মায়ের সাথে মুক্তির ফেরা হলো না

সৌরভ হোসেন সিয়াম (প্রেস নারায়ণগঞ্জ): কিশোরী মুক্তি আলীফ বেলী (১৪) তার মা অ্যাড. আয়েশা রহমান সিদ্দীকির সাথে থাকতেন আমেরিকার নিউইয়র্কে। সেখানেই একটি বিদ্যালয়ে ‘ও’ লেভেলে নবম শ্রেণিতে পড়তো। মাস দেড়েক পূর্বে মায়ের সাথেই বাংলাদেশে আসেন। ফিরতি ফ্ল্যাইট ছিল চলতি মাসের ২২ তারিখ। কিশোরী মুক্তির আর ফেরা হবে না। শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুর দেড়টার দিকে মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে তার। নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় ওই দুর্ঘটনায় মারা গেছেন মুক্তির বাবা ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেনও (৪৫)।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, রিকশায় ছিলেন আলতাফ হোসেন ও তার মেয়ে মুক্তি আলীফ বেলী। তাদের রিকশাটি শহরের জামতলা এলাকা থেকে চাষাঢ়ার দিকে যাচ্ছিলো। চাষাঢ়ায় জেলা পরিষদের ডাকবাংলোর মোড়ে রিকশাটিকে চাপা দেয় দ্রুতগামী একটি ট্রাক (কুমিল্লা-ট: ৩৪২৫)। ঘটনাস্থলে আরোহী বাবা-মেয়ে ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে মারা যান। আহত হন রিকশার চালকও। তবে তার নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

স্থানীয়দের মাধ্যমে ঘটনাস্থলে পৌঁছে বাবা-মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। বিকেলে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে নিহতের স্বজনদের আহাজারি শোনা যায়। হাসপাতালের প্রাঙ্গণে কথা হয় নিহত মুক্তির চাচী সাবিকুন্নাহের সাথে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, পড়াশোনার জন্য চার বছর পূর্বে মায়ের সাথে নিউইয়র্কে চলে যায় মুক্তি। সেখানেই একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতো সে। দেড় মাস পূর্বে দেশে আসেন মা ও মেয়ে। মুক্তি মায়ের সাথে শহরের জামতলা এলাকায় খালার বাড়িতে ছিলেন। ঘটনার দিন দুপুরে খালার বাসা থেকে তার বাবা তাকে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে নেওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মুক্তির বাবা আলতাফ হোসেন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার শম্ভুপুরা ইউনিয়নের বাসিন্দা। সেখানেই তিনি একটি ফার্মেসি চালাতেন। প্রায় ছয় বছর পূর্বে আলতাফ হোসেনের সাথে আয়েশা রহমানের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এরপরই মেয়েকে নিয়ে নিউইয়র্কে চলে যান আয়েশা। সেখানেই একটি স্কুলে ভর্তি করান মেয়েকে। মুক্তি তার বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। দীর্ঘদিন পর বাবা-মেয়ের দেখা হয়েছিল। এটাই তাদের শেষ দেখায় পরিণত হলো।
সাবিকুন্নাহার জানান, দেশে ফিরে খালার বাসায় ছিলেন মা ও মেয়ে। চলতি মাসের ২২ তারিখ নিউইয়র্কে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু তা আর হবে না। ট্রাকচাপার ঘটনায় মুক্তি ও তার বাবা আলতাফের মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন নিহতের স্বজনরা।

ট্রাকচাপায় বাবা-মেয়ের নিহতের ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন ফতুল্লা মডেল থানার ওসি মো. রকিবুজ্জামান। তিনি জানান, নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। স্থানীয়দের সহযোগিতায় ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে চালককেও। এই ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।