আদমজী জুট মিলস বন্ধের ১৭ বছর
প্রেস নারায়ণগঞ্জ: এশিয়ার বৃহত্তম জুট মিল আদমজী জুট মিলস বন্ধের ১৭ বছর আজ (৩০ জুন)। আদমজীর উৎপাদিত পণ্য সুনাম অর্জন করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। আদমজী জুট মিলে উৎপাদিত চট, কার্পেটসহ বিভিন্ন প্রকার পাটজাত দব্য দেশের চাহিদা পূরণ করে রপ্তানি হতো চীন, ভারত, কানাডা, আমেরিকা, থাইল্যান্ডসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে।
রানী এলিজাবেথ থেকে শুরু করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধানরা আদমজী জুট মিলস পরিদর্শন করে মুগ্ধ হয়েছেন। তিন শিপটে ২৪ ঘন্টা চালু থাকতো এই মিল। তৎকালীন পাকিস্তানের ২২ ধনাঢ্য পরিবারের অন্যতম আদমজী পরিবারের তিন ভাই ওয়াহেদ আদমজী ওরফে দাউদ আদমজী, জাকারিয়া আদমজী ও গুল মোহাম্মদ যৌথভাবে ১৯৫০ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম তীরে ২৯৪ দশমিক ৮৮ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠা করেন আদমজী জুট মিলস। ১৯৫১ সালের ১২ ডিসেম্বর ১৭০০ হেসিয়ান ও ১০০০ সেকিং লুম দিয়ে এই মিলের উৎপাদন শুরু হয়।
একসময়ের আদমজী মিল
এই মিলকে ঘিরে গড়ে উঠে একটি নগর। যার নাম হয় আদমজী নগর। কোন কিছুর জন্যই শ্রমিকদের মিল বাউন্ডারীর বাহিরে যেতে হতো না। সবকিছুই ছিল এক ক্যাম্পারের ভেতর। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সমৃদ্ধ এক মনোরম পরিবেশে অবস্থিত মিলটিকে ঘিরে লাখো মানুষের জীবিকা নির্বাহ হতো। মারামারি-হানাহানি যেমন ছিল, তেমনি শিক্ষা-খেলাধূলা-সাংস্কৃতিক চর্চা কোন কিছুতেই পিছিয়ে ছিল না আদমজী। কৃষ্ণ চুড়ার লাল আভায় রঙ্গিন হতো আদমজীর আকাশ। নয়টি বিশালকার পুকুর আদমজীর শ্রমিক-কর্মচারীদের ক্লান্তি দুর করতো। কিন্তু সব কিছুই আজ অতীত স্মৃতি।
আদমজী মিলে কর্মব্যাস্ত শ্রমিকরা
শ্রমিক ও মূলতঃ বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর বাধা সত্ত্বেও ২০০২ সালের ৩০ জুন তৎকালীন বিএনপি সরকার লোকসানের অজুহাতে পৃথিবীজুড়ে ঐতিহ্যবাহী মিলটি চিরতরে বন্ধ করে দেয়। থেমে যায় মিলের চাকা। মুহুর্তেই চাকরী হারিয়ে বেকার হয়ে পড়ে প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক কর্মচারী ও কর্মকর্তা। মিল ঘিরে গড়ে উঠা বহু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী গুটিয়ে নেয় তাদের ব্যবসা। থমকে যায় তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন। কিন্তু দীর্ঘ ১৭ বছরেও আদমজীর স্মৃতি ভুলতে পারছেনা আদমজীর শ্রমিক-কর্মচারীরা। এখনো তারা মিলের স্মৃতি হাতড়ে বেড়ান।
এখনকার আদমজী ইপিজেড
বন্ধ হয়ে যাওয়া আদমজী পাটকলের জায়গায় আদমজী ইপিজেড (আদমজী রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল) তৈরি করা হয়। আদমজী ইপিজেড ২০০৬ সালের ৬ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে বর্তমানে ৫৮ হাজার ২১২ জন হাজার শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তা কাজ করছে। এর মধ্যে দুই শতাধিক বিদেশী কর্মকর্তা-কর্মচারীও রয়েছেন।এই ইপিজেড থেকে গত ১৩ বছরে (ডিসেম্বর-২০১৮ইং পর্যন্ত) বিদেশে রফতানি করা হয়েছে ৩৬৬০.২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পন্য।
ইপিজেডের ওয়েবসাইট ও নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা গেছে, ২৪৫.১২ একর জমির ওপর আদমজী ইপিজেড (এইপিজেড) স্থাপিত হয়েছে। ইপিজেডের মোট প্লটের সংখ্যা ২২৯টি। ৪৮টি দেশী-বিদেশী শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। প্রতিটি প্লটের আয়তন ২ হাজার বর্গমিটার। কোন কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান ১০ এর অধিকও প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। এসব কারখানায় গার্মেন্টস, জিপার, কার্টন, হ্যাঙ্গার, লেভেল, ট্যাগ, জুতা, সোয়েটার, টেক্সটাইল, মোজা, জুয়েলারি, পলি ও ডায়িংসহ ইত্যাদি পণ্য উৎপাদন হচ্ছে, যা ১০০ ভাগ রফতানিযোগ্য পণ্য। হংকং, কানাডা, জাপান, রোমানিয়া, সিঙ্গাপুর, জার্মানি, ইউইএ, আমেরিকা, থ্যাইল্যান্ড, ভারত, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, ইউক্রেন, দক্ষিণ কোরিয়া, কুয়েত, পুর্তুগাল, চীন ও মরিশাসসহ বেশ কয়েকটি উন্নত দেশ এ ইপিজেডে বিনিয়োগ করেছে।
প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম