২৭ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ২১:০৭, ২৩ মে ২০২১

আপডেট: ২১:৪১, ২৩ মে ২০২১

প্রশাসন বা মেম্বার নয় স্থানীয় ব্যক্তি দিলেন ক্ষতিপূরণ

প্রশাসন বা মেম্বার নয় স্থানীয় ব্যক্তি দিলেন ক্ষতিপূরণ

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: অবশেষে ১০০ প্যাকেট খাদ্য সহায়তা প্রদানের খরচ বাবদ ৬০ হাজার টাকা পেয়েছেন সেই বৃদ্ধ ফরিদ আহমদ খান। সরকারি সহায়তা চেয়ে যিনি গুনেছিলেন জরিমানা। তবে উপজেলা প্রশাসন বা স্থানীয় ইউপি সদস্য নন এই টাকা দিয়েছেন শাহীনূর আলম নামে স্থানীয় এক ধনাঢ্য ব্যক্তি। তিনি ওই এলাকার পঞ্চায়েত কমিটির উপদেষ্টা।

রোববার (২৩ মে) বিকেলে বাসায় ডেকে ফরিদ আহমদ খানের হাতে টাকা তুলে দেন শাহীনূর আলম। প্রশাসনের অনুরোধে নিজের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে এই টাকা দিয়েছেন বলে জানান তিনি। যদিও সকালে জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাইন বিল্লাহ জানিয়েছিলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ওই টাকা ফরিদ আহমদের পরিবারকে প্রদান করা হবে।

শাহীনূর আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘ফরিদ পৈত্রিক সূত্রে এই বাড়ি পাইছে। তাদের ছয় ভাই ও এক বোন এই বাড়ির মালিক। সে একা না। তার পরিবারে অবিবাহিত এক মেয়ে ও প্রতিবন্ধী এক ছেলে আছে। এক মেয়েরে বিয়ে দিছেন। সে কারখানার মালিকও না, সেখানে চাকরি করে। তার সম্পর্কে তথ্য ভুল গেছে প্রশাসনের কাছে। এই কারণে তারে ইউএনও সাহেবা ১০০ ব্যাগ খাদ্যসামগ্রী দেওয়ার নির্দেশ দেন। এই খাদ্য দিতে গিয়ে স্বর্ণ বিক্রি করতে হইছে, টাকা ধার করতে হইছে। এই অবস্থায় আমাকে প্রশাসন থেকে টেলিফোন করে। আমি যেহেতু বিত্তবান তাই সহায়তার জন্য আমাকে সবাই ফোন করে। বিকেলে আমি ফরিদ, তার স্ত্রী ও ভাতিজাকে ডেকে এনে ৬০ হাজার টাকা দিছি।’

তিনি আরও বলেন, ব্যক্তিগত তহবিল থেকে তিনি এই টাকা প্রদান করেন। তবে প্রশাসনিক কোন কর্মকর্তা তাকে এই টাকা প্রদানের জন্য অনুরোধ করেছেন তা সাংবাদিকদের জানাতে রাজি হননি শাহীনূর আলম। তবে স্থানীয়রা বলছেন, শাহীনূর আলম নিজে যেহেতু ফরিদ আহমদের পারিবারিক অবস্থা জানতেন তাহলে পূর্বেই কেন সহায়তা করলেন না? নাকি প্রশাসনের চাপে কিংবা কোনো সুবিধা নিতে এই কাজ করেছেন, এমন প্রশ্নও তুলেছেন এলাকাবাসী। তাদের মতে, স্বার্থ ছাড়া শাহীনূর আলম এক পয়সাও খরচ করেন না। যদিও শাহীনূর আলমের দাবি ভিন্ন। তিনি নিজেকে একজন দানবীর বলেই সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করেছেন।

এদিকে ফরিদ আহমদের পরিবারের লোকজন জানান, টাকা দেওয়ার সময় প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ফরিদ আহমদের কাছ থেকে কাগজে একটি স্বাক্ষর নিয়েছেন। ওই কাগজে লেখা ছিল, তিনি প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ভুল তথ্য দিয়েছিলেন। তার ভুলের কারণেই তিনি শাস্তির মুখে পড়েছিলেন। কাগজে স্বাক্ষর দেওয়ার বিষয়টি ফরিদ আহমদ নিজেও নিশ্চিত করেছেন। তবে বৃদ্ধ ফরিদ বলেন, ‘ভুল কার হয়েছে তা আল্লাহ দেখছেন। কিন্তু আমার যে সম্মান গেল এই ক্ষতিপূরণ কে দিবো? আমি রাস্তায় বাইর হইলে মানুষ আমার দিকে তাকাইয়া থাকে। আমার তখন মাটির নিচে ঢুইকা যাইতে মন চায়।’

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের নাগবাড়ি শেষ মাথা এলাকার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ ফরিদ আহমদ খান। ঘরে তার ১৬ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী ছেলে, স্নাতক পড়ুয়া মেয়ে ও স্ত্রী রয়েছে। এক সময়ে স্থানীয় এক হোসিয়ারি কারখানায় কাটিং মাস্টার হিসেবে কাজ করতেন। তিনবার ব্রেন স্ট্রোক করার পর ক্ষীণ দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন ফরিদ এখন কাজ করতে পারেন না। ওই কারখানাতেই শ্রমিকদের উপর নজরদারি রাখা বাবদ মাসে ৮ হাজার টাকা পান তিনি। তাতে কষ্টেসৃষ্টে চলছিল তার সংসার। তবে করোনাকালীন সময়ে পড়েছেন মহাসংকটে। একরকম নিরুপায় হয়েই জাতীয় কলসেন্টারের ৩৩৩ নম্বরে কল করে খাদ্য সহায়তা চান ফরিদ। কিন্তু সহায়তা তো পাননি, উল্টো তিনি চারতলা ভবনের মালিক এমন তথ্যের কারণে জরিমানা গুণতে হয়েছে তাকে। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফা জহুরার নির্দেশে তাকে ১০০ জনের মাঝে চাল, আলু, ডাল, লবন ইত্যাদি খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করতে হয়েছে। নিজের স্ত্রী ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রীর গয়না বন্ধক দিয়ে ও ধার-দেনা করে বিতরণের জন্য এসব খাদ্যসামগ্রী কিনেছেন বলেও জানান। এমনকি স্থানীয় ইউপি সদস্য আইয়ুব আলীর থেকেও ধার নিয়েছিলেন ১০ হাজার টাকা।

ফরিদ আহমদের করুণ অবস্থার কথা স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে প্রচার হলে এ নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ক্ষতিগ্রস্ত ফরিদ আহমদের পরিবারকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। রোববার সকালে যোগাযোগ করা হলে জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেছিলেন, ফরিদ উদ্দিনের পরিবারের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তাদের যে পরিমাণ খরচ হয়েছে সেসব ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে আজই (রোববার) তাদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়