২৭ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ২০:০১, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

আপডেট: ২০:০৪, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

অসদাচরণের অভিযোগে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের বিক্ষোভ

অসদাচরণের অভিযোগে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের বিক্ষোভ

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে একটি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ করেছেন ছাত্রীরা। তারা ওই শিক্ষককে দায়িত্ব থেকে অপসারণের দাবিও তুলেছেন। তবে অভিযুক্ত শিক্ষকের দাবি, বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও কমিটির সদস্যের উসকানিতে তাকে সামাজিকভাবে হেয় করতে ‘মিথ্যা’ অভিযোগ করছেন ছাত্রীরা।

সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সফুরা খাতুন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে বিক্ষোভ করেন অর্ধশতাধিক ছাত্রী। বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেয় দশম শ্রেণির কয়েকজন ছাত্রী। তারা প্ল্যাকার্ড হাতে প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তাকে অপসারণের দাবি তোলেন।

বিক্ষোভরত ছাত্রীদের অভিযোগ, রফিকুল ইসলাম প্রায় সময় তাদের সাথে অসদচারণ করেন। নানা অজুহাতে ছাত্রীদের শরীরে হাত দেন। এই বিষয়ে কমিটির লোকজন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে জানিয়েও কোন সমাধান না পেয়ে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। তারা প্রধান শিক্ষকের অপসারণ ও সম্প্রতি স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দেওয়া খন্ডকালীন দুই শিক্ষককে পুনরায় বিদ্যালয়ে আনারও দাবি তোলেন।

দশম শ্রেণি পড়ুয়া এক ছাত্রীর মা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে বলেন, রফিকুল ইসলামের কারণে ভালো ভালো শিক্ষকরা চলে যাচ্ছে। তার কাছে বেতন মওকুফের আবেদন নিয়ে গেলেও তিনি খারাপ ব্যবহার করেন।

তবে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, বিল্লাল হোসেন ও আমানতউল্লাহ সোহেল নামে দুই শিক্ষক সম্প্রতি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। তারা বিদ্যালয়ের নিয়ম মানেন না, বাইরে কোচিং করান এবং সময়মতো বিদ্যালয়ে আসেন না বলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কমিটির কাছে জানান। পরে স্বেচ্ছায় ওই দুই শিক্ষক পদত্যাগ করেন। বিক্ষোভের পেছনে ওই দুই শিক্ষকের ইন্ধন রয়েছে বলেও অভিযোগ তার।

তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালে আমি এই স্কুলে যোগদান করি। যোগদানের পর থেকে খন্ডকালীন ওই দুই শিক্ষকের কর্মকান্ডে অনিয়ম পাই। এই কারণে তাদের বেতনও বন্ধ করা হয়। তখন তারা আমাকে শাসিয়েছিলেন। কিন্তু আমি নিয়মের বাইরে যেতে পারবো না বলে জানাই। কমিটির একজন সদস্যও আমার উপর ক্ষিপ্ত ছিল। তাদের ভাষ্যমতে, স্বেচ্ছাচারিতা করেছি আমি। সেই ক্ষোভ থেকেই কোমলমতি ছাত্রীদের ব্যবহার করেছে আমার বিরুদ্ধে। কারও চরিত্র নিয়ে অভিযোগ তোলার চেয়ে বড় অস্ত্র আর নেই। সেই অস্ত্রই তারা আমার বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।’

এই বিষয়ে খন্ডাকালীন ওই দুই শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি সফর আলী ভূঁইয়া বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কয়েকজন শিক্ষক ক্ষুব্দ ছিলেন। তারাই ছাত্রীদের ব্যবহার করে বিক্ষোভে নামিয়েছেন। এমনটা আমি শুনেছি। তবে ছাত্রীরা যেহেতু অভিযোগ তুলেছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’

জানতে চাইলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগম বলেন, রোববার রাতে কয়েকজন ছাত্রী তার কাছে এসে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তোলেন। তখন এই বিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাথে আলোচনা করবেন বলে ছাত্রীদের আশ্বস্ত করেন তিনি। রাতে ছাত্রীরা আশ্বস্ত হলেও সোমবার দুপুরে তারা বিক্ষোভ শুরু করেন।

এই নারী কাউন্সিলর বলেন, ‘স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে স্কুল পরিচালনা কমিটির সাথে আলাপ করে এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ আমি করতে পারি। সেই বিষয়েই পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। কিন্তু কারও ইন্ধনে ছাত্রীরা বিক্ষোভে যায়। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও স্কুল কমিটির লোকজন বুধবার বৈঠকে বসবেন। তখন ছাত্রীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আলোচনা সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এই বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু তালেব বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল বিষয়টি আমরা পেয়েছি। দুই খন্ডকালীন শিক্ষক চাকরি ছেড়েছেন। শিক্ষার্থীদের দাবি, ওই দুই শিক্ষক চাকরিতে বহাল থাকবে। আর প্রধান শিক্ষককে অপসারণ করতে হবে। সত্য কিংবা মিথ্যা পরের বিষয় কিন্তু প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের অভিযোগ খুবই সেন্সেটিভ। এই বিষয়ে বৈঠক ডেকেছে স্কুল কমিটি। সেখানে আমরাও উপস্থিত থাকবো। উভয়পক্ষের ভাষ্য শোনার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়