কুল কলেজে যেতে পারতো না। কর্মস্থলে মহিলারা, পুরুষেরা যেতে পারতো না। গেলে চর্মরোগে আক্রান্ত হতো। এবং গত কোরবানীর ঈদে আমার কাছে মানুষ আসছে যে কোরবানী দিবে কিন্তু শুকনো জায়গা নাই। আজকে যদি শামীম ওসমান ডিএনডি প্রকল্পের মধ্য দিয়ে ৫৫৭ কোটি টাকার যে কাজটা উনি করেছেন এটা অন্য কারো পক্ষে করা সম্ভব ছিল না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে শামীম ওসমানকে ভালবাসেন সেটা কিন্তু তার একটা দৃষ্টান্ত। মানুষের কাছে যেতে আমাদের আর কিছু লাগে না। যদি মানুষ অন্তত কৃতজ্ঞতা করার সুযোগ পান। আমার মনে হয় শামীম ওসমান যে কাজ করেছেন, যে উন্নয়ন করেছেন, সন্ত্রাসমুক্ত, মাদকমুক্ত সমাজ গড়েছেন তার প্রতি কৃতজ্ঞতা রেখেই জনগন আগামী নির্বাচনে শামীম ওসমানকে ভোত দিয়ে জয়যুক্ত করবেন।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: অন্য একটি প্রসঙ্গে আসি। গণমাধ্যমে এসেছে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি হকার ইস্যু নিয়ে সৃষ্ট সংঘাতে আপনি অস্ত্র প্রদর্শন করেছেন। কেন করলেন? অস্ত্রটা কি বৈধ ছিল?

শাহ নিজাম: ব্যাপারটা হচ্ছে এরকম, মেয়র আইভি প্রেসক্লাবে আসবে। কিন্তু প্রেসক্লাবে এসে যেন কোন সংঘাত সৃষ্টি না হয় এ জন্য আমাদের বলেছেন যে শহীদ মিনারে অবস্থান নিতে। যেন সংঘাত না হয়। যেন বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা না ঘটে। তার মধ্যে হাফিজ ভাই, গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলনের যে নেতৃত্ব দেন। ঠিক কি কারণে সেদিন প্রেসক্লাবের সামনে তিনি একটি সমাবেশ করেলেন এটা কিন্তু প্রশ্নবিদ্ধ। যার জন্য মেয়র আইভি রাস্তা পরিবর্তন করে আসছে। আর আইভি আপা উনি হকার উচ্ছেদ করবেন হকারকে মেরে নয়, বুঝিয়ে। কারণ উনি অনেক জ্ঞানী লোক মানুষ বলে। অন্তত জ্ঞানী লোক হিসেবে একজন ভাল নেত্রী হিসেবে উনার তো এই কাজটা করা উচিত হয় নি। এটা দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। কারণ উনারা তো মানুষ। তো যার পরবর্তীতে আমাদের একজন বড় ভাই তাকে কিন্তু মারধর করা হয়েছে। তিনবার মারধর করার পরে সে যখন তার লাইসেন্স করা অস্ত্র বের করে তখন কিন্তু তারা অস্ত্র কেড়ে নেয়।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: কারা নেয়?

শাহ নিজাম: আইভি আপার সাথে থাকা লোকজন, বিএনপি জামাতের লোকজন। ওইখান থেকে গুলিও করা হয় আমাদের উপর। আমার বন্ধু মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তার উপরও আক্রমন করা হয়, সায়াম প্লাজার নিচে। যখন আক্রমন করা হয় তখন আমাদের মনে হয়েছে আইভি আপাকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। কারণ এখানে তৃতীয় পক্ষ সুযোগ নিবে। ওইদিনের ঘটনায় যদি আল্লাহ না করুক আইভি আপার উপরে যদি কিছু হতো তাহলে কি হতো? উনাকে আল্লাহ ১০০ বছর বাঁচিয়ে রাখুক, সে জায়গায় ষড়যন্ত্রে পড়ে যদি উনার কোন দূর্ঘটনা ঘটতো তাহলে ওই দূর্ঘটনার কারণে আইভি আপা শেষ। আর শামীম ওসমান বেঁচে থাকা অবস্থায়ও শেষ। সুবিধাবাদীরা সুবিধাটা নিয়ে নিতো। ৩৪ বছর ধরে অভিজ্ঞতা নিয়ে রাজনীতি করে এই জ্ঞানটুকু আমার হয়েছে। এখন ওই জায়গাটায় আমার দায়িত্ব ছিল আইভি আপাকে বাঁচানোটা। লোহা কাটতে হলে লোহাই লাগে। ঠিক আছে? তুলা দিয়ে লোহা কাটা যায় না। আর অস্ত্রটা ১০০% বৈধ ছিল। সেখানে অস্ত্র দেখানো হয়েছে যেন আমাদের লোকজন ওইখানে দৌড়ে না যায় কিংবা দুর্ঘটনা ঘটার যেন কোন সুযোগ তৈরি না হয়। কিন্তু অস্ত্র থেকে কোন গুলি করা হয় নি।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: শামীম ওসমানের ভালো দিক আর মন্দ দিক কি? দুই একটা বলেন।

শাহ নিজাম: উনার সব থেকে মন্দ দিক হচ্ছে, উনি খুব ইমোশনাল। আবেগ প্রবন, যথেষ্ট আবেগ প্রবন। বঙ্গবন্ধুর মতো। আর ভাল দিক বলার মতো মানে শেষ করার মতো নেই। একটা নেতার সবথেকে ভাল গুন কি হতে পারে? তার বাবা মাকে প্রচন্ড রকমের ভালবাসা। এলাকার মুরুব্বিদের শ্রদ্ধা করা। আসলে উনার কোন খারাপ গুন নাই। আমাকে যদি কেউ প্রশ্ন করে শামীম ওসমান ও আপনার মধ্যে প্রার্থক্য কি? তাহলে আমি বলবো, ১০০ ভাগ মাইনাস ১ ভাগ। কারণ এই মেধার মধ্যে চারিত্রিক কোন বদঅভ্যাস নাই যার কারণে আমরা যারা উনার সাথে রাজনীতি করি আমরা বেশি নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করি। আমি একজন মুসলমান হিসেবে এটা বলতে পারি, আমি আল্লাহ ও রাসুলকে নিয়ে যতটা ভাবতাম শামীম ওসমানের সাথে রাজনীতি করার পরে আমি আরো বেশি জানতে পেরেছি। আরো ভাবতে শিখেয়িছে। প্রত্যেকেই তার বাবা মাকে সম্মান করেন কিন্তু শামীম ওসমানের কাছ থেকে আমরা প্রপারলি জানতে পেরেছি আসলে মা বাবাকে কিভাবে শ্রদ্ধা করতে হয়। একটা লোক যখন মা বাবাকে সম্মান করা শিখায়, নবী রাসুলকে চিনতে শিখায় নিশ্চয়ই তিনি মহৎ ব্যক্তি।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: এবার আপনার ভালো ও মন্দ দুই দিক বলেন।

শাহ নিজাম: আমার সম্বন্ধে ভাল কি সেটা তো আমি বলতে পারবো না। আমার ভালোটা বিবেচনা করবে জনগন, সাধারণ মানুষ, আমার বন্ধুবান্ধব, আমার সহকর্মী, আমার পরিচিত লোকেরা। আর মন্দ দিকটা হচ্ছে, আমি এই রাজনীতির কারণে আমার ফ্যামিলিকে সময় দিতে পারি না।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ

শাহ নিজাম: আপনাকেও ধন্যবাদ। 

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়