১৯ মার্চ ২০২৪

প্রকাশিত: ২২:০২, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১

আপডেট: ২২:১১, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১

আওয়ামী লীগের কর্মীসভায় বেড়েছে দ্বন্দ্ব

আওয়ামী লীগের কর্মীসভায় বেড়েছে দ্বন্দ্ব

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কর্মীসভা চলছে। সাংসদ একেএম শামীম ওসমানের আহ্বানে অনুসারী নেতা-কর্মীরা এই সভা পরিচালনা করছেন। মুখে নির্বাচনী কর্মীসভার বিষয়টি সাংসদ স্বীকার না করলেও রোজকার সভার অতিথিদের বক্তব্যে ওই একটি বিষয়ই ঘুরে-ফিরে আসে। আর নির্বাচন আসন্ন বলেই এসব কর্মীসভা নিয়ে দলের নেতা-কর্মী, সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে গুঞ্জন। কর্মীসভায় প্রার্থী ঘোষণা, বর্তমান কাউন্সিলরের অনুপস্থিতিসহ নানা বিষয়ে অনেকের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

গত ৬ সেপ্টেম্বর দলীয় নেতা-কর্মীদের চাষাঢ়ায় রাইফেলস্ ক্লাবে ডাকেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ একেএম শামীম ওসমান। তিনি নাসিকের ২৭টি ওয়ার্ডে কর্মীসভার আয়োজনের নির্দেশ দেন অনুসারী নেতা-কর্মীদের। আওয়ামী লীগের সাংসদ জানান, আগামী ১০ সেপ্টেম্বর থেকে এই কর্মীসভা শুরু হবে। চলবে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। দৈনিক তিনটি ওয়ার্ডে এই কর্মীসভা চলবে। কর্মীসভার খোঁজখবর তিনি নিজে রাখবেন বলেও জানান।

তিনি বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন তো ডিসেম্বর মাসে। ডিসেম্বর মাসের আগেই কত খেলা হয় দেখেন। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২৭টা ওয়ার্ডে আগামী ৯ দিন কর্মীসভা হবে। তিনটা ওয়ার্ডে কর্মীসভা হবে একদিনে। জনসভা না কর্মীসভা। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগের নেতার কার পায়ের তলে কতটুকু মাটি আছে তা আমি নিজ চোখে দেখতে চাই। যার পায়ের তলে মাটি নাই, সে নেতাগিরি ছাড়েন। আমি কর্মী, আমি কর্মীরে চিনি।’

শামীম ওসমানের এই ঘোষণার পর ১০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় ওয়ার্ডভিত্তিক কর্মীসভা। গত কয়েকটি কর্মীসভায় ঘুরে ঘুরে বক্তব্য রেখেছেন শামীম ওসমানের অনুসারী নেতা মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি চন্দন শীল, সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. খোকন সাহা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল প্রমুখ। ব্যানারে আওয়ামী লীগের কর্মীসভা উল্লেখ থাকলেও কোনো সভায়ই জেলা কিংবা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতিকে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়নি। সভাপতিরা না থাকলেও এই কর্মীসভা নিয়ে উৎসাহিত ছিলেন আসন্ন সিটি নির্বাচনে আগ্রহী কাউন্সিলর প্রার্থীরা। এদিকে কর্মীসভায় অতিথিরা তাদের পছন্দমতো নেতাদের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করায় অন্যদের মধ্যে হয়েছে ক্ষোভের সঞ্চার।

কর্মীসভাগুলোতে অংশ নেওয়া নেতা-কর্মীদের সূত্রমতে, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে অনুষ্ঠিত কর্মীসভাগুলোতে উৎসাহে অংশ নিচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তবে অনেকেই সভা শেষে চাপা ক্ষোভ নিয়ে ফিরেছেন। একাধিক কর্মীসভায় এই ক্ষোভের জন্ম হয়েছে আসন্ন নির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণা করে বক্তব্য দেওয়ায় অতিথিদের প্রতি। সিদ্ধিরগঞ্জের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের এক কর্মীসভায় প্রার্থীর নাম ঘোষণা নিয়ে উত্তেজনারও সৃষ্টি হয়।

সূত্রমতে, শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে কর্মীসভার আয়োজন করা হয়। ওই সভায় বর্তমান কাউন্সিলর রুহুল আমিন মোল্লাকে আসন্ন নির্বাচনেও প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন অনুষ্ঠানের সঞ্চালক সাবেক ছাত্রলীগ মাহবুব। এ নিয়ে অন্য সম্ভাব্য প্রার্থী মোহসীন ভূঁইয়ার অনুসারী কর্মী-সমর্থকরা ক্ষুব্দ হয়ে ওঠে। সভাস্থলে তৈরি হয় উত্তেজনা। কাউন্সিলর রুহুল ও সম্ভাব্য প্রার্থী মোহসীনের কর্মীদের মধ্যে হৈ-চৈ, উত্তেজনা চলে বেশ কিছুক্ষণ।

এদিকে নাসিকের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে আয়োজিত কর্মীসভায় উপস্থিত ছিলেন না খোদ বর্তমান কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি মতিউর রহমান মতি। কর্মীসভার আয়োজন করেন সাবেক কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম মন্ডল। বর্তমান ও সাবেক এই কাউন্সিলরের মধ্যে দ্বন্দ্ব সম্পর্কে এলাকার সকলেই অবগত। কর্মীসভার আয়োজন নিয়ে সেই দ্বন্দ্বেরই প্রতিফলন দেখা গেছে। অন্যদিকে ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর সাইফুদ্দিন আহমেদ দুলাল প্রধানের নাম ঘোষণা করা হয়। যদিও এই ওয়ার্ডে হুমায়ূন কবির মৃধা, আনোয়ার হোসেন আনুসহ আরও কয়েকজন সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন। নাসিকের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডেও প্রার্থী ঘোষণা নিয়ে আলোচনা রয়েছে৷ যদিও ওই ওয়ার্ডে সাবেক কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা মনিরুজ্জামান মনির পুনরায় প্রার্থী হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

ক্ষুব্দ নেতা-কর্মীরা বলছেন, খোদ সাংসদ শামীম ওসমানের নির্দেশনা ছিল, কারও নাম কর্মীসভায় যাতে ঘোষণা করা না হয়। তবে কর্মীসভায় সরাসরি কিংবা পরোক্ষভাবে বিভিন্নজনের নাম আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হচ্ছে। কর্মীসভায় নেতাদের কাউকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বেশি আবার কেউ রয়েছেন গুরুত্বের বাইরে৷ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি বর্তমান সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী অনুসারী নেতা-কর্মীরাও এসব কর্মীসভায় উপেক্ষিত৷ এসব নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যেই দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে। কর্মীসভার আয়োজন করে নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করার বিপরীতে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করেছেন নেতারা।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়