২৭ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ২০:৪৪, ১৫ এপ্রিল ২০২০

দুশ্চিন্তা ও আতঙ্কে দিন কাটছে না’গঞ্জের ক্রীড়াবিদদের

দুশ্চিন্তা ও আতঙ্কে দিন কাটছে না’গঞ্জের ক্রীড়াবিদদের

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জে করোনা পরিস্থিতি খারাপ থেকে আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। দ্রুতগতিতে বাড়ছে সংক্রমণ, আক্রান্তের সংখ্যা। বড় হচ্ছে মৃতের তালিকা। সর্বশেষ তথ্যমতে, জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৪ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ১৬৯ জন। লকডাউন অবস্থায় রয়েছে পুরো নারায়ণগঞ্জ।

জেলার অন্যান্যদের মত আতঙ্কে গৃহবন্দি দিন কাটাচ্ছেন নারায়ণগঞ্জের ক্রীড়াবিদরাও। জেলার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে জাতীয় ফুটবল দলের তপু বর্মণ-ইয়াসিন আরাফাত, ক্রিকেটার নাজমুল অপু-রনি তালুকদার, মোহাম্মদ শহীদ, গ্র্যান্ড মাস্টার দাবাড়ু আবদুল্লাহ আল রাকিব, ব্যান্ডমিন্টনের নারী চ্যাম্পিয়ন নারায়ণগঞ্জের পুত্রবধু শাপলা আক্তারের দিন কাটছে ভীষণ দুশ্চিন্তায়।

সেন্টারব্যাক তপু বর্মণের বাড়ি সিদ্ধিরগঞ্জ লক্ষ্মীনারায়ণ কটনমিলস এলাকায়। সেখানেই বন্দিদশায় দিন কাটছে বসুন্ধরা কিংসের এই ডিফেন্ডারের। মহামারীর এ সময়ে ফুটবল নিয়ে খুব একটা না ভাবলেও যতটুকু পারছেন ফিটনেস নিয়ে কাজ করছেন তপু। তপু বলেন, ‘প্রতিটি মুহূর্তই আতঙ্কে কাটছে। চারদিক লকডাউন। নারায়ণগঞ্জের পরিস্থিতি প্রতিদিনই খারাপ হচ্ছে। একের পর এক খারাপ খবর পাচ্ছি। এই অবস্থায় ফুটবল নিয়ে ভাবতে পারছি না। বেঁচে থাকলে ফুটবল খেলা যাবে। এখন আমাদের আগে দরকার সচেতন হওয়া। সচেতন না হলে মৃত্যুর মিছিল রুখতে পারবো না। আমাদের প্রত্যেকের সচেতন হয়ে সরকারি সকল আদেশ-নির্দেশ মেনে ঘরে থাকাতে হবে।’

কদমতলীর আরেক ডিফেন্ডার ইয়াসিন আরাফাত অবশ্য অতটা ভীত নন। তিনি বলেন, ‘মানুষ আস্তে আস্তে সচেতন হচ্ছে। ঘরে থাকতে শুরু করেছে। এভাবে কিছুদিন আমরা ঘরে থাকতে পারলেই করোনো ভাইরাসের প্রকোপ কমে যাবে। সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’

আক্রান্তের সংখ্যা এতবেশি হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইয়াসিন বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ একটি শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকা। সারাদেশ থেকে লাখ লাখ মানুষ এখানে কাজের সন্ধানে আসেন। ঘনবসতি হওয়ার কারণেই ক্লাষ্টার নগরীতে পরিণত হয়েছে। এখানে নারায়ণগঞ্জের জনগণের দোষ কোথায়?’

তবে ঘরে বসে নেই ক্রিকেটাররা। নিজেদের সাধ্য-সামর্থ্যের মধ্যে যতটা সম্ভব পাশে দাঁড়াচ্ছেন তারা। এরই মধ্যে জাতীয় দলে খেলা ব্যাটসম্যান রনি তালুকদার ৫০০ পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। জাতীয় ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবালকে সঙ্গে নিয়ে ৭০০ দরিদ্র পরিবারকে খাবার দিয়েছেন আরেক ক্রিকেটার নাজমুল ইসলাম অপু। অসহায় পরিবারে পাশে দাঁড়ালেও স্বস্তিতে নেই জাতীয় টি-টোয়েন্টি দলের এই ক্রিকেটার। করোনা আক্রাস্ত হয়ে প্রথম মারা যাওয়া ব্যক্তির বাড়ি অপুর পাশের গ্রাম রসুলবাগ। তাইতো নিজের গ্রাম ফরাজীকান্দাকে নিরাপদ করতে নিয়েছেন নানা কার্যক্রম। এরপরেও মানুষকে ঘরে রাখা যাচ্ছে না। তারা প্রয়োজন ছাড়াই বের হচ্ছে বাসা থেকে। এ নিয়ে অপু বলেন, ‘এত কিছুর পরেও মানুষকে সর্তক করতে পারছি না। ভয় হচ্ছে। বিশেষ করে আমাদের জেলায় এটি যেভাবে বিস্তার লাভ করছে আল্লাহ জানেন আমাদের কপালে কী লেখা আছে।’

