৩০ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ২০:১২, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

আপডেট: ১৮:২৮, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

অভিনব কায়দায় ভিক্ষা, সেই টাকায় নেশা! (ভিডিওসহ)

অভিনব কায়দায় ভিক্ষা, সেই টাকায় নেশা! (ভিডিওসহ)

নুসরাত জাহান সুপ্তি (প্রেস নারায়ণগঞ্জ): ভিক্ষা বৃত্তি নতুন কিছু নয়। সুস্থ্য কি অসুস্থ্য হাত পাতলেই টাকা পাওয়া যায়। তাই কর্মক্ষম, অসুস্থ্যদের সঙ্গে সুস্থ্যরাও হাত পাতে। এতে করে অনেক সময় প্রকৃত ভিক্ষুকরা দান খয়রাত থেকে বঞ্চিত হয়। কিন্তু চোখের সামনে আহত হয়ে বা হাত পা কাটা কোন মানুষ যদি রাস্তায় বসে হাত পাতে তখন অনেক পথচারী বিষয়টি এড়িয়ে যান না। একটু বেশিই দেয়ার চেষ্টা করেন। আর তাই মানুষের এই সহানুভুতিকে পূজি করে এক শ্রেণির প্রতারক হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। নিজের হাত পা নিজেই কেটে রাস্তায় বসে পড়ছে তারা। দু:খজনক হলেও সত্য, দিন শেষে যা আয় হয়, তা দিয়ে ওই ভিক্ষুকরা রাতের আধারে হারিয়ে যায় নেশার জগতে। এমন দুই প্রতারক ভিক্ষুক ধরা পড়েছে ‘প্রেস নারায়ণগঞ্জ’ ক্যামেরায়। পুরো বিষয়টি তুলে ধরা হলো ‘প্রেস নারায়ণগঞ্জ’ এর পাঠকদের জন্য।

দুলাল ও মোকলেছ। তারা দুইজন বন্ধু। থাকে চাষাড়া রেলস্টেশনে। শহরের ব্যস্ততম পয়েন্ট চাষাড়া শহীদ মিনার অথবা সমবায় মার্কেটের সামনের ফুটপাতে ভিক্ষা করে। তবে এক স্থানে বেশিদিন নিয়মিত থাকে না। কারণ একজন মানুষ তো আর প্রতিদিন একজনকে ভিক্ষা দেন না। তাই তারা স্থান পরিবর্তন করে। এর মধ্যে দুলালের একটি পায়ের মাংস উঠে গর্ত হয়ে আছে। যে কেউ দেখলে আঁতকে উঠবে। এমন চিত্র দেখে পথচারীরা অন্য আট-দশ জন ভিক্ষুকের চেয়ে দুলালকে ৫-১০ টাকা বেশি দিয়ে যাচ্ছে। একই অবস্থা মোকলেসের। মজার বিষয় হলো পায়ের ক্ষত স্থান যাতে শুকিয়ে না যায় এ জন্য একটা মেডিসিন ব্যবহার করে তারা। কারণ ক্ষত স্থান শুকিয়ে গেলে মানুষ ভিক্ষা দিতে চায় না। এমনটা বলেছেন দুলাল ও মোকলেছ। নিজেরাই পা কেটে এমন অবস্থা তৈরী করেছে। আশ্চার্যজনক হলো ভিক্ষার সময় তারা লাঠিতে ভর করে চলাফেরা করলেও ভিক্ষা শেষে আর লাঠির প্রয়োজন হয় না। দীর্ঘদিন ধরে তারা প্রতারনার মাধ্যমে পথচারীদের কাছ থেকে এভাবেই টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

দুলাল ও মোখলেছ বলেন, অসহায় হয়ে এই পথ বেছে নিয়েছেন তারা। তবে দুলাল বলেন, আমার মা মারা গেছে আর কেউ নাই। আমার এক্সিডেন্ট হইছিল। সেই থেকে আমার এই অবস্থা। টাকার অভাবে ডাক্তার দেখাতে পারি না। আমার জায়গা-জমি সব লুট করছে। নদীর ওপার বন্দরের লাঙ্গলবদ এলাকায় আমার ১০০ কোটি টাকার সম্পদ লুট করছে। পুলিশের কাছ থেকে সাহায্য নেননি কেনো? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুলিশের কাছে গেলে টেকা লাগে।

মোকলেছও বন্ধুর মত একই কাহিনী শুনালেন। তিনি বলেন, আমার কেউ নাই। সব মইরা গেছে। মুন্সিগঞ্জে বাড়ি ছিল আমার। এক্সিডেন্ট হইয়া আমার এই অবস্থা। ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে গেছিলাম। তারা বলছে পায়ের উপরের মাংস কেটে এখানে লাগাতে হবে। টাকা নাই, টাকা হলে ডাক্তার দেখামু।

