এবার সোনারগাঁয়েও আসছেন না মাওলানা আজহারী
প্রেস নারায়ণগঞ্জ: আলোচিত ইসলামী বক্তা মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি সোনারগাঁ উপজেলার সনমান্দি ইউনিয়নের চকের ধুমবাড়ি এলাকায় এক মাহফিলে আসার কথা ছিল। কিন্তু রুপগঞ্জের পরে এবার সোনারগাঁয়েও আসছেন না আলোচিত-সমালোচিত বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী।
এর আগে গত ৩১ জানুয়ারি রূপগঞ্জের তারাব পৌরসভার বরপা এলাকায় তার আসার কথা ছিলো। সেখানে বায়তুল্লাহ জামে মসজিদ উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত ওয়াজ মাহফিলে তার বয়ান করার কথা ছিলো। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনুমতি না দেয়ায় মাহফিল বন্ধ করেন আয়োজক কমিটি।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক বার্তায় মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত তার সকল তাফসির প্রোগ্রাম স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছেন। এরফলে সোনারগাঁয়ে আসা হলোনা তাঁর। এই সময়ের মধ্যে তিনি রিসার্চের কাজে মালয়েশিয়ায় ফিরে যাচ্ছেন।
ফেসবুকে তিনি লিখেন, ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ.., প্রিয় দ্বীনি ভাই ও বোনেরা। পারিপার্শ্বিক কিছু কারণে, এখানেই এ বছরের তাফসির প্রোগ্রামের ইতি টানতে হচ্ছে। তাই, মার্চ পর্যন্ত আমার বাকি প্রোগ্রামগুলো স্থগিত করা হলো। রিসার্চের কাজে আবারও মালয়েশিয়া ফিরে যাচ্ছি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সুযোগ করে দিলে,আবারও দেখা হবে ও কথা হবে কুরআনের মাহফিলে ইনশাআল্লাহ।’
‘এ বছর বেশির ভাগ প্রোগ্রামগুলোতেই পারিবারিক ও সামাজিক ক্রাইসিস নিয়ে কথা বলেছি, পাশাপাশি কয়েকটি সূরার তাফসিরও করেছি। আশা করি, আলোচনাগুলো থেকে আপনারা উপকৃত হবেন। পরিবারের সবাই মিলে আলোচনাগুলো শুনুন এবং কথাগুলো বাস্তব জীবনে মেনে চলার চেষ্টা করুন। তাহলে দেখবেন ধীরে ধীরে, আমাদের পরিবার ও সমাজ সুখময় এবং শান্তিময় হয়ে উঠবে, ইনশাআল্লাহ।’
‘আমি একজন নগণ্য মানুষ। মহাগ্রন্থ আল কুরআনের ছাত্র। কুরআনের ছাত্র হয়েই বেঁচে থাকতে চাই ও নিরলস কাজ করে যেতে চাই। তাই সুপ্রিয় শ্রোতাদেরকে বলব, প্লিজ আমাকে নিয়ে অতিরিক্ত মাতামাতি করবেন না। আমাকে জড়িয়ে কোন ব্যাপারে কাউকে গালাগালি করবেন না, অন্য কোন মতাদর্শের আলেমদেরকে হেয় বা ছোট করে কিছু বলতে যাবেন না। যদিও তাদের কেউ কখনো আমাকে ছোট করে কথা বলে। অনুরুপভাবে, কোথাও আমাকে ডিফেন্ড করে তর্ক বা কমেন্ট করতে চাইলে, ভদ্রতা বজায় রেখে, যৌক্তিকভাবে এবং বিনয়ের সাথে সেটা করুন। সত্য একদিন উন্মোচিত হবেই হবে, ইনশাআল্লাহ।’
‘আল্লাহ তায়ালার অশেষ মেহেরবানিতে, দেশের আপামর জনতার যে ভালোবাসা পেয়েছি, জানি না সিজদায় পড়ে কতটুকু অশ্রু ঝড়ালে এবং কোন ভাষায় শোকরগোজার হলে এর যথাযথ শুকরিয়া আদায় হবে। মালিকের দরবারে আলীশানে লাখো কোটি শুকর এবং সুজুদ। ওয়ালহামদু লিল্লাহি ‘আলান্নি’ আম।’
‘প্রোগ্রামগুলো বাস্তবায়নে যারা সার্বিক সহযোগিতা করেছেন, তাদের সবার জন্য রইল আন্তরিক ভালোবাসা ও দোয়া। বিশেষ করে পুলিশ, প্রশাসন এবং স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রোগ্রামগুলো সুন্দরভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। তাদেরকে আল্লাহ তায়ালা উত্তম প্রতিদান দান করুক।’
‘আমার এ জীবনের ছোট্ট অভিজ্ঞতায় যা দেখলাম, সেটা হলো : আমরা আমাদের জীবনের একটা উল্লেখযোগ্য সময় কাটিয়ে দেই অন্যকে হিংসা করতে করতে। নিজেরা কাজ না করে অন্যের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে আমরা মহা ব্যস্ত। আসলে, অপপ্রচার করে তেমন কোন লাভ নেই। অপপ্রচারে আমি কখনো মনক্ষুণ্ন হই না। আমার বিশ্বাস আপনারাও হবেন না। কারণ অপপ্রচারগুলোই আমাদের প্রচারণার দায়িত্ব পালন করেছে আলহামদুলিল্লাহ। হক্বের পথে বাধা, বিপত্তি আসবেই। এটাই স্বাভাবিক। যে পথে কাঁটা নেই সেটা পথ নয়, সেটা কার্পেট। আর কার্পেটে হেটে মজলিশে পৌঁছানো যায়, মনজিলে নয়।’
মন্তব্য কখনো গন্তব্য ঠেকাতে পারে না। তাওয়াক্কালতু ‘আলাল্লাহ...’
উল্লেখ্য মিজানুর রহমান আজহারী যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর পক্ষ নিয়ে বেশ কয়েকটি ওয়াজ মাহফিলে কথা বলেছেন। আজহারীর সাথে জামায়াত সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন সরকারদলীয় মন্ত্রী ও সাংসদরা। সংসদেও বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছে। এমন একজন ব্যক্তিকে ওয়াজে প্রধান বক্তা রেখে সেই অনুষ্ঠানে সরকার দলীয় মন্ত্রী, এমপিদের অতিথি রাখার বিষয়টি নিয়ে বেশ সমালোচনা হয়। সরকার দলীয় নেতাকর্মীরাও এ নিয়ে সমালোচনা করেন। সমালোচনার এক পর্যায়ে আয়োজক কমিটি ওয়াজ মাহফিল স্থগিত করেন।
সম্প্রতি মিজানুর রহমান আজহারীর বক্তব্যে যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর পক্ষের বিষয়টি সংসদেও উত্থাপিত হয়েছে এবং এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরও দৃষ্টি আকর্ষন করা হয়েছে। গত ২৩ জানুয়ারি ‘মিজানুর রহমান আজহারী যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর পক্ষ নিয়ে ওয়াজে আলোচনা করেন’ বিষয়টি সংসদে উত্থাপন করেন সাংসদ মো. শফিকুর রহমান।
সংসদে শফিকুর রহমান বলেন, ‘দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী রাজাকার ছিলেন। প্রকাশ্য আদালতে তার বিচার হয়েছে, বিচারে তার শাস্তি হয়েছে। এখন কিছু লোক একজনের নাম মিজান আরেক জনের নাম মনোয়ার। তারা বলছেন ঘরে ঘরে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী বেরিয়ে আসবে। শুধু তাই না, একজন বলছে, এখন আর তীর ধনুকের যুগ না, এখন একে ফোরটি সেভেনের যুগ। এটি প্রচ্ছন্ন নয়, প্রকাশ্যে হুমকি। এতে মনে হয়, জামায়াত-শিবির-রাজাকার তৎপর হয়ে গেছে।’
সাংসদ ও জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমও সংসদে আজহারী ওয়াজে যুদ্ধাপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর পক্ষ নিয়ে কথা বলার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহও মিজানুর রহমান আজহারীকে ‘জামাতের প্রোডাক্ট’ বলে মন্তব্য করেছেন।
এসব কারণেই মাওলানা আজহারী নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এর আগেও নারায়ণগঞ্জের বন্দরে আজাহারীর আগমন নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। তার আগমন বন্ধ করতে ঝাড়ু মিছিলও করা হয়। পরে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ একেএম সেলিম ওসমানের হস্তক্ষেপে বন্দরে আসেন ড. মিজানুর রহমান আজহারী।
প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম