২৭ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ২২:৫৫, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

আপডেট: ২৩:৪৯, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

‘বিকট শব্দে বিস্ফোরণের পর আগুন’ চারঘন্টা পর নিয়ন্ত্রণে

‘বিকট শব্দে বিস্ফোরণের পর আগুন’ চারঘন্টা পর নিয়ন্ত্রণে

সৌরভ হোসেন সিয়াম (প্রেস নারায়ণগঞ্জ): প্রায় চারঘন্টা পর নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে এইচপি কেমিক্যালস্ লিমিটেড কারখানার হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড উৎপাদনের প্রধান উৎপাদনকেন্দ্রে (প্ল্যান্ট) লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে৷ আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের বারোটি ইউনিট কাজ করে৷ ব্যবহার করা হয় অত্যাধুনিক ‘রোবোটিক রিমোট কন্ট্রোল ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম’৷

এদিকে কেমিক্যাল কারখানাটি থেকে মাত্র এক কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতায় অবস্থিত নান্নু স্পিনিং মিলস্ লিমিটেড কারখানায় দুপুর একটার দিকে আগুন লাগে৷ সেখানে ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিটের চেষ্টায় বেলা তিনটায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে৷

উভয় কারখানার আগুনে কেউ হতাহত হননি বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেনটেইনেন্স) লেফটেন্যান্ট কর্ণেল তাজুল ইসলাম৷

আড়াইহাজার উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়নের তিনগাঁও এলাকায় অবস্থিত এইচপি কেমিক্যাল কারখানাটিতে রাসায়নিক কাঁচামাল থেকে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড উৎপাদন করা হয়৷ দুপুর দেড়টার দিকে কারখানাটির মূল উৎপাদনকেন্দ্রে (প্ল্যান্ট) বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়ে আগুন ধরে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শী শ্রমিক-কর্মচারীরা৷

ঘটনার সময় কারখানার উৎপাদনকেন্দ্রটির অদূরে ছিলেন নিরাপত্তা কর্মী বাবুল মিয়া৷ তিনি বলেন, ‘প্রথমে অনেক জোরে কান স্তব্ধ হয়ে সাবার মতো একটা শব্দ হয়৷ পরে আগুন লেগে যায়৷ আমি লোকজনকে বেরিয়ে যেতে বলেই স্যারদের খবর দেই৷’

কারখানার বৈদ্যুত্যিক শাখার কর্মী রাসেল ভূঁইয়া বলেন, ‘জহুরের নামাজের পরপরই আমি খাবার খেতে বসি৷ তখন বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শুনতে পাই৷ বেরিয়ে এসে দেখি প্ল্যান্টের জিরো পয়েন্টে (নিচতলায়) আগুন৷ ভেতরে প্রচুর কেমিক্যাল থাকায় আগুন মুহুর্তেই ২৮ মিটার উচ্চতার প্ল্যান্টে ছড়িয়ে পড়ে৷’

‘সাথে সাথে ফায়ার সার্ভিসে খবর দিয়ে আমাদের ফায়ার ফাইটিং এর লোকজন আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে৷ দশ মিনিটের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের একটা টিম আসে কিন্তু ভেতরে অ্যালুমিনিয়াম দানা, সলিউশন ওয়েলের মকো বেশকিছু কেমিক্যাল থাকায় তারা কিছু করে উঠতে পারেননি৷ প্রায় ঘন্টাখানেক পর ফায়ার সার্ভিসের আরও টিম আসলে তারা আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করেন৷ এতক্ষনে আগুন চারদিকে পুরোপুরি ছড়িয়ে পড়ে৷ ভেতরের একের পর এক পাইপ ব্লাস্ট হতে থাকে৷ এসব পাইপ দিয়ে কেমিক্যাল পাস হয়৷’

কারখানার মালিক বা কর্মকর্তা পর্যায়ের কেউ গণমাধ্যমে সরাসরি কথা বলতে রাজি হননি৷ তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেমিক্যাল ডিপার্টমেন্টের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘কারখানাটিতে শতাধিক শ্রমিক কাজ করেন৷ তবে গত সোমবার রাত থেকে প্ল্যান্টের উৎপাদন কাজ বন্ধ ছিল৷ অগ্নিকান্ডের সময় প্ল্যান্টের ভেতর দশ-বারোজন ছিলেন৷ কিন্তু তারা অক্ষত অবস্থাতেই বেরিয়ে আসতে পেরেছেন৷ ক্ষয়ক্ষতি যা হয়েছে তা অবকাঠামোগত৷’

নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার মোট বারোটি ইউনিটের চেষ্টায় অগ্নিকান্ডের প্রায় চারঘন্টা পর বিকেল পাঁচটা বিশ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানান ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেনটেইনেন্স) লেফটেন্যান্ট কর্ণেল তাজুল ইসলাম৷

তিনি গণমাধ্যমে বলেন, ‘পাঁচ মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের টিম পৌঁছায়৷ এই কারখানায় অর্গানিক কেমিক্যাল থেকে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড তৈরি করা হয়৷ মূল প্ল্যান্টেই আগুন লাগে৷ সেখানে ট্রাইমিথাইল বেনজিন, পটাশিয়াম কার্বনেট, ফসফরিক এসিড মজুদ ছিল৷ যা থেকে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড তৈরি করা হয়৷ এর চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ মিনিটের দূরত্বে ছিল হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের গোডাউন৷ এ গোডাউনটাকে আগুন থেকে মুক্ত রাখাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল৷’

ফায়ার ফাইটারদের চারঘন্টার নিরলস ও নির্ভীক পরিশ্রমের ফলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখানে আমাদের অত্যাধুনিক রিমোট কন্ট্রোল ফায়ার সিস্টেমের ব্যবহার করেছি৷ এটি অন্য সাধারণ আগুনের মতো ছিল না, কেমিক্যালের আগুন ছিল৷ রিমোট কন্ট্রোল ফায়ার সিস্টেম আমাদের শক্তিকে আরও সমৃদ্ধ করেছে৷’

‘আমাদের ফায়ার সার্ভিসে রোবোটিক রিমোট কন্ট্রোল মাত্র দু’টি আছে৷ তার একটি আজকে ব্যবহার করা হয়েছে৷ এ আধুনিক ফায়ার ফাইটিং এর মাধ্যমে আমরা একটি অত্যাধুনিক জগতে প্রবেশ করলাম৷ আমরা আস্তে আস্তে আরও আধুনিক হচ্ছি৷’

অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে তদন্তের পর নিরূপন করা যাবে জানিয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাথমিক আগুন নিয়ন্ত্রণে কারখানা কর্তৃপক্ষ কাজ করেছে৷ পরবর্তীতে আমাদের একাধিক টিম পৌঁছানোর পর প্রসিডিউর অনুযায়ী কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করি৷ তবে কেউ হতাহত হননি৷’

এই কারখানার এক কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে অবস্থিত নান্নু স্পিনিং মিলস্ লিমিটেডের আগুন দুই ঘন্টা পর দুপুর তিনটায় নিয়ন্ত্রণে আসে৷ আগুন নিয়ন্ত্রণে কারখানার নিজস্ব দমকল বাহিনীর পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিট কাজ করে৷ এ আগুনেও কেউ হতাহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া যায়নি বলে জানান নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক ফখরুদ্দিন আহমেদ৷

নান্নু স্পিনিং মিলস্ লিমিটেড কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা জানান, দুই শিফটে এ কারখানায় প্রায় চার হাজার শ্রমিক কাজ করেন৷ ভোর ছয়টা থেকে শুরু হওয়া প্রথম শিফটের শেষদিকে দুপুর একটায় কারখানাটির এক নম্বর ইউনিটের চারতলা ভবনের নিচতলায় আগুন লাগে৷

অগ্নিকান্ডের সময় ভবনটির নিচতলায় কর্মরত শ্রমিক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘হঠাৎ একজন নারী শ্রমিক আগুন বলে চিৎকার দিলে সিলিং এ আগুন দেখি৷ দৌঁড়ে গিয়ে জেনারেটর কক্ষে গিয়ে বিদ্যুতের লাইন বন্ধ করাই৷’

কারখানাটির সহকারী প্রকৌশলী মো. আশিক বলেন, ‘যেখানে আগুন লাগে সেখানে তুলা বাছাই করে প্রেসে দেওয়ার কাজ হতো৷ আগুন লাগার পর সাথে সাথে ফায়ার এলার্ম বাজলে শ্রমিকরা বেরিয়ে যান এবং আমাদের কারখানার ফায়ার কর্মীরা আগুন নেভাতে কাজ শুরু করেন৷ একই সময় ফায়ার সার্ভিসেও খবর দেয়া হয়৷ কারখানায় যথাযথ অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো৷’

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়