২৬ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ১৯:৪৯, ৯ এপ্রিল ২০২২

আপডেট: ১৬:৩২, ১০ এপ্রিল ২০২২

পাপমোচনের আশায় লাঙ্গলবন্দ স্নানোৎসবে লাখো পুণ্যার্থী

পাপমোচনের আশায় লাঙ্গলবন্দ স্নানোৎসবে লাখো পুণ্যার্থী

সৌরভ হোসেন সিয়াম (প্রেস নারায়ণগঞ্জ): নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার লাঙ্গলবন্দে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মহাষ্টমী স্নানোৎসবে অংশগ্রহণ করেছেন লাখো পুণ্যার্থী। করোনা পরিস্থিতির কারণে টানা দুই বছর স্নানোৎসব স্থগিত থাকায় এবার স্নানে আসা পুণ্যার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ দেখা গিয়েছে। লাঙ্গলবন্দের মোট ১৮টি ঘাটে পুণ্যার্থীদের স্নানপর্বের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। প্রতিটি ঘাটে জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও স্নান উৎসবের আয়োজক কমিটির লোকজনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সন্তুষ্টি দিয়েছে পুণ্যার্থীদের। তবে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন আসায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ছিল দীর্ঘ যানজট। এই সুযোগে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়েরও অভিযোগ পাওয়া গেছে বিভিন্ন পরিবহন চালকদের বিরুদ্ধে।

গত শুক্রবার রাত ৯টা ১১ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডে স্নানলগ্ন শুরু হয়। লগ্ন শেষ হয় শনিবার রাত ১১টা ৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে স্নানোৎসবে অংশ নিতে অনেকেই একদিন আগে নারায়ণগঞ্জে চলে আসেন। পুণ্যতালাভের আশায় ব্রহ্মপুত্র নদের এ স্নান উৎসবে বাংলাদেশের সনাতন ধর্মালম্বীদের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী ভারত, নেপাল, ভুটানসহ কয়েকেটি দেশের লোকজনও অংশ নেন। অষ্টমী স্নান উৎসবকে কেন্দ্র করে জমে ওঠে তিনদিনব্যাপী মেলা। মেলায় নাগরদোলাসহ বাহারি রকমের পসরা সাজিয়ে বসে দোকানিরা।

স্নানোৎসবে আসা পুণ্যার্থীরা জানান, পাপ মোচনের আশায় তারা এই ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান করতে আসেন। ফুল, বেলপাতা, ধান, দূর্বা, হরীতকী, আম্রপল্লব, ফলসহ পুণ্যার্থীরা স্নান করতে ব্রহ্মপুত্র নদে নামেন তারা। এছাড়াও স্নানঘাটগুলোতে বাসন্তী পূজা হয়েছে। পুণ্যার্থীদের স্বাস্থ্য সেবা, শুকনো খাবার, শিশুদের জন্য দুধ বিতরণসহ নানাভাবে সহায়তা করছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। আয়োজকরা এবার নদীর কচুরিপানা পরিস্কার ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
রাজধানীর কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া থেকে মা, খালা ও শিশু সন্তানকে নিয়ে লাঙ্গলবন্দ স্নানোৎসবে আসেন সীমা সরকার। স্নানে অংশ নিতে একদিন পূর্বে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল এলাকায় খালার বাসায় আসেন তারা। স্নান শেষে আবার ফিরে যান কেরানীগঞ্জে। সীমা সরকার বলেন, গত দুই বছর করোনার কারণে স্নানোৎসব বন্ধ থাকায় আসতে পারেননি। এবার আসতে পেরে আনন্দিত। ইচ্ছাপোষণ করায় সাত বছরের ছেলেকেও এবার নিয়ে এসেছেন। রাস্তায় যানজট ছাড়া তেমন কোন ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয়নি তাদের।

স্ত্রীকে নিয়ে প্রথমবার স্নানোৎসবে এসেছেন বলে জানান সুমন চন্দ্র দে। তিনি সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে এসেছেন তিনি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও আয়োজক কমিটির ব্যবস্থাপনা দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন সুমন।

নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শংকর রায় বলেন, ত্রেতাযুগে পিতার আদেশ পালনের জন্য মাকে কুঠার দিয়ে হত্যা করে পরশুরাম। হিমালয়ের মানস সরোবরে ডুব দিয়ে মাতৃহত্যার এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পান তিনি। লাঙ্গল দিয়ে চষে হিমালয় থেকে এ পানিকে ব্রহ্মপুত্র নদরূপে নামিয়ে আনেন সমভূমিতে। পৌরাণিক এ কাহিনীকে স্মরণ করে প্রতিবছর চৈত্রমাসে নির্ধারিত দিনে দেশ-বিদেশের লাখো পুণ্যার্থী পুণ্যলাভের আশায় জড়ো হন ব্রহ্মপুত্রের তীবে।

তিনি আরও বলেন, ‘দুই বছর করোনার কারণে স্নানোৎসব স্থগিত ছিল। আমরা ব্যাপকভাবে হতাশ ছিলাম। ভেবেছিলাম, আমাদের জীবন থেকে উৎসব-আনন্দ শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তা হয়নি, আমরা দেখলাম শেষ পর্যন্ত মানুষেরই জয় হয়েছে। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা আবারও উৎসব আয়োজন করেছি। গত দুই বছর মানুষ আসতে না পারায় এবার পুণ্যার্থী বেশি। এত মানুষের সমাগম অন্য কোনবার আমি দেখিনি।’

পুণ্যার্থীদের চাপে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তীব্র যানজট দেখা দেয়। সোনারগাঁ উপজেলার মেঘনা সেতুন টোলপ্লাজা থেকে কাঁচপুর এলাকা পর্যন্ত অন্তত ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই যানজটে ভোগান্তির শিকার হন পরিবহন চালক ও যাত্রীরা। এছাড়া পুণ্যার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়েছে।

লাঙ্গলবন্দ স্নান উদযাপন পরিষদের সভাপতি ষড়জ কুমার সাহা জানান, গত দুই বছর স্নান বন্ধ থাকার পর এ বছর ৮ থেকে ১০ লাখ পুণ্যার্থীর সমাগম হয়েছে। এবার স্নানতিথি দীর্ঘ ও ছুটির দিন হওয়াতে এই ব্যাপক সমাগম। পুণ্যার্থীদের সুবিধার্থে ৪০টি সেবাক্যাম্প ছাড়াও ৩০০ স্বেচ্ছাসেবক কাজ করেছে। এছাড়া নিরাপত্তায় পুলিশ, র‌্যাব, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা আছেন। সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও বিআইডব্লিউটিএ, ফায়ার সার্ভিসসহ অন্যান্য প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানগুলোও আছে। কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই স্নানপর্ব শেষ হয়েছে।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়