২৭ এপ্রিল ২০২৪

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৯:৫৯, ১৬ মার্চ ২০২৪

ইউপি চেয়ারম্যানকে পুলিশের ’কিল-ঘুষি’, এসআই প্রত্যাহার

ইউপি চেয়ারম্যানকে পুলিশের ’কিল-ঘুষি’, এসআই প্রত্যাহার

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুল হক ভূঁইয়াকে প্রকাশ্যে পুলিশের চর-থাপ্পর ও লাঠিপেটার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে৷
ইউপি চেয়ারম্যানের দাবি, সড়ক দখল করে ব্যবসা করা হকারদের সরাতে গেলে ভুলতা ফাঁড়ির পুলিশ হকারদের পক্ষ নিয়ে তাকে লাঠিপেটা করেছে৷ তার অভিযোগ, হকারদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা তোলে পুলিশ সদস্যরা৷ যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে৷

ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল শুক্রবার বিকেলে ভুলতা ফ্ল্যাইওভারের নিচে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে৷ ঘটনাস্থল থেকে ভুলতা ফাঁড়ি মাত্র ২০০ গজ দূরে অবস্থিত৷
ভিডিওতে দেখা যায়, ইউপি চেয়ারম্যান আরিফুল হক ভূঁইয়াকে লাঠি ও বাঁশ হাতে ঘিরে ধরে রেখেছেন স্থানীয় হকাররা৷ সেখানে লাঠি হাতে পোশাক পরা কয়েকজন পুলিশ সদস্যও উপস্থিত রয়েছেন৷ এক পর্যায়ে কয়েকজন হকার চেয়ারম্যানকে পেটাতে থাকেন৷ পুলিশও সেখানে চেয়ারম্যানকে ধাক্কা দিয়ে কিল-ঘুষি মারেন এবং হাতে থাকা লাঠি দিয়ে বেশ কয়েকবার আঘাত করেন৷

স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ভুলতা মোড়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি হকারদের দখলে থাকে৷ এতে মহাসড়কে প্রায় সময় যানজট দেখা দেয়, ভোগান্তিতে পড়েন জনসাধারণ৷ মাসখানেকও হয়নি স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সম্মিলিত উদ্যোগে মহাসড়ক থেকে হকারদের উচ্ছেদ করা হয়৷ এতে হকাররা ছিল উত্তেজিত৷

মারধরের শিকার আরিফুল হক ভূঁইয়া বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে ১৫-২০ দিন আগে মহাসড়ক হকারমুক্ত করা হয়৷ কিন্তু কয়েকদিন ধরে আবারও হকাররা সড়ক দখল করে বসতে শুরু করে৷

“গতকাল (শুক্রবার) আমি মহাসড়ক দিয়ে হেঁটে যাবার সময় হকারদের দেখতে পাই৷ তখন এক আখের রস বিক্রেতাকে সড়ক ছেড়ে তার ভ্যানগাড়িটি অন্যপাশে নিয়ে যেতে বলি৷ এতেই অন্যান্য হকাররাও খেপে যায়৷ ভুলতা ফাঁড়ির এসআই বারেক ও উত্তমসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য সেখানে উপস্থিত হয়ে হকারদের পক্ষ নিয়ে আমাকে মারধর করতে থাকে৷ শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার পাশাপাশি তারা অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে৷”

ভুলতা ইউপির তিনবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান আরিফুল হক রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগেরও কার্যকরী সদস্য৷ তিনি বলেন, “ভুুুলতা এলাকায় হকারদের কাছ থেকে প্রতিমাসে ১৫ লাখ টাকা চাঁদা ওঠে৷ এর বড় একটি অংশ পায় পুলিশও৷ এই কারণে পুলিশ হকারদের পক্ষ নিয়ে এমনটা করলো৷ আমি তিনবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান, ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতি করি৷ শুধু পুলিশ কেন, সবাই আমাকে চেনে৷ জনসাধারণের সুবিধার্থে কথা বলতে গিয়ে পুলিশ আমাকে প্রকাশ্যে যেভাবে পেটালো তাতে তো মনে হচ্ছে, এ যেন পুলিশি রাষ্ট্র৷”

এই বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসককে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন আরিফুল৷ তিনি লিখিতভাবেও অভিযোগ করবেন বলে জানান৷
যোগাযাগো করা হলে ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “চেয়ারম্যান ও তার লোকজন এক আখের রস বিক্রেতাকে মারধর করলে হকারদের সাথে তাদের হাতাহাতি হয়৷ পুলিশ সেখানে গেলে চেয়ারম্যানের লোকজনও চড়াও হয়৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে দুইপক্ষকেই লাঠিচার্জ করে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়৷”

তবে, হকারদের কাছে থেকে চাঁদা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন এ পুলিশ কর্মকর্তা৷

এদিকে, এই ঘটনার পর এসআই বারেককে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানান জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাইলাউ মারমা৷

তিনি বলেন, “এক আখের রস বিক্রেতাকে মারধরের জেরে চেয়ারম্যানের লোকজন ও হকারের মধ্যে হট্টগোল হলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে উভয়পক্ষকে সরিয়ে দেয়৷ এসআই বারেক সপ্তাহখানেক হয়েছে সেখানে যোগদান করেছে৷ সে চেয়ারম্যানকে চিনতো না৷ এ ঘটনায় তাকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে৷”

এই ঘটনায় অধিকতর তদন্তের পর পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান জেলা পুলিশের এ কর্মকর্তা৷

সর্বশেষ

জনপ্রিয়