দাবায় বাংলাদেশের পাঁচ গ্র্যান্ড মাস্টারের একজন নারায়ণগঞ্জের আবদুল্লাহ আল রাকিব। নিজের জেলা করোনা ভাইরাসের ক্লাষ্টার নগরীতে পরিণত হওয়াটা মানতে পারছেন না তিনি। এনিয়ে রাকিব বলেন, আমরা শুরু থেকেই সচেতন ছিলাম না। প্রথম যে তিনজন করোনা রোগী ধরা পড়েছিল তারা দু’জন ছিল নারায়ণগঞ্জের। আমরা যদি তখনই সতর্ক হতাম তাহলে আজ এই অবস্থা হতো না।’

করোনার বিস্তার রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো কঠোর হওয়ার পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জে করোনা টেস্টে ল্যাব ও একটি ভালো মানের করোনা চিকিৎসা কেন্দ্র প্রয়োজন বলে মনে করেন রাকিব। ঘরে বই পড়ে আর মা’র সঙ্গে আড্ডা-গল্পে সময় কাটছে রাকিবের। প্রায় একমাস গৃহবন্দি থেকে তিনি বলেন, ‘আমরা যারা দাবাড়ু তারা আসলে ঘরে থেকেই অভ্যস্ত। আমাদের ট্রেনিং টুর্নামেন্টে সবই ইনডোরে হয় বিধায় এসবে আমরা অন্যদের চেয়ে কিছুটা অভ্যস্ত। তারপরেও এই সময়টাকে আমি নিজেদের তৈরি করার সময় বলবো। যখন সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে, আমরা নতুন, পরিশুদ্ধ মানুষরূপে সমাজে ফিরতে পারি- সেটাই সকলের চাওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।’

পাবনার মেয়ে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন শাপলা আক্তার, হাজীগঞ্জের ওয়াহিদুজ্জামান রাজুকে বিয়ে করে স্থায়ী হয়েছেন নারায়ণগঞ্জে। ব্যান্ডমিন্টনের এই দম্পত্তি প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে আছেন গৃহবন্দি। ঘরে নামাজ কালাম পড়ে ও সংসারের কাজ করে সময় কাটছে শাপলা আক্তারের। আর তাকে সহায়তা করছেন স্বামী রাজু।

শাপলা জানান, আল্লাহই পারেন কেবল এই ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা করতে। এজন্য আমাদের প্রত্যেকের উচিত নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া। এছাড়া এই মুহূর্তে যে যেখানে আছে, তাকে সেখানে থাকার অনুরোধ করেছেন সাতবারের ট্রিপল ক্রাউন জেতা এই নারী শাটলার।’

দীর্ঘদিন জাতীয় দলে খেলা ও বর্তমানে ঢাকা আবাহনীর ফুটবলার ওয়ালী ফয়সালের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ার জিমখানায়। তিনি বলেন, এখানকার মানুষ আগে সচেতন ছিল না। সচেতন থাকলে এই পরিস্থিতি হতো না। করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পরও ঘুরে বেড়িয়েছে অনেকে। এখন সবাই বুঝতে পারছে এটা ঠিক হয়নি। তাঁর এলাকা পাইকপাড়ার ভেতরে একজন মারা গেছেন। পাশেই দুজন মারা যান। গোটা এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। সবাইকে সচেতন থাকার ডাক দিয়ে ওয়ালী যোগ করেন, নিজের ও পরিবারের সুস্থতার জন্য প্রতিটি মানুষেরই উচিত এখন ঘরে থাকা।

আবাহনীর সুলতান মাহমুদ শাকিল, জাতীয় ক্রিকেটার মোহাম্মদ শহীদদের আতঙ্কে দিন কাটছে নিজেদের ঘরে। ঘরে বসেই প্রিয় শহর নারায়ণগঞ্জকে করোনামুক্ত করতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ করেছেন তারা।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়