২৬ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ১৮:২৭, ২৫ জানুয়ারি ২০২১

আজ অধ্যাপক বুলবুল চৌধুরীর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী

আজ অধ্যাপক বুলবুল চৌধুরীর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: নিভৃতচারী শিক্ষাবিদ, কবি ও কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক বুলবুল চৌধুরীর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১৮ সালের এই দিনে হাওয়ায় উত্তরীয় উড়িয়ে দিয়ে অনন্তলোকের পথে পাড়ি জমান তিনি। শিক্ষকতার পাশাপাশি সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও ভূমিকা রেখেছেন তিনি। স্বাধীনতা উত্তর সময়ে নারায়ণগঞ্জে সাহিত্য ও সংস্কৃতির পরিম-ল নতুন করে উজ্জীবিত হলে এখানে বিভিন্ন সংগঠনের জন্ম হয়। বুলবুল চৌধুরী ‘শাপলা’, ‘পলাশ’ ও বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এ পরিম-লকে সমৃদ্ধ করেন। ১৯৮১ সালে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট যাত্রা শুরু করলে এর সাথেও যুক্ত হন তিনি। কবিতাকে দশকের গ-িতে আবদ্ধ করা না গেলেও বুলবুল চৌধুরী ছিলেন ষাট ও সত্তর দশকের একজন শক্তিমান কবি।

লেখালেখি ও সংগঠনের জন্য বুলবুল চৌধুরী হিসেবে পরিচিত থাকলেও তাঁর প্রকৃত নাম এএফএম আক্তারুজ্জামান চৌধুরী। ১৯৪৬ সালের ৩ নভেম্বর নরসিংদীর একদুয়ারিয়া গ্রামে তাঁর জন্ম। বাবা আবদুল গফুর চৌধুরী ছিলেন অঞ্চলের প্রসিদ্ধ শিক্ষক। মা সাহেবা খাতুন। তিন বোন, এক ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় ছিলেন বুলবুল চৌধুরী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বাংলায় স্নাতক ও এমএ পাসের পর ১৯৭২ সালে সরকারি তোলারাম কলেজে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এ প্রতিষ্ঠান থেকেই ২০০৫ সালে অবসর নেন। মাঝে ১৯৯৫ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত মুন্সীগঞ্জের সরকারি হরগঙ্গা কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। ১৯৭২ সালে রওশন চৌধুরীকে বিয়ে করেন বুলবুল চৌধুরী। তাঁদের এক পুত্র ও দুই কন্যা সন্তান রয়েছে।

অধ্যাপক বুলবুল চৌধুরী সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ে বাগ্মিতার জন্য সমাদৃত ছিলেন। চর্যাপদ থেকে বর্তমান পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ের কবির কবিতা মুখস্থ আবৃত্তি করতেন। তিনি একাধারে কবিতা ও গদ্য সাহিত্যে বিচরণ করেছেন। তার পাঠচর্চা ও পা-িত্য ছিল ঈর্ষণীয়; কিন্তু লিখেছেন খুবই কম। নির্বিবাদ ও প্রচারবিমুখ এক কাব্যসত্ত্বা তাকে সব সময় আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। ১৯৬৯ সালে সিনে-মাসিক ‘চিত্রলেখা’য় প্রকাশিত হয় তার উপন্যাস ‘কত রাধিকা ফুরালো’ এবং কাব্যগ্রন্থ ‘উত্তরীয় উড়ছে হাওয়ায়’। দু’টোই পরবর্তীতে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।

১৯৭৬ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমি ও সাহিত্য বিতান সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ছিলেন বুলবুল চৌধুরী। শাপলা সংগঠনের সভাপতি ও উপদেষ্টা হিসেবে ছিলেন দীর্ঘ সাতাশ বছর। ১৯৯৭ সালে নারায়ণগঞ্জ কালচারাল ক্লাব এবং ২০০৯ সালে সংশপ্তক নাট্যদল গুণীজন সংবর্ধনা প্রদান করে তাকে। ২০১২ সালে দৈনিক কালের কণ্ঠ থেকে ‘প্রিয় শিক্ষক’ সম্মানে ভূষিত হন। ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমি সম্মাননা প্রদান করে গুণী এই ব্যক্তিকে।
বুলবুল চৌধুরী কবিতায় লেখেন, ‘...স্বপ্নের জগৎ চিরদিন রয় / সময়ের হাত এসে মুছে ফেলে আর সব / নক্ষত্রেরও একদিন আয়ু শেষ হয়।’ কবিতার মতোই ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে উজ্জ্বল এই নক্ষত্রের জীবনাবসান ঘটে।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়