০৩ মে ২০২৪

সৌরভ হোসেন সিয়াম

প্রকাশিত: ২০:১৯, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

আপডেট: ২০:২৫, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

গুলি চালিয়ে আনসার সদস্যের ‘আত্মহত্যা’র কারণ খুঁজছে পুলিশ

গুলি চালিয়ে আনসার সদস্যের ‘আত্মহত্যা’র কারণ খুঁজছে পুলিশ

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায় সোনালী ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন আনসার সদস্য আফজাল হোসেন। গত রোববার বদলি হয়ে বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনে নিরাপত্তার দায়িত্বে যোগদান করেন। পরদিন সোমবার (২২ এপ্রিল) ডিউটিরত অবস্থায় তার নামে ইস্যু করা শটগান দিয়ে মাথায় গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেন ২৫ বছর বয়সী এই তরুণ।

বন্দর থানা পুলিশের পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীও। তবে, প্রাথমিক তদন্তে ওই আনসার সদস্যের মৃত্যুর পেছনে আত্মহত্যার বাইরে অন্য কোনো তথ্য পাননি বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ‘মানসিক বিষাদ’ থেকে এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে ধারণা তাদের।

বন্দর উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আফজাল হোসেনের বাড়ি চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার গজারিয়া গ্রামে। তরুণ এই আনসার সদস্যের দুই স্ত্রী রয়েছে। প্রথম স্ত্রীর সংসারে এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তান রয়েছে।

২০২১ সালের ২৮ আগস্ট তিনি বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীতে চাকরি শুরু করেন। সোনারগাঁ উপজেলা থেকে বদলি হয়ে গত রোববার বন্দর উপজেলায় যোগদান করেন আফজাল। প্রথম রাতটি কাটিয়েছেন আনসার ব্যারাকে। পরদিন বিকেল চারটার দিকে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনের গার্ডরুমে ডিউটিতে ছিলেন। সাড়ে চারটার দিকে শটগান দিয়ে নিজের মাথায় গুলি চালান তিনি। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে সাতটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান আফজাল।

ঘটনার সময় পাশে ব্যারাকে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন আফজালের সহকর্মী অপর আনসার সদস্য বঙ্কিম। 

তিনি বলেন, ‘হঠাৎ গুলির শব্দ পেয়ে দৌঁড়ে এসে আফজালকে রক্তাক্ত অবস্থায় পাই। দ্রুত ইউএনও স্যারকে খবর পাঠানো হলে তাকে হাসপাতালের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়।’

মাত্র একদিন আগে যোগদান করা আফজালের ব্যক্তিগত বিষয়ে জানার সুযোগ না হওয়ায় তিনি মানসিকভাবে বিষাদগ্রস্ত ছিলেন কিনা তা নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি তার এই সহকর্মী।

বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম এ মুহাইমিন আল জিহান বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি বাসভবনে ছিলাম না। খবর পেয়ে তাকে প্রথমে বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তার মৃত্যু হয়।’

এই ঘটনায় বন্দর থানায় অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছেন উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা আরিফ হোসেন। মামলাটি তদন্ত করছেন ওই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফয়েজ হোসেন।

তিনি বলেন, ঘটনার পর শটগান ও গুলির খোসা জব্দ করা হয়েছে। শটগানটি ওই আনসার সদস্যের নামে ইস্যু করা ছিল। ঘটনাস্থলের পাশে ইউএনও’র বাসভবনের দেয়ালে ছোট হরফে ‘আমার মৃত্যুর জন্য আমি নিজে দায়ী’ এমনটা একটা লেখা পাওয়া গেছে, যার হাতের লেখা ওই আনসার সদস্যের হাতের লেখার সাথে মিলেছে। প্রাথমিক তদন্তে সব আলামত আত্মহত্যার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

‘তবে, যদি তিনি আত্মহত্যা করে থাকেন তার পেছনেও কী কারণ থাকতে পারে তা নিয়ে কাজ করছে পুলিশ। এ নিয়ে পরিবারের সাথেও যোগাযোগের চেষ্টা করেছি কিন্তু তারা লাশ হস্তান্তরের বিষয়গুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকায় যোগাযোগ সম্ভব হয়ে ওঠেনি। গুরুত্বের সাথে বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।’

এদিকে, আনসার সদস্যের মৃত্যুর ঘটনায় আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর নারায়ণগঞ্জ জেলা কার্যালয় চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটির সদস্যরা মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ওই আনসার সদস্যের সহকর্মীদের সাথেও কথা বলেন।

আনসার সদস্যের নিজের মাথায় গুলি চালানোর ঘটনাটি খুবই অনাকাঙ্খিত ও মর্মান্তিক বলে মন্তব্য করেন তদন্ত কমিটির প্রধান আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর নারায়ণগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের সার্কেল অ্যাডজুট্যান্ট মোহাম্মদ মিজানুর রহমান চৌধুরী।

তিনি বলেন, আফজালের নামে ইস্যু করা শটগানটিতে রাবার বুলেট ছিল। সাধারণত দূর থেকে রাবার বুলেটে গুরুতর জখম হয় না। কিন্তু খুব কাছ থেকে মাথায় গুলি চালানোয় গুরুতর আহত হয়ে মারা যান তিনি।

‘বন্দরে তার (আফজাল) দ্বিতীয় দিনের ডিউটি ছিল সোমবার। তার সম্পর্কে সহকর্মীরা বিস্তারিত কিছু জানেন না। তবে, তার দু’টি সংসার (দুই স্ত্রী) রয়েছে বলে জানতে পেরেছি। এ কারণে পারিবারিকভাবে তিনি কোন মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত নই। তবে, এখন পর্যন্ত আত্মহত্যার বাইরে অন্য কোন আলামত আমরা পাইনি। বিষয়টি পুলিশও তদন্ত করছে। অন্য কোন বিষয় থাকলে তা তদন্তে উঠে আসবে।’

যোগাযোগ করা হলে মুঠোফোনে আফজালের চাচাতো ভাই সাখাওয়াত হোসেন রবিন বলেন, ছয় মাস আগে আফজাল দ্বিতীয় বিয়ে করে। বেশ কিছুদিন ধরে দুই সংসার নিয়ে সমস্যার মধ্যে ছিল সে। এই কারণে মানসিকভাবে কিছুটা বিপর্যস্তও ছিল আফজাল।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়