২৬ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ১৮:১৬, ২০ জুন ২০২২

আপডেট: ১৯:৫৩, ২০ জুন ২০২২

‘আমারে ফাঁসি দিয়া আসামিগো মুক্তি দিক’

‘আমারে ফাঁসি দিয়া আসামিগো মুক্তি দিক’

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: “মাত্র দুই লাখ টাকা দিতে না পাইরা আমার স্বামীকে জীবিত বস্তায় ভইরা মাটির নিচে পুঁইতা রাখছিল। জবানবন্দিতে সব কথা আসামিরা স্বীকার করছে। আমি শুধু জানতে চাই আর কীভাবে খুন করলে আসামিদের ফাঁসি হইতো? আমি এই রায় মানি না। এর চেয়ে আমারে ফাঁসি দিয়া আসামিগো মুক্তি দিক।”

সোমবার (২০ জুন) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার আলোচিত কামরুজ্জামান চৌধুরী সেলিম (৫২) হত্যা মামলার রায়ের পর বাদী ও নিহতের স্ত্রী রেহানা আক্তার রেখা আদালত চত্ত্বরে কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলেন। তিনি জানান, এই রায়ে তিনি ও তার পরিবার সন্তুষ্ট নন। তারা আসামিদের ফাঁসির রায় প্রত্যাশা করেছিলেন।

এর আগে দুই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও দুইজনকে খালাস দিয়ে রায় ঘোষণা করেন নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক সাবিনা ইয়াসমিন। আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করা হয়েছে জানিয়ে আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) জাসমীন আহমেদ জানান মামলায় চারজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। মামলার বাদী, তদন্ত কর্মকর্তাসহ ১১ জনের সাক্ষ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে আদালত দুইজনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ও দুইজনকে খালাস দিয়েছেন।

যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তরা হলেন- ঝুটের গোডাউন মালিক মোহাম্মদ আলী (৪৩) ও তার কর্মচারী ফয়সাল (৩১)। খালাস পেয়েছেন অপর দুই কর্মচারী আলী হোসেন ও সোলায়মান।

নিহত ব্যবসায়ী সেলিম চৌধুরী ফতুল্লার বক্তাবলী ইউনিয়নের কানাইনগর এলাকার মৃত শামসুল হুদার ছেলে। তিনি ব্যবসার সুবিধার্থে স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে ফতুল্লার শিবু মার্কেট এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।

রায়ে সন্তুষ্ট নন জানিয়ে নিহতের স্ত্রী রেহানা আক্তার রেখা বলেন, “আমি রায়টা কীভাবে মাইনা নেবো বলেন? কীভাবে মারছে, তারপর বস্তায় ভইরা মাটি চাপা দিছে, সবই তো আসামিরা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতেও স্বীকার করছে। প্রত্যেকটা কথা লাইন বাই লাইন পইড়া শোনানো হইছে আদালতে। জীবিত অবস্থায় একজন মানুষকে বস্তায় ভরে মাটিচাপা দেওয়া হইছে। মোহাম্মদ আলীর গোডাউনের ভেতর থেইকা পুলিশ সেই লাশ উদ্ধার করছে। এইসব কিছু স্বীকার করার পর মোহাম্মদ আলী ও ফয়সালের যাবজ্জীবন দিছে আর পরিকল্পনাকারী লেবার আলী ও সোলায়মানকে দিছে বেকসুর খালাস। কীভাবে মারলে আদালত আসামিগো ফাঁসি দেয় আমি জানি না। আমি আর বাঁচতে চাই না।”

“আমার একটামাত্র ছেলে। ওর বাবা যখন মারা যায় তখন ও বম্বেতে (মুম্বাই) ডিপ্লোমা পড়তেছিল। বিদেশ থেইকা আইসা ১১ দিন পর মাটির ভেতর থেকে তোলা বাপের পচা-গলা লাশটা ও চোখের সামনে দেখছে। তখন আমার ছেলে আমারে কইছিল ‘এই দেশে তুমি আমার বাপের বিচার পাইবা না আম্মু। উল্টা ওরা তোমারে মাইরা ফালাইবো। চলো আমরা ভারত চইলা যাই।’ তখন আমি ছেলের কথা শুনি নাই। ছেলের কথাই ঠিক হইলো, আমি ন্যায় বিচার পাইলাম না। আমি যাবজ্জীবন চাই না। আমারে ফাঁসি দিয়া আসামিগো মুক্তি দিক।” যোগ করেন রেহানা আক্তার।

তিনি আরও বলেন, “উচ্চ আদালতে গিয়া আমি আর কী করবো? আমার স্বামীর কোটি কোটি টাকা মাইনষের কাছে। আমি খাইয়া না খাইয়া কোর্টে দৌড়াইছি। এখন এই বিচার! যাবজ্জীবন দিছে, দুইদিন পর আসামিরা জামিনে বাইর হইয়া আমাগোরে মাইরা ফেলবো। এর চেয়ে আদালত আগেই আমাগোরে ফাঁসি দিয়া দিক।”

“মামলার চার আসামির তিনজনই হত্যার বিবরণ দিয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন। মরদেহও উদ্ধার করা হয়েছে প্রধান আসামির নিজের মালিকানার গোডাউন থেকে। সকল সাক্ষ্য-প্রমাণ অনুকূলে থাকার পরও যাবজ্জীবনের সাজা প্রদানের এই রায়ে ক্ষুব্দ বাদীপক্ষ। তারা কান্নাকাটি করছেন। উচ্চ আদালতে আপিল করবেন তারা।”, বলেন বাদীপক্ষের আইনজীবী রিয়াজুর রহমান তালুকদার।

মামলার নথির বরাতে নারায়ণগঞ্জ আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান জানান, ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন ঝুট ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান সেলিম চৌধুরী। ৬ এপ্রিল ফতুল্লা মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তার স্ত্রী। দু’দিন পর অপহরণ মামলা দায়ের করা হয়। ১০ এপ্রিল ফতুল্লার ভোলাইল এলাকার আরেক ঝুট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলীর গোডাউনের মেঝে খুঁড়ে সেলিম চৌধুরীর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত মোহাম্মদ আলীর কাছে দুই লাখ টাকা পেতেন নিহত সেলিম চৌধুরী। টাকা ফেরত দিতে চাপ দেওয়ায় পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যা করে মরদেহ নিজের গোডাউনে পুঁতে রাখেন মোহাম্মদ আলী ও তার কর্মচারী ফয়সাল। মরদেহের পাশে চুন দিয়ে রাখে, যাতে মরদহে সহজে পচে মাটির সঙ্গে মিশে যায়। আজ এ মামলায় রায়ে দু’জনকে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়েছে। তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানান পরিদর্শক আসাদুজ্জামান।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়