১৯ মে ২০২৪

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৯:৫৬, ৫ মে ২০২৪

বন্দরের নির্বাচনে প্রশাসনের ’অ্যাসিড টেস্ট’ 

বন্দরের নির্বাচনে প্রশাসনের ’অ্যাসিড টেস্ট’ 

আগামী ৮ মে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। এদিন ভোটাররা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে তাদের পছন্দের তিন জনপ্রতিনিধিকে নির্বাচিত করবেন। গতবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও এবার তিনটি পদেই শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী থাকায় বন্দর উপজেলা প্রচার-প্রচারণায় সরগরম। ইতোমধ্যে জেলাজুড়ে এ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়েছে। ভোটারদের মধ্যেও একধরনের উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। এ নির্বাচনকে ঘিরে প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের দুই সংসদ সদস্যের সক্রিয়তাও আলোচনায় আলাদা মাত্রা যুক্ত করেছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে গত জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এই নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসনও। প্রশাসনের জন্য এই নির্বাচনকে অ্যাসিড টেস্ট হিসেবে দেখছেন সাধারণ জনগণও।

শিল্পাঞ্চলখ্যাত এই জেলায় রয়েছে পাঁচটি উপজেলা। ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর প্রথম ধাপে সদর ও বন্দর উপজেলার নাম ঘোষণা করা হলেও মামলা জটিলতায় সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন স্থগিত করেছে জেলা নির্বাচন অফিস। ফলে প্রথম ধাপে জেলায় কেবল বন্দর উপজেলা নির্বাচন হবে। দ্বিতীয় ধাপে আগামী ২১ মে সোনারগাঁ, রুপগঞ্জ ও আড়াইহাজার উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হবে। কিন্তু নানা কারণেই বন্দর উপজেলা নির্বাচনের দিকে নারায়ণগঞ্জবাসীর দৃষ্টি। দুই ধাপের নির্বাচনে নিরপেক্ষতা প্রমাণের জন্য এই উপজেলার নির্বাচন বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে।

বন্দর উপজেলায় চেয়ারম্যান যে চারজন লড়ছেন তাদের মধ্যে একজন হলেন- সাবেক চেয়ারম্যান মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আতাউর রহমান মুকুল। তার প্রতীক চিংড়ি মাছ। তিনি এখন দল থেকে বহিষ্কৃত। এ ছাড়া ভোটের মাঠে আছেন বর্তমান চেয়ারম্যান বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ রশীদ (দোয়াত-কলম)। জেলা জাতীয় পার্টির সহসভাপতি মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন আনারস প্রতীকে লড়াই করছেন। তার ছেলে মাহমুদুল হাসান শুভও হেলিকপ্টার প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন। যদিও শুভ তার পিতার পক্ষেই প্রচার চালাচ্ছেন।

এছাড়া, ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন- দুবারের ভাইস চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টির জেলা কমিটির সভাপতি সানাউল্লাহ সানু (উড়োজাহাজ), বন্দর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম জুয়েল (টিউবওয়েল), আলমগীর হোসেন (মাইক) ও মোশাঈদ রহমান (তালা)।
সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর একজন বর্তমান নারী ভাইস চেয়ারম্যান ছালিমা হোসেন (ফুটবল) এবং আরেকজন সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার (কলস)।

স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি সংসদীয় আসনে নিরপেক্ষ অবস্থান প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে স্থানীয় প্রশাসন তাদের ইতিবাচক ইমেজ তৈরি করেছে। ফলে সংসদ নির্বাচনের পর বেশ আলোচিত এই বন্দর উপজেলা নির্বাচনেও নিরপেক্ষতা ও সুষ্ঠুতা বজায় রাখা প্রশাসনের ইতিবাচক ইমেজ রক্ষার চ্যালেঞ্জ। বিএনপির ভোট বর্জনের মধ্যে দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একদিকে যখন ভোটাররা অনেকটা ভোটকেন্দ্রবিমুখ, তাতে এ উপজেলা নির্বাচনের সমাপ্তির প্রেক্ষাপট দ্বিতীয় ধাপে আরও তিন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের বিষয়ে সাধারণ ভোটারদের আস্থা তৈরি করবে। যদিও, স্থানীয় প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে তারা বদ্ধপরিকর।

এদিকে, সোমবার রাত থেকে শেষ হচ্ছে প্রচারণার নির্ধারিত সময়। নির্বাচনী বিধিমালা অনুযায়ী ভোটগ্রহণের দিন পর্যন্ত কোন প্রার্থী আর কোনো প্রচারণা, উঠান বৈঠক ও লিফলেট বিতরণ করতে পারবেন না। ফলে, শেষ মুহুর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত রয়েছেন প্রার্থীরা।

জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ভোটের দিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ ও র‍্যাবের পাশাপাশি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে বিজিবিও মোতায়েন থাকবে। তাছাড়া ৫ টি ইউনিয়নের কেন্দ্রগুলোতে ভ্রাম্যমান অবস্থায় থাকবেন ৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। নির্বাচনী এলাকায় থাকবেন একজন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটও।

জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে বন্দর উপজেলার ৩৫টি কেন্দ্রকে অতিগুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে বিশেষ নজরদারি থাকবে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আমীর খসরু।

এদিকে, বন্দরে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হকও। এ ব্যাপারে প্রশাসনিক পর্যায়ে সবধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার প্রার্থীদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় বন্দরের নির্বাচন নিয়ে প্রশাসনের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন জেলা প্রশাসক। তার বক্তব্যে অনেকটা আশ্বস্তও হয়েছেন প্রার্থীরা।

সভায় জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক বলেন, ‘নির্বাচনের দিন আমার চোখ বন্ধ থাকবে। যে যাই বলুক না কেন, আমি একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেবো। আর আমাদের সুষ্ঠু ইলেকশন করার যে মিশন তাতে আমাদের সহযোগিতা করবেন। ৮ মে বন্দরে যে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে। প্রতিটি ইউনিয়নে ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন এবং পাশাপাশি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবেও থাকবে।

গত সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনও সুষ্ঠু করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

বন্দরের নির্বাচনে কোনো প্রকার অনিয়ম হবার সুযোগ নেই বলেও মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘কেউ এক পার্সেন্টও মনের মধ্যে ধারণা রাখবেন না যে, নির্বাচন কোনোভাবে ম্যানুপুলেট হবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে আপনাদের এটা আমি বলে যাচ্ছি। যেহেতু একটা উপজেলা ইলেকশন, তাই আমাদের সকল ফোর্স এদিকেই থাকবে।’

বন্দর উপজেলায় মোট ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ৩১ হাজার ৫৬৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬৭ হাজার ৫০০ জন; নারী ভোটার ৬৪ হাজার ৬২ জন এবং হিজড়া ভোটার ২ জন।

এ নির্বাচনে ব্যালটে ভোটগ্রহণ করা হবে এবং স্বচ্ছতার জন্য ব্যালট পেপার সকালে কেন্দ্রগুলোতে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কাজী ইস্তাফিজুল হক আকন্দ।

তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে কোনো প্রকার সহিংসতা বা বিশৃঙ্খলা হয়নি। শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই এ নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারবো বলে আশা করছি।’

রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, ভোটগ্রহণ শেষে কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল রাতের মধ্যেই বন্দর উপজেলা পরিষদ কার্যালয় থেকে ঘোষণা করা হবে। পরবর্তীতে ৯ মে সকালে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে অনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়