গতবারের ’অটো পাশের’ চেয়ারম্যান রশিদের এবার ভোট পরীক্ষা
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। নির্বাচন উন্মুক্ত ঘোষণা করায় দলীয় প্রতীক নৌকা ছাড়াই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মাঠে রয়েছেন বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ রশিদ। তিনি এবার স্বতন্ত্র প্রতীক (দোয়াত-কলম) নিয়ে লড়ছেন।
রাজনীতিতে ক্লিন ইমেজ থাকলেও ভোটের মাঠে বরাবরই দুর্বল তিনি। বিগত দিনে এম এ রশিদ ৩ বার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে দুইবারই পরাজিত হয়েছিলেন৷ সর্বশেষ ২০১৮ সালে পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় বিনাভোটে প্রথমবারের মতো বন্দরের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। তবে, এবার তিনি ফাঁকা মাঠ পাননি৷ তার বিপরীতে থাকা দুইজন প্রার্থী বেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছেন৷ ফলে, এবারের প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনকে তাঁর জন্য ‘ভোট পরীক্ষা’ হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। গতবার ‘অটোপাশে’ নির্বাচিত হওয়া এম এ রশিদকে এবার ‘ভোট পরীক্ষায়’ অংশ নিতে হবে। এতে প্রাধান্য পাবে বন্দরে চেয়ারম্যান হিসেবে তার বিগত ৫ বছরের কর্মকান্ড৷
জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্য অনুযায়ী, চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বন্দর উপজেলায় ১৯ হাজার ৫৪৩ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা আতাউর রহমান মুকুল। সেই সময় ওসমান পরিবার-সমর্থিত প্রার্থী এম এ রশিদ মাত্র ৯ হাজার ৭৬১ ভোট পেয়ে চতুর্থ হয়েছিলেন। এর আগে তৃতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও মুকুলের কাছে হেরে দ্বিতীয় হয়েছিলেন রশিদ৷
আগামী ৮ মে অনুষ্ঠিতব্য ষষ্ঠ বন্দর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনেও মুকুল প্রার্থী হয়েছেন৷ তার প্রতীক চিংড়ি মাছ৷ এছাড়া চেয়ারম্যান পদে শক্ত অবস্থানে আছেন উপজেলা নির্বাচন করতে মুছাপুর ইউপি চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে আসা জেলা জাতীয় পার্টির সহসভাপতি মাকসুদ হোসেন৷ এ নির্বাচনে তার প্রতীক আনারস৷ বাবার ডামি হিসেবে নির্বাচনী মাঠে আছেন৷
পরিস্থিতি বিবেচনায় রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের 'সমর্থনে' বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ রশিদ এগিয়ে থাকলেও ভোট জরিপে আতাউর রহমান মুকুল ও মাকসুদ হোসেনের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করছেন ভোটাররা।
তবে, এম এ রশীদ সমর্থন পাচ্ছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য এ কে এম সেলিম ওসমানের। সেলিম ওসমান জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হলেও তিনি এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের রশিদকে সমর্থন দিচ্ছেন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর একাধিক অনুষ্ঠানে রশিদকে সমর্থন করে তিনি বক্তব্য দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার বিকেলে পুরান বন্দর এলাকায় বড়ভাই নাসিম ওসমানের দশম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে সেলিম ওসমান বলেন, ‘আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, আমার সহকর্মী রশিদ ভাই (চেয়ারম্যান প্রার্থী) একজন মুক্তিযোদ্ধা। এইখানে চারজন ইউপি চেয়ারম্যান আছেন, একজন মুখ খুলে বললেন কিন্তু অন্যরা বললেন না। কিন্তু ওনারা প্রতিজ্ঞা করে বলেছেন, এই চার ইউনিয়ন থেকে সমস্ত ভোট স্বাধীনতার পক্ষে যাবে।’
যদিও নির্বাচনের শুরুতে চেয়ারম্যান পদে নিজ দলের আরেক প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম আবু সুফিয়ান থাকায় অনেকটাই বেকাদায় ছিলেন এম এ রশিদ। কিন্তু মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিন চেয়ারম্যান পদে আবু সুফিয়ান প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিলে দলের একক প্রার্থী হন তিনি। 'ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগের' সমর্থনের পাশাপাশি জাতীয় পার্টির জনপ্রতিনিধিদের সমর্থনে তাঁর ভোটের মাঠ আগের থেকেও ভালো হলেও তাকে লড়তে হবে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে।
এদিকে নির্বাচনে বিজয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী বলে এম এ রশিদ। তিনি বলেন, “আমার বিগত সময়ের কাজ দেখে মানুষ আমাকে ভোট দেবে। প্রতীক পাওয়ার পর থেকে আমি মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি। তাদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। সব পর্যায়ের মানুষই আমার পাশে আছেন।”
জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী হলেও বিনাভোটে বিজয়ী রশিদ চেয়ারম্যান পদে সরাসরি নির্বাচনে ভোটারদের কতটুকু সমর্থন আদায় করতে পারেন, এ প্রশ্নের উত্তর মিলবে ৮ মে ভোটগ্রহণের ফলাফল ঘোষণার পর৷ তবে, তার বিজয়ের পথটি সুগম নয় তা বাকি দুই প্রার্থীর জোর প্রচারণার দিকে নজর দিলে বোঝা যাচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা৷