০৪ মে ২০২৪

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ২০:৪৩, ২০ এপ্রিল ২০২৪

নগরীর ফুসফুসখ্যাত শেখ রাসেল পার্ক নিয়ে নতুন ষড়যন্ত্র

নগরীর ফুসফুসখ্যাত শেখ রাসেল পার্ক নিয়ে নতুন ষড়যন্ত্র

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের নামে নগরীর দেওভোগ এলাকায় ১৮ একর জায়গায় শেখ রাসেল পার্ক নির্মাণ করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। এক সময়ের মাদক ও সন্ত্রাসের আখড়া হিসেবে পরিচিত ‘জিমখানা বস্তি’ এখন নগরীর ফুসফুস হিসেবে পরিচিত। ৫৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ পার্ক নগরবাসীর বিনোদন ও স্বস্তির জায়গায় পরিণত হয়েছে। এই পার্কের কল্যাণে সারাদেশে আলাদা পরিচিতি পেয়েছে নারায়ণগঞ্জ।

কিন্তু এ পার্ক নির্মাণে বারংবার বাধা পেয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী। যদিও নানা বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সক্ষম হন তিনি। গত বছরের ১৪ নভেম্বর গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ পার্ক উদ্বোধন করার পর নগরবাসীর জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। কিন্তু এই পার্ক ঘিরে বন্ধ হয়নি ষড়যন্ত্র। নতুন করে এই পার্ককে ‘মিনি পতিতালয়’ উল্লেখ করে তা বন্ধের জন্য মাঠে নেমেছে একটি পক্ষ।

চলতি বছরের ১০ ফেরুয়ারি রাতে শেখ রাসেল পার্কের অবস্থিত পার্ক লাউঞ্জ রেস্টুরেন্টে এসএসসি ৯৫ ব্যাচের একটি অনুষ্ঠানে নামাজের সময় গানবাজনার অভিযোগ তুলে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর চালানো হয়। সেই হামলায় আয়োজকদের মারধরসহ ১০ লাখ টাকার মালপত্র ভাঙচুর ও র‍্যাফেল ড্র’র মালামাল লুট করে নিয়ে যায় হামলাকারীরা। এই ঘটনায় গত ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের আইন কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করেন। মামলায় হেফাজত নেতা ফেরদাউসুর রহমানকে প্রধান আসামিসহ শতাধিক অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।

এর প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিক সম্মেলন করেন হেফাজত নেতারা। পার্কের ভেতরে ‘অপকর্ম ও অশ্লীলতা’ চলছে উল্লেখ করে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুল আউয়াল সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ‘মেয়র আইভী এখানে চারুকলার ভেতরে পার্ক করলেন, তারপর এখন রেস্টুরেন্ট বানিয়েছে। এরই মধ্যে এখানে মিনি পতিতালয় শুরু হয়ে গেছে। এখানে এখন নারী পুরুষদের অবাধে মেলামেলা করছে যা আশপাশের কয়েকটি মসজিদের মাঝখানে। এটা নারায়ণগঞ্জে মানুষ কোন ভাবে সহ্য করবে না।’

এই সংবাদিক সম্মেলনে ফেরদাউসুর রহমান বলেন, ‘আমি আউয়াল হুজুরকে বলেছি, আপনার পাশেই অনৈতিক কার্যকলাপ চলে। তাড়াতাড়ি এগুলো বন্ধ করেন। আমরা যদি প্ল্যান করে চারুকলায় যাই, আমাদের যাওয়ার আগের বাতাসেই সব তছনছ হয়ে যাবে। আমরা যদি ভাঙি তাহলে কী এগুলোর অস্তিত্ব থাকবে? এটা পুরোটায় মিনি পতিতালয় হয়ে গেছে। ডিআইটি মসজিদের পাশে এগুলো থাকতে পারবে না।’

এর আগে নিজের ফেসবুক লাইভে শেখ রাসেল পার্ক নিয়ে বলেন, ‘আজকে থেকে আমার আন্দোলন হবে ওই পার্কে (শেখ রাসেল পার্ক) কোন অনৈতিক কাজ চলতে পারবে না। নারায়ণগঞ্জে যে পতিতালয় ছিল তা উচ্ছেদ হয়েছে কিন্তু মিনি পতিতালয় হিসেবে এই পার্ককে মানুষ উল্লেখ করে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের চরিত্র নষ্ট হচ্ছে সেখানে। সেখানে ঘুরাঘুরির কথা বলে অশ্লীল দৃশ্য সেখানে দেখা যায়, কোন ভদ্র পরিবারের মানুষ সেই পার্কে ঢুকতে পারে না।’

এদিকে, শহরের মধ্যে বুকভরে শ্বাস নেওয়ার একটি জায়গায় পরিণত হয়েছে শেখ রাসেল পার্কটি। এই পার্কের একপাশে রয়েছে দীর্ঘ আকৃতির লেক, লেকের চারপাশে ওয়াকওয়ে, স্ট্রিট লাইট, সিটিং প্যাভিলিয়ন ও পরিবেশবান্ধব সবুজ গাছপালা। দর্শনার্থীদের অবসর সময় কাটানোর জন্য ৪টি ভিউইং ডেক ও ৬টি ঘাটলা নির্মাণ করা হয়েছে। উন্মুক্ত পরিবেশে যে কোন ধরনের অনুষ্ঠানের জন্য উন্মুক্ত মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে। লেকের দুই পাশে পারাপারের জন্য রয়েছে একটি নয়নাভিরাম ব্রিজ। খেলাধুলার জন্য ১টি খেলার মাঠ নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে সুইমিং পুল, ওয়াটার গার্ডেন, জিমন্যাস্টিক ক্লাব, ড্রাই ফাউন্টেন, স্কেটিং জোন, সাইকেল লেনসহ সৌন্দর্যবর্ধন কাজ। এ ছাড়াও পার্কের অভ্যন্তরে শিল্প সংস্কৃতি চর্চ্চা ও বিকাশের লক্ষ্যে বিদ্যমান চারুকলা ভবনটির স্থলে নতুনভাবে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত একটি পরিবেশবান্ধব চারুকলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।

নগরবাসীর বিনোদনের প্রাণকেন্দ্র শেখ রাসেল পার্ককে 'মিনি পতিতালয়' উল্লেখ করায় ক্ষেপেছেন নারায়ণগঞ্জবাসী। তারা বলছেন, একদল স্বার্থান্বেষী লোক তাদের নিজেদের সুবিধার জন্য শুরু থেকেই রাসেল পার্ক নির্মাণে বাধা দিয়েছেন। নানা বিপত্তি পেরিয়ে নগরবাসীকে সাথে নিয়ে পার্কটি নির্মাণ করেছেন সিটি মেয়র। যার সুফল ভোগ করছে নগরবাসী। এখন আবারও এই পার্কটি বন্ধের পায়তারা করছে ওই মহলটি। এতে তারা পুরোনো কৌশল হিসেবে ‘অশ্লীলতার’ তলোয়ার ব্যবহার করছেন। এই অপচেষ্টা নগরবাসী কখনই মেনে নেবে না।
 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়