১৯ মার্চ ২০২৪

প্রকাশিত: ১৬:২৬, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১

আপডেট: ১৬:২৯, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১

না’গঞ্জে খুলেছে সহস্রাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যবিধি কড়াকড়ি

না’গঞ্জে খুলেছে সহস্রাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যবিধি কড়াকড়ি

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী দীর্ঘ দেড় বছর পর সারাদেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জেও খুলেছে সহস্রাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নির্দেশনা মোতাবেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রবেশমুখে ছিল হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। এছাড়া হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও তাপমাত্রা পরিমাপের ব্যবস্থাও রাখাতে দেখা গেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। প্রতিষ্ঠানে প্রবেশের ক্ষেত্রে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক ছিল। দীর্ঘদিন পর শ্রেণিকক্ষে সহপাঠীদের সাথে দেখা হবে ভেবেই উচ্ছ্বাসিত ছিলেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ জেলায় সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক প্রায় ৩০০টি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা রয়েছে। আরও ৫৪৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে জেলায়। এছাড়া রয়েছে অসংখ্য কিন্ডারগার্টেন। শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী, স্বাস্থ্যবিধি মেনে রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে জেলার প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে সশরীরে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রবেশ মুখসহ অন্যান্য স্থানে কোডিড-১৯ অতিমারী সম্পর্কিত ব্যানার প্রদর্শন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, নিয়মিত তাপমাত্রা মেপে পর্যবেক্ষণ, ওয়াশরুম পরিষ্কার রাখা এবং পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারী এবং অভিভাবক প্রবেশের সময় স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে প্রতিপালনের ব্যবস্থা, সঠিকভাবে মাস্ক পরিধান, সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ দ্বারা হাত ধোয়ার ব্যবস্থা, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের বসার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণের কথা বলা হয়েছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরীর কয়েকটি স্কুল ঘুরে কর্তৃপক্ষকে এসব নির্দেশনা পালন করতে দেখা গেছে। তবে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় ভিড় দেখা গেছে। ওই সময় স্বাস্থ্যবিধির নির্দিষ্ট দূরত্ব মানার বিষয়টি ছিল উপেক্ষিত।

সদর উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়নের দেওভোগ হাজী উজির আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের প্রবেশমুখেই একজন দাঁড়িয়ে আছেন থার্মাল স্ক্যানার হাতে। আরও দুইজনের হাতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার। পাশেই রয়েছে হাত ধোয়ার বেসিন। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর প্রবেশের সময় তাপমাত্রা মাপা হয়েছে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা হাত ধোয়ার পর তাদের শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করতে হয়েছে। সকলের মুখেই মাস্ক দেখা গেছে। যাদের মুখে মাস্ক ছিল না তাদের বিদ্যালয় থেকে বিনামূল্যে মাস্ক সরবরাহ করা হয়েছে।

দীর্ঘ দেড় বছর পর সহপাঠীদের সাথে দেখা হবে, খুনসুটিতে মাতবেন ভেবে শিক্ষার্থীরাও উচ্ছ্বাসিত। দেওভোগ হাজী উজির আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র মো. সংগ্রাম বলেন, দীর্ঘ ১৮ মাস স্কুল বন্ধ থাকায় অনেক বন্ধুই পড়াশোনা থেকে ছিটকে পড়েছে। তাদের সাথে যোগাযোগ নেই। এতদিন পর বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আবার দেখা হয়েছে। খুবই আনন্দ লাগতেছে। গত কয়েকদিনই খুব উত্তেজনা কাজ করেছে।

শারীরিক প্রতিবন্ধী সাজিদ বিন আব্দুল্লাহকে বিদ্যালয়ে নিয়ে আসেন তার বাবা সোহেল আব্দুল্লাহ। সোহেল আব্দুল্লাহ বলেন, ‘ছেলেকে বাসায় ধরে রাখা যায়নি। এতদিন পর স্কুলে আসবে ভেবে তাড়াহুড়া করে আমাকে বের করে নিয়ে এসেছে স্কুলে।’ সাজিদ বলেন, এতদিন বাসায় বসে থেকে সময় কাটেনি। খুবই উদাস লাগতো। এতদিন পর বন্ধুদের দেখে আনন্দ লাগতেছে।

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক হুমায়ূন কবির রতন, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক স্বাস্থ্যবিধির দিকে নজর দিয়ে সকল ব্যবস্থা বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে। থার্মাল স্ক্যানার, হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। একই সাথে শ্রেণিকক্ষে নির্দিষ্ট দূরত্বে শিক্ষার্থীদের বসানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাস্কবিহীন শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে মাস্কও প্রদান করা হচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষক করোনার প্রতিষেধক গ্রহণ করেছেন। আনন্দঘন পরিবেশে স্বাস্থ্যসুরক্ষার সাথে শিক্ষার্থীরা যাতে পাঠদান করতে পারে সকল ব্যবস্থা এই প্রতিষ্ঠানে রাখা হয়েছে। এসব কর্মসূচি গ্রহণের ক্ষেত্রে শিক্ষক থেকে শুরু করে অভিভাবক পর্যায়ে একাধিক সভা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

নগরীর হাজীগঞ্জ এলাকার আই ই টি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে দেখা যায়, দীর্ঘ সময় পর সরাসরি শ্রেণিকক্ষে পাঠ্য কার্যক্রমে অংশ নিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিল উৎসাহ-উদ্দীপনা। শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগেই তারা বিদ্যালয়ে চলে আসেন। এই বিদ্যালয়ের ফটকে শিক্ষার্থীদের তাপমাত্রা মেপে প্রবেশ করানো হয়। তাদেরকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের বরণ করতে সুসজ্জিত করা হয়েছে বিদ্যালয়ের প্রবেশপথ। এছাড়াও বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কোনো শিক্ষার্থী অসুস্থ হলে তাদের জন্যে আইসোলশন কক্ষের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা মাসুদা আক্তার জানান, ১৮ মাস বন্ধ থাকার পর আজকে থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলেছে। আজকের এই দিনটি আমাদের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকবৃন্দদের জন্যে অনেক প্রত্যাশিত একটি দিন। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা ফিরে আসলেও বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ তাদের কোলাহলে মুখরিত হতে পারেনি। আমরা সব শিক্ষার্থীদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার, তাপমাত্র মেপে প্রবেশ করানো হচ্ছে। পাশাপাশি তাদেরকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া সব নির্দেশনাগুলো প্রতিপালন করে শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হয়েছে।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়