২৬ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ২২:২৫, ১৪ মার্চ ২০২৩

আপডেট: ২২:২৬, ১৪ মার্চ ২০২৩

ময়লা ফেলে বিক্ষোভ, তৃতীয়পক্ষকে দুষছেন নেতারা

ময়লা ফেলে বিক্ষোভ, তৃতীয়পক্ষকে দুষছেন নেতারা

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: দৈনিক মজুরি ও উৎসব ভাতা বৃদ্ধিসহ ছয় দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) পরিচ্ছন্ন কর্মীরা৷ মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) বেলা এগারোটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত নগরভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন তারা৷

এ বিক্ষোভ চলাকালীন দুপুরে নগরভবনের সামনে ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখা হয় এবং সিটি করপোরেশনের এক পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তার উপরও চড়াও হতে দেখা যায় বিক্ষোভকারীদের৷

যদিও পরিচ্ছন্ন কর্মীদের সংগঠন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক কিশোর লালের দাবি, নগরভবনের সামনে তারা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করেছেন৷ ময়লা ফেলা কিংবা কর্মকর্তাদের উপর চড়াও হবার মতো ঘটনার সাথে তারা কেউ জড়িত নন৷

তিনি বলেন, ‘আমাদের কেউ ময়লা ফেলেনি৷ আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে বানচাল করার জন্য কেউ এই কান্ড ঘটিয়েছে৷ আমরা আমাদের দাবি আদায়ের আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে চালিয়েছি৷ তৃতীয় কোন পক্ষ আমাদের যৌক্তিক আন্দোলন বানচাল করার চেষ্টা করছে৷ আমাদের দাবি, আমাদের চাকরি স্থায়ী করে দৈনিক মজুরি ৭৫০ টাকা করতে হবে৷’

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে ১১৫০ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী তালিকাভুক্ত থাকলেও এ আন্দোলনে ৪০-৫০ জনকে দেখা গেছে৷ তবে অন্য কর্মীরাও এ আন্দোলনের সাথে একাত্ম বলে দাবি নেতাদের৷

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিক্ষোভ চলাকালীন দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী নগরভবন থেকে নিচে নেমে আসেন৷ তিনি পরিচ্ছন্নকর্মীদের জানান, সারা বাংলাদেশে কোন সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীদের স্থায়ী করা হয়নি৷ আর সিটি করপোরেশন গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে পরিচ্ছন্ন কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ বাজেট সংকটের কারণে তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না৷

নগরভবনের সামনে ময়লা ফেলে রাখায় পরিচ্ছন্ন কর্মীদের নেতাদের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন মেয়র৷ তিনি বলেন, ‘দাবি আদায়ের বিক্ষোভ করবেন ঠিক আছে৷ আপনাদের দাবির বিষয়ে আলোচনা হবে৷ তাছাড়া বেতন বাড়ানোও হয়েছে আপনাদের৷ কিন্তু ময়লা ফেলে রাখা আপনাদের ঠিক হয়নি৷’

এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান মোল্লা বলেন, ‘বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষোভ করে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা৷ সিটি করপোরেশন পরিচ্ছন্ন কর্মীদের বেতন আগেই বৃদ্ধি করেছে বলে জানিয়েছে৷ মেয়র মহোদয় নিজে বিক্ষোভকারীদের সাথে কথা বলে বেতন-ভাতা বৃদ্ধির বিষয়ে আশ্বস্ত করলে তারা বিক্ষোভ শেষ করে নগরভবন ছাড়েন৷’

এ বিষয়ে কথা বলতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শহীদুল ইসলামের মুঠোফোনের নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি৷

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর সিটি কর্পোরেশনের তৃতীয় মাসিক সভায় পরিচ্ছন্ন কর্মীদের বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে নগর কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পথে রয়েছে। সিদ্ধান্তের কথা জানার পরও পরিচ্ছন্ন কর্মীদের প্রভাবিত করে আন্দোলনে নামানো হয়েছে বলে মন্তব্য এ কর্মকর্তার৷

তিনি আরও বলেন, ‘কোনো সিটি করপোরেশনেই পরিচ্ছন্ন কর্মীদের চাকরি স্থায়ী না৷ পরিচ্ছন্ন কর্মীরা কাজও করেন সকালে ১-২ ঘন্টা৷ অনেকে একাধিক জায়গায় চাকরি করেন, কোন পরিবারের একাধিক সদস্য পরিচ্ছন্ন কর্মী হিসেবে কাজ করেন, এমনও ব্যাপার আছে৷ তারপরও পরিচ্ছন্ন কর্মীদের মজুরি বৃদ্ধির পাশাপাশি জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন। সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য স্কুল, বসবাসের জন্য পরিচ্ছন্ন কর্মীদের জন্য নির্মিত হচ্ছে ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন এলাকায় বহুতল ভবন। তারপরও কয়েকজনকে দিয়ে এমন বিক্ষোভ করিয়ে মেয়রের ইমেজ নষ্ট করার চেষ্টা চলছে। খোঁজ নিলে এরপিছনে কোন অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পাওয়া যাবে৷’

এদিকে গত সোমবার বিকেলে নগরীতে বিক্ষোভ করেন পরিচ্ছন্ন কর্মীরা৷ তাদের নেতৃত্ব দেন স্থানীয় কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা৷ ওইদিন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেন সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা৷

স্মারকলিপিতে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন। তাদের দাবিগুলো হলো- বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ মোতাবেক শ্রমিকদের নিয়োগপত্র প্রদান করতে হবে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে কর্মরত সব পরিচ্ছন্ন কর্মীদের চাকরি স্থায়ী করতে হবে, সব পরিচ্ছন্নকর্মীদের নুন্যতম দৈনিক হাজিরা ৭৫০ টাকা ও ট্রাক শ্রমিকদের ৮৫০ টাকা করতে হবে। প্রত্যেক শ্রমিকের বেতন সমপরিমান ঈদ বা পূজার বোনাস প্রদান করতে হবে। প্রতি ওয়ার্ডে ২ জন করে ডোম নিয়োগ দিতে হবে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার সময় যদি কোনো শ্রমিক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করে তাহলে আইএলও কনভেনশন আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে। সিদ্ধিরগঞ্জ ও বন্দর অঞ্চলে পরিচ্ছন্নকর্মীদের স্থায়ী বসবাসের জন্য বহুতল ভবন বাসস্থান তৈরি করতে হবে।

 

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়