২৬ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ০০:৩৩, ২ সেপ্টেম্বর ২০২২

আপডেট: ০০:৫৫, ২ সেপ্টেম্বর ২০২২

পরীক্ষা চলাকালীন স্কুলে টিয়ারগ্যাস, অসুস্থ ৪০ ছাত্রী

পরীক্ষা চলাকালীন স্কুলে টিয়ারগ্যাস, অসুস্থ ৪০ ছাত্রী

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: সকাল দশটা থেকে নারায়ণগঞ্জ শহরের ঐতিহ্যবাহী মর্গ্যান গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে অষ্টম ও দশম শ্রেণির ছাত্রীদের পরীক্ষা চলছিল। নিয়মিত শ্রেণি কার্যক্রম চলছিল একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীদের। বেলা এগারোটার দিকে বিএনপি ও পুলিশের সংঘর্ষ চলাকালীন পুলিশের একটি টিয়ারশেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির মাঠে এসে পড়ে। মুহুর্তে কুন্ডলী পাকিয়ে ধোয়া চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। টিয়ারগ্যাসে অসুস্থ হয়ে পড়ে অন্তত ৪০ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে বারোজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) দলের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতা-কর্মীরা সকাল দশটায় নগরীর ডিআইটিতে আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার ও মিলনায়তনের সামনে থেকে শোভাযাত্রা বের করার প্রস্তুতি নেয়। এতে পুলিশ বাধা দিলে নেতা-কর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। বেলা সাড়ে বারোটা পর্যন্ত দফায় দফায় চলে এই সংঘর্ষ। এই সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় শাওন প্রধান নামে যুবদল কর্মী।

নগরীর আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগারের পেছনেই মর্গ্যান গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক এম কবির ইউ চৌধুরী বলেন, “সকাল দশটা থেকে অষ্টম ও দশম শ্রেণির মডেল টেস্ট পরীক্ষা শুরু হয়। একই সময়ে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শ্রেণি কার্যক্রম চলছিল। এমন সময় বিএনপির সাথে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে ছাত্রী ও শিক্ষকরা। বিএনপির সাথে সংঘর্ষ চলাকালীন পুলিশের ছোড়া একটি টিয়ারশের স্কুলের মাঠে এসে পড়ে। টিয়ারগ্যাসের ধোয়ায় অন্তত ৪০ জন ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে কয়েকজন অজ্ঞান হয়ে পড়ে। বারোজন ছাত্রীকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। অন্যদের শিক্ষকরাই প্রাথমিক চিকিৎসা দেন।”

“ছাত্রীরা এক ঘন্টায়ও পরীক্ষা দিতে পারেনি। গুলির শব্দে সকলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে পরিস্থিতি একটু শান্ত হলে ছাত্রীদের সকলকে অভিভাবক ডেকে বাড়িতে পাঠানো হয়। পরবর্তী শিফটেও পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। সবই স্থগিত ঘোষণা করা হয়।”

টিয়ারগ্যাসের ধোয়ায় অচেতন হয়ে পড়েন দশম শ্রেণির ছাত্রী আয়শা সুলতানা মিম (১৫)। তার ছোটবোন একই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী তাসিন জাহান লামিয়াও গুলির শব্দে ভীত হয়ে পড়েন বলে জানান। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে মিম ও লামিয়ার মা পারভীন সুলতানা বলেন, “স্কুলের এক টিচারের ফোন পেয়ে হাসপাতালে এসে দেখি মেয়ে অজ্ঞান হয়ে আছে। স্কুলে নাকি টিয়ারগ্যাস মারছিল পুলিশ। সেই গ্যাসে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। হাসপাতালে আনার ১৫-২০ মিনিট পর আমার মেয়ের জ্ঞান ফেরে।”

অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী লামিয়া বলেন, “আমরা পরীক্ষা দিচ্ছিলাম। দশটা থেকে একটা পর্যন্ত পরীক্ষা ছিল। এক ঘন্টাও হয়নি এমন সময় গুলির শব্দ শুনতে পাই। এতে ক্লাসের সবাই ভয় পেয়ে যায়। স্কুলের ৫-৬ জন ছাত্রী গ্যাসের গন্ধে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।”

মর্গ্যান গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া ছাত্রীরা এখনও সুস্থ আছে। স্কুলের পক্ষ থেকে তাদের খোঁজ নেওয়া হয়েছে। আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টিয়ারশেল ছোড়ার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথেও আলাপ করা হবে।”

নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. শেখ ফরহাদ বলেন, “শ্বাসকষ্ট নিয়ে মর্গ্যান স্কুলের কয়েকজন ছাত্রী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। সাথে আসা শিক্ষকরা জানিয়েছেন, স্কুলের মাঠে টিয়ারশেল পড়েছিল। সেখান থেকে নির্গত গ্যাসের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন ছাত্রীরা। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর সকলেই সুস্থ হয়ে ওঠেন। কাউকে ভর্তি রাখতে হয়নি।”

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়