কিন্তু পথচারীদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেল ভিন্ন তথ্য। একাধিক পথচারী বলেন, অর্থ উপার্জনের জন্য এই ব্যবস্থা গ্রহন করেছে তারা। জুয়েলারী ও কসমেটিকস বিক্রেতা সজিব। তিনি বলেন, এই সড়কে বসা সবগুলোরে আমি চিনি। একজনেরও কিছু হয় নাই। সবগুলায় নিজের পা কাইটা এমন করছে। আর এই দুইটা তো সবগুলার গুরু। বহুদিন ধইরা ব্যবসা চলতাছে ওগো। সারা রাইত নেশা করে আর দিনের বেলায় টাকা কামায়। নিজের পায়ের ঘা শুকাইলে আবার নিজেই ঘা বানায়। কয়েকদিন আগে এক মহিলা আইসা বলছে আপনারে আমি ডাক্তার দেখামু সব খরচ আমার। কিন্তু রাজি হয় নাই, টেকা চায়। বলে, ডাক্তার আমি দেখাইতে পারমু, আপনে পারলে কয়টা টেকা দিয়া যান। ওনাগো পা কাটা দেইখাই মানুষ বড় বড় টাকার নোট দিয়া যায়।

ক্ষত স্থানকে দীর্ঘ স্থায়ী করার ব্যবস্থা

পা কাটার পর সেই স্থান কিছুদিনের মধ্যেই শুকিয়ে যায়। এরকম হলে পরে তাদের অর্থ উপার্জনে সংকট দেখা দিবে। এই ভেবে সময়ে সময়ে তারা একটা মেডিসিন ব্যবহার করে। যার ব্যবহারে ঘন্টাখানেক সময়ের মধ্যেই তাদের ক্ষত স্থান আগের রূপ নেয়। যা দেখিয়ে চলে তাদের প্রতারণা।

অর্থ উপার্জনের পরিমান কেমন

১০ টাকা ৫ টাকার নিচে কোন টাকা নেই। টাকায় মুঠ ভরে যায় তাদের। মুঠো ভর্তি টাকা নিয়ে ভিক্ষা করে তারা। তাদের টাকার রাখার মানিব্যাগ তো আছেই, সাথে আছে টাকা রাখার বক্স। যে বক্সে খুচরা টাকা রাখে সে। এক বিকাল বা দুপুর সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধা ৭ টা পর্যন্ত তাদের অর্থ উপার্জন এক হাজারের বেশি। সন্ধায় যাওয়ার পূর্বে আশেপাশের দোকানদার থেকে খুচরা টাকা দিয়ে হাজার, পাচঁশত টাকার নোট বানিয়ে নিয়ে যায়।

নাম না প্রকাশের শর্তে এক দোকানদার বলেন, দিনে হাজার টাকার উপরে আছে ইনকাম। আর বেশিক্ষণ লাগেও না টাকা কামাইতে। দুপুরে বা বিকালে আইসা রাইতে চইলা যায়। বেশিক্ষন থাকার দরকার কি, মিনিটে মিনিটে ইনকাম হয়। অন্য ভিক্ষুকরা এত টাকা পায় না। এই গুলায় যত টাকা পায়। বৃষ্টিতে বসে ভিক্ষা করে না তারা। আবার প্রতিদিন এক জায়গায়ও বসে না। একজায়গায় প্রত্যেকদিন দেখলে কি মানুষ টাকা দিবো? দিবো না। তয় বেশিরভাগ সময় সমবায় মার্কেটের সামনের ফুটপাতে বইসা ভিক্ষা করে। কিছু টাকা চান্দা দিয়া বসবার ব্যবস্থা কইরা নিছে।

তাদের ঠিকানা

দুলাল ও মোকলেসের ঠিকানা নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া রেলওয়ে স্টেশন। তবে যেখানে সেখানে তারা থাকে না।ষ্টেশনে থাকার সুবাদে সেখানকার ছোটখাটো ব্যবসায়ীদের সা্থে তাদের সর্ম্পক আছে।ফটোকপি মেশিন বিক্রয় ও সার্ভিসিং এর মারজানা ট্রেডার্স নামের একটি দোকানের কর্মচারীদের সাথে সম্পর্ক তৈরী করেছে। ভাল সম্পর্ক। চা খাওয়া থেকে চলে আড্ডাবাজি তাদের সাথে। তাদের চা ও সিগারেট খাওয়া দেখলে কেউ বলবে না অসুস্থ ভিক্ষুক। সেই দোকানের সামনেই প্রতিদিন তাদের বসবাস। ভিক্ষা করে এসে এখানেই চলে তাদের মাদক সেবন।

চাষাড়া রেলস্টেশন মাদকসেবীদের আবাসস্থল হওয়ার বিষয়ে চাষাড়া রেল স্টেশন মাস্টার আমিনা আক্তারের এর সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, স্টেশনে তো অনেকেই থাকে। এ বিষয়ে আমরা তো কিছু করতে পারব না। তবে নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ের পুলিশ ফাঁড়িকে এর বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য আমি একটা চিঠি পাঠাবো।

নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির এস আই এমদাদুল হক বলেন, আমরা প্রায়ই আমাদের কার্যক্রম চালাই। পিটাইয়া উঠায় দেই। আবারও যদি এমন অবস্থা হয়ে থাকে খুব দ্রুত আমি আবার ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়