২৮ মার্চ ২০২৪

প্রকাশিত: ২২:১৯, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

আপডেট: ২২:২৪, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

৪৮ ঘন্টা যাবত গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রেখেছে তিতাস

৪৮ ঘন্টা যাবত গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রেখেছে তিতাস

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: বিস্ফোরণ হয়েছে তল্লার বাইতুস সালাত মসজিদে। ব্যাপক হতাহতের পর মানুষের অভিযোগ তিতাসের বিরুদ্ধে। আর সতর্কতার অযুহাত তুলে তিতাস কতৃপক্ষ তল্লা, খানপুর, হাজীগঞ্জসহ একটি বিশাল এলাকার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে রেখেছে তিতাস। ফলে অবর্ননীয় দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন এলাকাবাসি। পাকা ভবন ও টিনের ঘরের ভেতরে কোরোসিনের চুলায় বা কাঠ জ্বালিয়ে রান্না করতে হচ্ছে তাদের।

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার তল্লা, কাইয়ুমপুর, হাজীগঞ্জ, খানপুর এলাকা মূলত বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের আবাসস্থল। এসব এলাকা ও পার্শ্ববর্তী স্থানে অবস্থিত ফকির নীট ওয়ার, মডেল ডি ক্যাপিটাল গার্মেন্টস, খাজা গার্মেন্টস ও নিট কণসার্নসহ বেশ কয়েকটি গার্মেন্টস কারখানার স্বল্প আয়ের মানুষের বসবাস তল্লা, কাইয়ুমপুর, হাজীগঞ্জ, খানপুর এলাকায়। গত শুক্রবার পশ্চিম তল্লার বায়তুস সালাত জামে মসজিদে এশার নামাজের সময় বিস্ফোরনের ঘটনার পর থেকে পশ্চিম তল্লা ও সবুজবাগ এলাকায় তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। ফলে দু’টি এলাকার বাসিন্দারা রান্না-বান্না করতে না পেরে খাদ্য সংকটে ভূগছে। অনেকেই দোকান থেকে শুকনো খাবার কিনে কিংবা হোটেল থেকে খাবার এনে কোন মতে দিনাতিপাত করছেন। মসজিদে বিস্ফোরণে পর পর মসজিদ কমিটি ও এলাকাবাসী অভিযোগ করেছিলেন, ‘মসজিদে গ্যাসের লিকেজ থেকেই বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটেছে। গ্যাস লাইনে আগে থেকেই লিকেজ থাকলেও বারবার অভিযোগ জানানোর পরও তিতাস কতৃপক্ষ লাইন মেরামত করেনি। তারা লাইন মেরামত করতে পঞ্চাশ হাজার টাকা ঘুষ দাবী করে।’ এরপর থেকেই এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

ঘটনাস্থলের পাশের তল্লা জেমস ক্লাব এলাকার বাসিন্দা মুক্তা আহমেদ বলেন, মসজিদে বিস্ফোরণের পর থেকে তাদের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে তিতাস কর্তৃপক্ষ। ফলে বাসাবাড়িতে রান্নাবান্না বন্ধ রয়েছে। জ্বলছে না চুলো। আমরা হোটেল থেকে খাবার এনে, কখনো শুকনো খাবার খেয়ে সময় পার করছি। তিনি বলেন, তল্লা, কাইয়ুমপুর, হাজীগঞ্জ, খানপুর এলাকার ২০-৩০ হাজার পরিবারের বাসাবাড়িতে গ্যাস না থাকায় চুলোতে হাড়ি জ্বলছে না।

কাইয়ুমপুর এলাকার গার্মেন্টস কর্মী সেলিনা জাহান টুসি জানান, মসজিদে বিস্ফোরণের পর পর তিতাস গ্যাস অফিসের লোকজন রাতের আঁধারে এসে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ দিয়েছেন। ফলে তিনদিন ধরে আমারা বিল্ডিংয়ের ভেতরে লাকরির চুলা জ্বালিয়ে রান্না করছি। গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে আশপাশের হোটেল থেকে বেশি দামে খাবার কিনে খেতে হচ্ছে। আমরা স্বল্প আয়ের মানুষ আমাদের পক্ষে প্রতিদিন হোটেল থেকে কিনে এনে খাবার খাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই দ্রুত গ্যাস সংযোগ প্রদান ও ত্রুটিপূর্ণ গ্যাস লাইন মেরামতের দাবী জানান তিনি।

কদম রসুল কলেজের শিক্ষক অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম জানান, গ্যাস সরবরাহ না থাকায় শ্রমঘন এলাকায় মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। মসজিদে বিস্ফোরনের পর থেকে তিতাস কর্মকর্তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন মনে হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহনের অভিযোগ করায় এলাকাবাসিকে তিতাসের লোকজন ইচ্ছে করে শাস্তি দিচ্ছে।

এ ব্যাপারে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানীর নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক মফিজুল ইসলাম জানান, মসজিদে বিস্ফোরনের পর আবার যাতে কোনো দূর্ঘটনা না ঘটে এ কারনে ওই এলাকার গ্যাস লাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। আশাকরি সোমবারের মধ্যে পুনরায় গ্যাস সরবরাহ শুরু হবে। তিনি বলেন, গ্যাস লাইনে যদি কোন ক্রুটি থাকে তবে তা পরীক্ষা করে সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

বিস্ফোরনের পর পরই নারায়ণগঞ্জ তিতাস অফিসের পক্ষ থেকে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিলো। সেই তদন্ত কমিটির প্রধান হচ্ছেন উপ-মহাব্যবস্থাপক মফিজুল ইসলাম। তদন্ত সম্পর্কে তিনি বলেন, এখন কোনো মন্তব্য করা যাবেনা। কমিটি কাজ করছে।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়