বটতলায় শীতল হাওয়া
স্টাফ রিপোর্টার: নগরীর ১নং টার্মিনাল ঘাট। তার পাশেই প্রাচীন বটগাছটি এখন বটতলা নামেই নগরবাসীর কাছে পরিচিত। গাছের শাখা-প্রশাখা অনেকখানি জায়গাজুড়ে আছে। একটু স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলতে মানুষ ছুটে আসে এই বৃক্ষের নিচে।
লক্ষ্যার শীতল হাওয়ায় একটু প্রশান্তি যেন সারাদিনের ক্লান্ত দূর করে দেয়। ফলে নগরবাসীর বিকেলের চায়ের আড্ডা ও পছন্দনীয় স্থানের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে এই বটতলা। শীতলক্ষ্যা নদীর পাড় ঘেঁষে বেড়ে ওঠা প্রাচীন বটবৃক্ষ তার গভীর শেকড় বাড়িয়ে দিয়ে টিকিয়ে রেখেছে তার অস্তিত্ব। যেমন করে হাজার বছরের ইতিহাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এ শহর। প্রাচ্যের ডান্ডি নারায়ণগঞ্জ।
যদিও শীতলক্ষ্যা এখন আর আগের মত নেই, দূষনে-শোষনে হারিয়েছে তার পূর্বের জৌলুস। তবুও মানুষ একটু প্রশান্তির খোঁজে শহরের ব্যস্ততা এড়াতে ভীড় জমায় নদীর পাড়ে এসে। শীতলক্ষ্যার শীতল বাতাসে প্রাণ জুড়িয়ে নিতে চায় বুকভর্তি বাতাস। এদিকে, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নদী তীর ঘেঁষা ওয়াকওয়ে মানুষের সময় কাটানোর উপযোগী করতে উদ্যোগী হলেও ,নদী দূষন মুক্ত করায় উদ্যোগী নয়।
নারায়ণগঞ্জের ১নং টার্মিনাল ঘাট, ৫নং ঘাট অথবা টানবাজার ঘাট সকল নদীর পাড় গুলোতে বিকেল থেকে জমে বিনোদন প্রেমী মানুষের ভীড়। সারা দিনের কর্মব্যস্ততা শেষ করে বিকেলের পদযুগলে ভ্রমণে বেড়িয়ে পরা মানুষদের পছন্দ নদীর পাড়ে বসে এক কাপ চা খাওয়া। আর তরুণরা এসে গানের আড্ডা জমিয়ে তারুণ্যের জানান দিয়ে যায়।
আবার নদী বন্দরে বিভিন্ন মালপত্র লোড-আনলোডের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরাও কাজ শেষে শীতলক্ষ্যার ঘোলা পানিতেই ধুয়ে নেয় শরীরের সকল ক্লান্তি। সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের মিলন মেলার সাক্ষী হয়ে কেবল নীরবে বয়ে চলে হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী এ নদী।
বিভিন্ন দিবস অথবা সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে যেন মানুষের ঢল নামে নদীপাড়ের এই বৃক্ষটির নিচে। ফলে একে ঘিরে গড়ে ওঠা বিভন্ন খাবারের দোকানগুলোও চলে পুরোদমে। ৫নং ঘাটের ফুচকার দোকান দিয়েছেন মজনু মিয়া।
বছরখানেক তার এ ব্যবসার বয়স। তিনি বলেন, নদীর পাড়ে মানুষের অনাগোনা লাইগাই থাকে। একটু স্বস্তিতে বসতে আপন জনের সাথে সময় কটাতে আসে মানুষ। ছুটির দিনে মানুষের ভিড় থাকে বেশি। রাতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা না থাকায় সমস্যা হয়।
নারায়ণগঞ্জ ঐতিহ্য রক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক এ.বি. সিদ্দিক বলেন, শিল্পের দূষণ থেকে নদী এবং দেশকে বাঁচাতে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ নামে একটি আইন রয়েছে। কিন্তু গার্মেন্টস ও ডাইং শিল্প মালিকেরা পরিবেশগত বিপর্যয়ের কথা বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা না করে বিগত দুই দশক ধরে হাজার হাজার টন বিষাক্ত বর্জ্য বিভিন্ন খাল বিল জলাশয়ের মাধ্যমে সরাসরি শীতলক্ষ্যা নদীতে নিঃসরণ করে চলেছে। কোন রিফাইনারি প্ল্যাট ব্যবহারের তোয়াক্কা না করেই।
ফলে শীতলক্ষ্যা নদীর পানি মারাত্মক দূষিত হয়ে কালোবর্ণ ধারণ করছে। যে পানি একদা পান করা যেত সে পানিতে এখন হাত দিলে হাতে ঘাঁয়ের সৃষ্টি হয়। এই নদী থেকে মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী অনেক আগেই হারিয়ে গেছে। শুধু ডাইং নয় অন্যান্য বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানও প্রতিনিয়ত এই পানিকে দূষিত করে চলেছে। এ ছাড়া নদীর দুই ধারের মূল্যবান জায়গা অবৈধ দখলদার কর্তৃক দখল প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। ফলে নদী না থাকলে নদীর পাড়ের বিনোদনের কোন প্রশ্নই ওঠে না! তাই নগর পরিকল্পনাবিদ ও পানি সম্পদ উন্নয়ন বোর্ডের নদী রক্ষার ব্যাপারে ভাবতে হবে আগে।
প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম