১৯ মে ২০২৪

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ২১:১১, ৭ মে ২০২৪

শঙ্কা নিয়েই বন্দরে ভোট, সুষ্ঠু নির্বাচনে প্রশাসনের প্রস্তুতি

শঙ্কা নিয়েই বন্দরে ভোট, সুষ্ঠু নির্বাচনে প্রশাসনের প্রস্তুতি

রাত পোহালেই নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। এ নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে সবধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কাজী ইস্তাফিজুল হক আকন্দ। এ নির্বাচন উপলক্ষে ইতোমধ্যে ৫১৪ জন পুলিশ সদস্য, ২ প্ল্যাটুন (প্রতি প্ল্যাটুনে ২০ সদস্য) বিজিবি এবং র‍্যাব নির্বাচনী এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে।

এছাড়া, আগামীকাল বুধবার (৮ মে) ভোটগ্রহণের দিন ৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও একজন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটও দায়িত্ব পালন করবেন। ৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মধ্যে পাঁচজন পাঁচটি ইউনিয়নে এবং বাকি চারজন পুরো উপজেলাজুড়ে টহল দেবেন।

শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিঘ্নিত করে সুষ্ঠু নির্বাচনে কেউ বাধা হয়ে দাঁড়ালে তার বিরুদ্ধে তড়িৎগতিতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা।

ইতোমধ্যে কেন্দ্রগুলোতে নির্বাচনী সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হলেও ভোটগ্রহণ কার্যক্রমে স্বচ্ছতা রাখার লক্ষ্যে ব্যালট পেপার ভোটগ্রহণের দিন ভোরে পৌঁছাবে বলে জানান তিনি।

বন্দর, মুছাপুর, ধামগড়, কলাগাছিয়া, মদনপুর; এই পাঁচ ইউনিয়ন নিয়ে প্রায় ৫৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বন্দর উপজেলা তিন দিক দিয়ে শীতলক্ষ্যা, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র ও ধলেশ্বরী নদী দিয়ে বেষ্টিত।

এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন- বর্তমান চেয়ারম্যান বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ রশীদ (দোয়াত-কলম), সাবেক চেয়ারম্যান মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আতাউর রহমান মুকুল (চিংড়ি মাছ), মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান জেলা জাতীয় পার্টির সহসভাপতি মাকসুদ হোসেন (আনারস) এবং তার ছেলে মাহমুদুল হাসান শুভ (হেলিকপ্টার)। যদিও মাহমুদুল হাসান তার বাবার ‘ডামি’ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন।

এদিকে, ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন- দুবারের ভাইস চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টির জেলা কমিটির সভাপতি সানাউল্লাহ সানু (উড়োজাহাজ), বন্দর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম জুয়েল (টিউবওয়েল), আলমগীর হোসেন (মাইক) ও মোশাঈদ রহমান (তালা)।
সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর একজন বর্তমান নারী ভাইস চেয়ারম্যান ছালিমা হোসেন (ফুটবল) এবং আরেকজন সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার (কলস)।

এ নির্বাচনকে ঘিরে বড় ধরনের সহিংসতার ঘটনা না ঘটলেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী এমএ রশিদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর প্রচারণায় একাধিক হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাছাড়া, রশিদকে সমর্থন দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের উদ্দেশ্য করে স্থানীয় দুই সংসদ সদস্যের দেওয়া বক্তব্যের কারণে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কার কথা জানান একাধিক প্রার্থী।

আনারস প্রতীকে চেয়ারম্যান প্রার্থী মাকসুদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের কর্মী ও নির্বাচনী এজেন্টদের নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। প্রচারণায়ও বাধা দিয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর লোকজন। পরিস্থিতি বিবেচনায় নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে, প্রশাসন চাইলে একটা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ইলেকশন হওয়া সম্ভব।’

একই শঙ্কার কথা জানালেন আতাউর রহমান মুকুলও। চিংড়ি প্রতীকের এ চেয়ারম্যান প্রার্থী বলেন, গত তিনদিনে তিনবার তার প্রচারণায় হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটেছে। তবে এখন পর্যন্ত কোন হামলাকারী গ্রেপ্তার হয়নি। সমর্থককে তুলে নিয়ে গিয়ে হুমকি-ধমকি দিয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর লোকজন। কিন্তু প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

‘ভোটাররা ভোট দিতে কেন্দ্রে যেতে আগ্রহী। কিন্তু সরকারি দলের লোকজনের কার্যকলাপ তো ভালো না। যেভাবে তারা হামলা করছে, কর্মীদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত। বন্দরের কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণকারী খান মাসুদ নানা জায়গায় হুমকি দিচ্ছে। প্রশাসন এসব নিয়ে কাজ করছে না। দুই এমপির বক্তব্য নিয়েও ভোটারদের মধ্যে শঙ্কা আছে।’

নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ভোটের দিন প্রশাসনের কার্যকরী ভূমিকা জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

দুই প্রার্থী সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করলেও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী এমএ রশিদ জানালেন, নির্বাচনী পরিবেশ এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু দেখভেন তিনি। প্রশাসনের ভূমিকাতেও সন্তুষ্ট তিনি।

তবে, তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মাকসুদ হোসেনের বিরুদ্ধে ‘ভোটারদের মাঝে টাকা বিলির’ অভিযোগ করেন।

রশিদ বলেন, ‘ভোটারদের প্রভাবিত করতে দুই হাতে টাকা ছড়াচ্ছেন মাকসুদ হোসেন। এটা ঠেকাতে হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে আমি বিজয়ী হবো। এ ব্যাপারে আমি শতভাগ নিশ্চিত।’

বন্দর উপজেলায় মোট ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ৩১ হাজার ৫৬৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬৭ হাজার ৫০০ জন; নারী ভোটার ৬৪ হাজার ৬২ জন এবং হিজড়া ভোটার ২ জন।

বুধবার সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ব্যালট পেপারে ৫৪টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়