২৬ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ১৫:৫৬, ৬ মার্চ ২০২১

আপডেট: ২২:১৫, ৬ মার্চ ২০২১

৮ বছরেও শেষ হয়নি ত্বকী হত্যার তদন্ত

৮ বছরেও শেষ হয়নি ত্বকী হত্যার তদন্ত

সৌরভ হোসেন সিয়াম (প্রেস নারায়ণগঞ্জ): বাবা রফিউর রাব্বিকে শায়েস্তা করতেই হত্যা করা হয়েছে তার ছেলে নারায়ণগঞ্জের মেধাবী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীকে। হত্যাকান্ডের এক বছরের মাথায় সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানিয়েছিল তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। সাবেক সাংসদ নাসিম ওসমানের পুত্র এবং বর্তমান সাংসদ আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমেরী ওসমানের নির্দেশ এবং নেতৃত্বে এই হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে বলেও জানায় র‌্যাব। অচিরেই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার কথাও জানিয়েছিল সংস্থাটি। তবে সেই প্রতিবেদন আর আলোর মুখ দেখেনি। হত্যার ঘটনার দীর্ঘ আট বছরেও তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়নি। শুরু হয়নি বিচারকার্য।

তবে তদন্তকার্য এখনও চলমান জানিয়ে র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল খন্দকার সাইফুল আলম বলেন, ‘চাঞ্চল্যকর এই মামলার তদন্তে অগ্রগতি রয়েছে। তদন্তকাজ চলমান রয়েছে। তদন্ত শেষ হলে চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হবে।’

২০১৩ সালের ৬ মার্চ শহরের বঙ্গবন্ধু সড়ক থেকে নিখোঁজ হয় তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। ওইদিন সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন পিতা রফিউর রাব্বি। দুই দিন পর ৮ মার্চ সকালে শহরের পাঁচ নম্বর ঘাট এলাকায় শীতলক্ষ্যার শাখা খাল থেকে তার লাশ উদ্ধার হয়। ওইদিন রাতে অজ্ঞাত আসামি করে সদর থানায় মামলা করা হয়। পরে ১৮ মার্চ সাংসদ শামীম ওসমান, তাঁর ছেলে অয়ন ওসমান, জেলা যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা জহিরুল ইসলাম পারভেজ ওরফে ক্যাঙ্গারু পারভেজ, জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি রাজীব দাস, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, সালেহ রহমান সীমান্ত ও রিফাতকে দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সুপারের কাছে একটি অবগতিপত্র দেন রফিউর রাব্বি। এ ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেফতারও করে র‌্যাব। এদের মধ্যে ইউসুফ হোসেন লিটন ও সুলতান শওকত ভ্রমর ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দেয়। জবানবন্দিতে ত্বকীকে নির্মমভাবে হত্যা ও তার কারণের বিশদ বর্ণনা দেয় আসামিরা।

২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন রফিউর রাব্বি। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে পরাজিত হন একেএম শামীম ওসমান। এছাড়া ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী বিভিন্ন পরিবহনের মালিকেরা ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ করেন। রফিউর রাব্বি এই চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। এসব কারণেই বাবার প্রতি ক্ষুব্দ হয়ে তাকে শায়েস্তা করতে ছেলেকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়। ত্বকী হত্যাকান্ডের প্রথম বর্ষপূর্তিতে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমে এসব তথ্য তুলে ধরেন।

ওই সময় র‌্যাব আরও জানায়, সাংসদ শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমেরী ওসমানের নির্দেশে এবং প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে সহযোগীদের নিয়ে ত্বকীকে হত্যা করা হয়। পরে লাশ ফেলা হয় শীতলক্ষ্যা নদীতে। অচিরেই এই হত্যাকান্ডের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার থাকলেও দীর্ঘ আট বছরেও তা সম্ভব হয়নি। এদিকে গ্রেফতার আসামিরাও জামিনে বেরিয়ে এসে বর্তমানে এখন পলাতক।

ত্বকীর পিতা রফিউর রাব্বির অভিযোগ, নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ওসমান পরিবার এই হত্যাকান্ডের সাথে সরাসরি জড়িত বলেই এর বিচার হচ্ছে না। সংসদে ওসমান পরিবারের পাশে থাকার কথা উল্লেখ করে দেওয়া বক্তব্যের পর থেকেই তদন্ত বন্ধ রয়েছে। আর তদন্ত কি হবে? র‌্যাব তো তদন্ত শেষ করে সংবাদ সম্মেলনে কারা, কীভাবে ত্বকীকে হত্যা করেছে তা সবই জানিয়েছে। তিনি বলেন, ত্বকী হত্যার বিচার হবেই। এই সরকার থাকতে হোক কিংবা পরেই হোক, এই হত্যাকান্ডের দৃষ্টান্তমূলক বিচার হবে।

ত্বকী হত্যার বিচারের দাবিতে দীর্ঘ আট বছর যাবৎ শহরে আলোকশিখা প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি পালন করছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। প্রতি মাসের ৮ তারিখ এই কর্মসূচি পালিত হয়। কর্মসূচি থেকে ত্বকী হত্যার বিচার দাবি করে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়।
গতকাল ৫ মার্চ মেধাবী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ৮ বছর পূর্তি উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জের ডিআইটিতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। দীর্ঘ ৮ বছরেও এই হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দাখিল এবং বিচারকার্য শুরু না হওয়ায় সরকারের প্রতি উষ্মা প্রকাশ করে বক্তারা বলেন, ত্বকীকে কীভাবে এবং কারা হত্যা করেছেন তা জেনেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিচারকার্য বন্ধ করে রেখেছেন। এর দায় প্রধানমন্ত্রীকে নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন তারা।

সমাবেশে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, কতটা পাষন্ড, নির্দয় হলে ত্বকীর মতো মেধাবী এক কিশোরকে নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়। এই কাজ করে দেখিয়েছে নারায়ণগঞ্জের খুনিরা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কী করে এই পাষন্ড খুনি পরিবারের পক্ষে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিতে পারেন সেটা আমার বোধগম্য নয়। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরেই বিচারকার্য বন্ধ রয়েছে। কারা, কীভাবে ত্বকীকে হত্যা করেছে তা প্রধানমন্ত্রী জানেন। তাঁর কাছে সকল কাগজপত্র আছে। জানা সত্ত্বেও তিনি বিচারকার্য বন্ধ রেখেছেন। এর দায় তাকেও নিতে হবে। ত্বকী হত্যার বিচারে লাগাতার কর্মসূচি পালিত হচ্ছে নারায়ণগঞ্জে। এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। সারাদেশের সকল খুন, গুম, নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন হিসেবে প্রেরণা হয়ে থাকবে।

ত্বকী হত্যার বিচার দাবি করে দেশের ২৩ বিশিষ্ট নাগরিক গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে তারা ত্বকী হত্যার চার্জশিট দাখিল করে বিচারকার্য শুরু করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা ও হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়